সংবেদন হল একটি সরল প্রক্রিয়া, যা ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে বাইরের জগতের যােগাযােগ স্থাপন করে| সংবেদন জ্ঞানেন্দ্রিয় থেকেই উৎপন্ন হয়। প্রকৃতপক্ষে চোখ, কান, নাক, জিভ এবং ত্বক—এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বহির্জগতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বস্তুর সংস্পর্শ ঘটামাত্র বস্তু সম্পর্ক আমাদের মস্তিষ্কে যে প্রাথমিক চেতনা জাগে তাই হল সংবেদন।

বিভিন্ন মনােবিদ বিভিন্নভাবে সংবেদনকে ব্যাখ্যা করেছেন। নীচে সংবেদনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল

(১) মনোবিদ টিচেনারের মতে: গুণ, তীব্রতা, স্পষ্টতা, স্থিতি এই চারটি ধর্মের দ্বারা গঠিত মৌলিক মানসিক ক্রিয়া হল সংবেদন।

(২) মনোবিদ স্যলির মতে: কোনাে অন্তর্বাহী স্নায়ুর গ্রাহক অংশ উদ্দীপিত হয়ে সেই উদ্দীপনা মস্তিষ্কে সালিত হলে তার দ্বারা যে সহজ মানসিক প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাই সংবেদন।

সংবেদনের উপাদানগুলিকে মূলত পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। যথা

(১) উদ্দীপক: বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কোনাে অবস্থা যখন জীবদেহে কোনাে না কোনাে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে তাকে উদ্দীপক বলে। তাপ, আলো, শব্দ ইত্যাদি হল বাহ্যিক উদ্দীপক। আবার ব্যথা, চাপ, হরমােনের ক্রিয়া ইত্যাদি হল অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।

(২) ইন্দ্রিয়ের প্রান্তযন্ত্র বা গ্রাহক অঙ্গ: সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর প্রান্তে‌ অবস্থিত যে দেহাংশ উদ্দীপনা গ্রহণ করে সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে তাকে গ্রাহক বলে।

(৩) সংজ্ঞাবহ স্নায়ু: এই ধরনের স্নায়ু স্নায়ুস্পন্দন বা স্নায়ু-উদ্দীপনা বহন করে স্নায়ুকেন্দ্রে নিয়ে যায়।

(৪) স্নায়ুকেন্দ্র: সংজ্ঞাবহ স্নায়ুতন্তুর সাথে চেষ্টীয় স্নায়ুতন্তুর সংযােগস্থলকে স্নায়ুকেন্দ্র বলে।

(৫) প্রতিক্রিয়া: উত্তেজনার ফলেই জীবদেহে প্রতিক্রিয়া ঘটে।

উদাহরণস্বরূপ, আমরা যখন কোনাে একটি বস্তুকে দেখি তখন সেই বস্তুটি থেকে প্রতিফলিত আলােকরশ্মি আমাদের চোখের অপটিক স্নায়ুর বহিঃ প্রান্তকে উদ্দীপিত করে এবং সেই উদ্দীপনা মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রে পোঁছােয়। এর ফলে আমরা বস্তুটি সম্পর্কে সংবেদন লাভ করি, অর্থাৎ বস্তুটিকে দেখতে পাই।