অথবা, সঙ্গতিবাদ কাকে বলে?
ভূমিকাঃ সত্যতার স্বরূপ ও সত্যতা নিরূপণের মানদণ্ড হিসেবে একত্ববাদী ভাববাদী দার্শনিকরা যে মতবাদের অবতারণা করেন দর্শনের ইতিহাসে তা-ই সঙ্গতিবাদ নামে পরিচিত। হেগেল ও তার অনুসারী ব্রাডলি ও বােসাঙ্কোয়েট এ মতবাদের প্রধান সমর্থক। সঙ্গতিবাদ অনুসারে বিভিন্ন বচনের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপরই বচনের সত্যতা নির্ভর করে। কোন বচন যদি অন্য কোন বচনের সাথে কোন একটি সুসংবদ্ধ মণ্ডলী রচনা করতে সক্ষম হয় তাহলেই ঐ বচনটিকে সত্য বচন বলে অভিহিত করা যায়। নিচে এটি নিয়ে আলােচনা করা হল-
বচনমণ্ডলীঃ সাধারণভাবে বলা যায়, যে বচনসমষ্টির মধ্যে ব্যঞ্জনা বা প্রসক্তির সম্বন্ধ রয়েছে সেই বচনসমষ্টিকে বলে বচনমণ্ডলী। বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্র হচ্ছে বচনমণ্ডলীর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্রের বচনগুলাে পরস্পর এমন সম্পর্কে আবদ্ধ, যাদের একটি মিথ্যা হলে অপরটি মিথ্যা, আবার একটি সত্য হলে অপরটি সত্য।
সত্যতা নির্ণয়ের মানদণ্ড হিসেবে সঙ্গতিবাদঃ সঙ্গতিবাদীরা সঙ্গতিকে কেবল সত্যতার স্বরূপ বা লক্ষণ বলেই আখ্যা দেননি, তারা বিশুদ্ধ গণিতশাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, অতীত ও বর্তমান কাল সংক্রান্ত সব ধরনের অভিজ্ঞতানিরপেক্ষ আকারগত বিজ্ঞানের সত্যতা নির্ণয়ের জন্য সঙ্গতিকে ব্যবহার করেন একমাত্র মানদণ্ড হিসেবে। তাদের মতে, কেবল সঙ্গতিই সব ধরনের বচনের সত্যতা নিরূপণের একমাত্র মাপকাঠি। গাণিতিক বচনের সত্যতা নিরূপণের জন্য এটি সবচেয়ে নির্ভরযােগ্য মানদণ্ড। যুক্তিবিদ্যায় যখন আমরা দুটি সত্য আশ্রয়বাক্য থেকে সঙ্গতভাবে সিদ্ধান্ত টানি তখন সিদ্ধান্তটিও সত্য বলে প্রমাণিত হয়। জ্যামিতির উপপাদ্যের সত্যতাও আমরা সঙ্গতি মানদণ্ডের আলােকে প্রমাণ করি। তা ছাড়া ঐতিহাসিক বা অতীতসংক্রান্ত এমনকি বর্তমান কালসংক্রান্ত যাবতীয় অভিজ্ঞতানিরপেক্ষ বচনের সত্যতা আমরা এ মানদণ্ডের আলােকেই পরীক্ষা করি। তাই এ মতবাদীদের মতে, সঙ্গতিই সত্যতা নিরূপণের একমাত্র মানদণ্ড।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, সত্যতা হলাে কোন এক বচনের সাথে অন্যান্য বচনের এমন এক ধরনের সম্পর্ক থাকে সঙ্গতির সম্পর্ক বলে অভিহিত করা যায়। সঙ্গতিবাদের আলােচনায় বচনমণ্ডলীর আলােচনা দরকার হয়।
Leave a comment