অথবা, কোন কোন পদ্ধতিতে সংবিধান গড়ে উঠে?
অথবা, সংবিধান প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পদ্ধতি উল্লেখ কর।
অথবা, সংবিধান প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন উপায় উল্লেখ করুন।
ভূমিকাঃ সংবিধান হলো বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল। এটা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলভিত্তি। সংবিধানবিহীন রাষ্ট্র কর্ণধারাবিহীন জাহাজের সাথে তুলনীয়। কারণ সংবিধানের ভিত্তিতেই একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, সরকার গঠিত হয়, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টিত হয়।
সংবিধান প্রণয়নে পদ্ধতিসমূহঃ সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতিসমূহ নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
১. অনুমোদনঃ অনুমােদনের মাধ্যমে সংবিধান প্রতিষ্ঠা করা যায়। রাষ্ট্র উৎপত্তির প্রথমাবস্থায় অধিকাংশ রাষ্ট্রেই স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। শাসন ক্ষমতা এককভাবে স্বেচ্ছাচার রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল। গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ ও গণতান্ত্রিক আদর্শ তখনও বিকশিত হয় নি।
২. গণপরিষদঃ ইচ্ছাকৃত রচনার মাধ্যমেও সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। আধুনিক রাষ্ট্রে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি বিশেষভাবে প্রচলিত। সাধারণত সংবিধান প্রণয়নের জন্য দেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা হয়।
৩. ক্রমবিবর্তনঃ কোন রাষ্ট্রের সংবিধান ঐতিহাসিক বিবর্তনের মাধ্যমেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণার প্রসারের ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা স্বেচ্ছাচারী শাসকদের কাছ থেকে বাস্তবে ক্রমশ হস্তান্তরিত হতে পারে। আর জনগণ। তাদের প্রতিনিধিদের ক্ষমতাকেই শেষ পর্যন্ত বৈধ বলে স্বীকৃতি দিতে পারে।
৪. বিপ্লবঃ বিপ্লবের মাধ্যমেও অনেক সময় সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপ্লব তখনই ঘটে যখন প্রচলিত সরকার ও সরকারের অত্যাচার উৎপীড়নে জনগণ অতিষ্ট হয়ে উঠে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যখন এ ধরনের সরকারের উৎখাত সম্ভব হয় না, তখনই জনগণ বিপ্লবের পথ ধরে সরকারকে পরাভূত করে।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উপযুক্ত পদ্ধতিগুলাের যে কোন একটি অবলম্বন করে সংবিধান রচনা করে। তবে একথা সত্য যে, উপযুক্ত পদ্ধতিগুলাের মধ্যে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানই শ্রেষ্ঠ সংবিধান বলে স্বীকার করা হয়। আইন সভার সদস্যরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা প্রণীত সংবিধানের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষায় প্রতিফলন ঘটে।
Leave a comment