প্রশ্নঃ সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্য নির্ণয় কর।

অথবা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যকার পার্থক্য কী কী?

ভূমিকাঃ সংস্কৃতি সভ্যতার বাহন। সমাজ জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তুলে সংস্কৃতি মানব জীবনের ভিত্তি রচনা করে। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সভ্যতার উৎপত্তি, বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে সংস্কৃতির অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত জীবন প্রণালি সংস্কৃতির গতিকে সচল রেখেছে। সংস্কৃতির পথপরিক্রমার মধ্যদিয়ে সভ্যতা বিকাশ লাভ করে।

সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্যঃ সভ্যতা বলতে বুঝায় অগ্রসরমান জটিল সংস্কৃতির একটা স্তর বা পর্যায়। এ অর্থে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে তেমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। এ প্রসঙ্গে ম্যাকাইভার বলেন, Our culture is that we are, our civilization is that we use. তবে সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে পার্থক্যসমূহ তুলে ধরা হলােঃ

সংস্কৃতিঃ (১) সংস্কৃতি একটি জীবনপ্রণালি।
সভ্যতাঃ (১) সংস্কৃতির প্রতিফলনই সভ্যতা।

সংস্কৃতিঃ (২) সংস্কৃতি প্রধানত অবস্তুগত সৃষ্টি।
সভ্যতাঃ (২) সভ্যতা হলাে বস্তুগত সৃষ্টি।

সংস্কৃতিঃ (৩) মৌলিক কাঠামাের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সংস্কৃতি।
সভ্যতাঃ (৩) সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠে সভ্যতা।

সংস্কৃতিঃ (৪) দার্শনিক কান্ট বলেন, সংস্কৃতি হলে মানুষের ভেতরের আচরণ।
সভ্যতাঃ (৪) আর সভ্যতা হলাে মানুষের বাইরের আচরণ।

সংস্কৃতিঃ (৫) সংস্কৃতি দ্বারা মানুষের রুচিবোধ ও রীতিনীতি বুঝায়।
সভ্যতাঃ (৫) সভ্যতা দ্বারা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির পূর্ণ বিকাশ বুঝায়।

সংস্কৃতিঃ (৬) সাধারণত সংস্কৃতি সমভাবাপন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বিস্তার লাভ করে।
সভ্যতাঃ (৬) জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সভ্যতার অংশীদার হতে পারে।

শেষকথাঃ উপরোক্ত আলােচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে নানা পার্থক্য থাকা সত্বেও তারা ওতপ্রােতভাবেই জড়িত। যেকোনাে দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ওপরই নির্ভর করে সভ্যতার বিকাশ। অন্যদিকে অবস্তুগত সংস্কৃতির বস্তুগত রূপায়ণই সভ্যতা।