মিসা
নিবর্তনমূলক আটক আইনের পরিবর্তে ১৯৭১ সালে পার্লামেন্টে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা আইন বা ‘মিসা (Maintenance of Internal Security Act) প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে আটক ব্যক্তি তার গ্রেফতারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযােগ করতে পারে না। ১৯৭৮ সালে এই আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
ভারতীয় সংবিধানের ২২নং ধারায় গ্রেফতার বা আটক সংক্রান্ত ব্যবস্থাদি লিপিবদ্ধ করে বলা হয়েছে যে, কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটক করা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রেফতার বা আটকের কারণ জানাতে হবে| আটক ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার দিতে হবে [২২(২) নং ধারা]। গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে নিকটবর্তী জেলাশাসকের আদালতে হাজির করতে হবে এবং জেলাশাসকের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত সময় তাকে কোনােভাবেই আটক রাখা যাবে না [২২(৩) নং ধারা]। তবে শত্রুভাবাপন্ন বিদেশি এবং নিবর্তনমূলক আটক আইনে ধৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মগুলি কার্যকর হবে না। কোনাে বিপজ্জনক বা গুরুতর অপরাধের (যেমন—প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে) আশঙ্কার ভিত্তিতে কোনাে ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও আটক করা হলে সেই আটককে ‘নিবর্তনমূলক আটক বলে।
সংবিধান অনুসারে ভারতের সংসদ ও রাজ্য আইনসভাগুলি নিবর্তনমূলক আটক আইন প্রণয়ন করতে পারে। এই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা যুগ্ম- তালিকার অন্তর্ভুক্ত; সেই কারণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনের মধ্যে কোনাে অসংগতি দেখা দিলে রাজ্য আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ অংশ বাতিল বলে গণ্য হবে। নিবর্তনমূলক আটক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সংবিধানের ২২(৪) থেকে ২২(৭) নং ধারার মধ্যে বিশদে আলােচনা করা হয়েছে। 8৪তম সংবিধান সংশােধনী আইনে সংবিধানের ২২(৪) থেকে ২২(৭) নং উপধারাগুলির কিছু পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে উপদেষ্টা পর্ষদের অনুমতি ছাড়া নিবর্তনমূলক আটক আইনে কোনাে ব্যক্তিকে দুমাসের বেশি আটক রাখা যায় না। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সুপারিশক্রমে মােট তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে এই পর্ষদ গঠিত হবে। ভারতে সংবিধান চালু হওয়ার অব্যবহিত পরেই নিবর্তনমূলক আটক আইন প্রণীত হয়। পরবর্তীকালে মিসা, কফে পােসা, নাসা পােটো প্রভৃতি চালু করা হয়।
প্রসঙ্গত বলা যায়, বর্তমানে ‘অবৈধ কার্যকলাপ (প্রতিরােধ) আইন’ নামে একটি নতুন আইন (The Unlawful Activities Prevention Act) সংশােধিত অবস্থায় সক্রিয় রয়েছে। নিবর্তনমূলক আটক আইন নিঃসন্দেহে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরােধী। পৃথিবীর অন্য কোনাে গণতান্ত্রিক দেশে স্বাভাবিক অবস্থায় এই ধরনের আইন দেখা যায় না। বিচারপতি পাতঞ্জলি শাস্ত্রী একে ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ বলে অভিহিত করেন।
সম্প্রতি সংযােজিত ১১ নং মৌলিক কর্তব্য
২০০২ সালে ৮৬ তম সংবিধান সংশােধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানে সংযােজিত ১১ নং মৌলিক কর্তব্যটি হল প্রত্যেক পিতা-মাতা কর্তৃক ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি সন্তানের এবং অভিভাবক কর্তৃক নাবালকের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
বহুজাতি-অধ্যুষিত বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির দেশ ভারতে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মৌলিক অধিকার সংবিধানে ২৯ এবং ৩০ নং ধারায় সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
[1] ২৯নং ধারা: সংবিধানের ২৯ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাসকারী সমস্ত শ্রেণির নাগরিকের ভারতের যে কোনাে স্থানের ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণের অধিকার রয়েছে। এই সঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে, সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা ভাষার বিভেদজনিত কারণে কোনাে নাগরিককে ভরতির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
[2] ৩০ নং ধারা: ৩০ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রতিটি ধর্মীয় বা ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করার অধিকার আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোনাে ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। তা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মের ভিত্তিতে কোনাে আসন সংরক্ষণ করা চলবে না। রাষ্ট্র যদি কোনাে সংখ্যালঘু শ্রেণির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে সমস্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
মূল্যায়ন: সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার সংবিধানে মৌলিক অধিকারের তালিকায় লিপিবদ্ধ হওয়ায় ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বস্তুত ধর্ম, ভাষা ও গােষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি এবং শিক্ষার অধিকারকে সুনিশ্চিত করার যে দৃষ্টান্ত সংবিধানে দেখানাে হয়েছে পৃথিবীর অন্য কোথাও তা প্রায় নেই বললেই চলে। এই কারণে ১৯৯২ সালে সুপ্রিমকোর্ট সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকারের গুরুত্ব সম্পর্কে এক রায় দান করতে গিয়ে বলে, শিক্ষার অধিকার হল মৌলিক অধিকারের সহযােগী (Right to education is concomitant to fundamental right.)I
নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটি আলােচনা করাে । অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করাে।
জাতিপুঞ্জের ঘােষণাপত্রে বিবৃত মানবাধিকারসমূহ । মানবাধিকার এবং অন্যান্য অধিকারের মধ্যে পার্থক্য । মানবাধিকারের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ । মানবাধিকারের সংজ্ঞা
ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে লিপিবদ্ধ করার কারণ । মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা এবং প্রকৃতি । ইতিবাচক ও নেতিবাচক মৌলিক অধিকার কাকে বলে? জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির বৈধতা
ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারগুলির বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।
ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত সাম্যের অধিকারটি আলোচনা করাে । ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বােঝায়? ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
ভারতের সংবিধানে সম্পত্তির অধিকারের সাংবিধানিক মর্যাদা কী? ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।
Leave a comment