(১) ভারতীয় সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান অথবা এর কোনাে একটির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোনাে নাগরিকের বিরুদ্ধে বৈষম্য করবে না।
(২) কোনাে নাগরিক কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, জন্মস্থান অথবা এর কোনাে একটির ভিত্তিতে—
- দোকানে, সর্বজনীন ভােজনালয়ে, হােটেলে এবং সর্বজনীন চিত্তবিনােদন স্থলে প্রবেশের ব্যাপারে কিংবা,
- রাষ্ট্রের তহবিল থেকে পূর্ণত বা অংশত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে অথবা সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য সমর্পণ করা হয়েছে এমন কূপ, পুষ্করিণী, স্নানের ঘাট, সড়ক এবং জনসমাবেশ স্থলের ব্যবহারের ব্যাপারে কোনােরকম অযােগ্যতা, বাধ্যবাধকতা, নিয়ন্ত্রণ বা শর্তের আওতাধীন হবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের কোনাে কিছুই নারী ও শিশুদের জন্য কোনাে বিশেষ ব্যবস্থা প্রণয়নে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না।
(৪) এই অনুচ্ছেদের অথবা অনুচ্ছেদ ২৯-এর ধারা (২)-এর কোনাে কিছুই সমাজে ও শিক্ষায় অনগ্রসর কোনাে শ্রেণির নাগরিকদের উন্নতির জন্য কিংবা তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সমূহের জন্য কোনাে বিশেষ ব্যবস্থা প্রণয়নে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করবে না। ভারতীয় সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—
- রাষ্ট্রের অধীন কোনাে চাকুরি বা কোনাে পদে নিয়ােগের ব্যাপারে সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে সুযােগের সমতা থাকবে।
- কেবল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, বংশ, জন্মস্থান, নিবাস অথবা এর কোনাে একটির ভিত্তিতে কোনাে নাগরিক রাষ্ট্রের অধীন কোনাে চাকুরিতে বা কোনাে পদে নিয়ােগের ব্যাপারে অযােগ্য হবে না কিংবা এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে বৈষম্য করা যাবে না।
কেবল সরকারি চাকুরিতে নিয়ােগের ব্যাপারেই নয়, পরে পদোন্নতি এবং চাকুরির সমাপ্তি ঘটানাের ব্যাপারেও বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই অধিকার কেবল সম্প্রদায়গত বৈষম্যের বিরুদ্ধেই নয়, স্থানীয় বৈষম্য, এমনকি নারীদের বিরুদ্ধেও এক রক্ষাকবচ।
উপরােক্ত সমতার নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে—
(১) কোনাে রাজ্যের অথবা অন্য কোনাে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অধীন কোনাে কোনাে বিশেষ শ্রেণির চাকুরিতে বা কর্মের নিয়ােগের ক্ষেত্রে সেই রাজ্যের অধিবাসী হতে হবে বলে সংসদ একটা শর্ত নির্ধারণ করতে পারে (অনুচ্ছেদ ১৬ (৩)]।
(২) রাষ্ট্র যদি মনে করে, রাষ্ট্রের অধীন চাকুরিতে সমাজের কোনাে অনগ্রসর শ্রেণির নাগরিকদের পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নেই, তাহলে রাষ্ট্র তাদের জন্য যে-কোনাে পদ বা চাকুরি সংরক্ষণ করতে পারে [অনুচ্ছেদ ১৬ (৪)]। এটি আর্থ সামাজিক সমতারক্ষায় অসুবিধা উদ্ভাবনের জন্য সৃষ্টি হয়।
(৩) কোনাে ধর্মীয় বা ধর্ম সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনাে পদ ওই নির্দিষ্ট ধর্মমতাবলম্বী বা ধর্মসম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে [অনুচ্ছেদ ১৬(৫)]।
(৪) কেন্দ্রের অথবা কোনাে রাজ্যের অধীন চাকুরিতে বা পদে নিয়ােগের ক্ষেত্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিভুক্ত ব্যক্তিদের দাবি প্রশাসনের দক্ষতা যাতে বজায় থাকে সেদিকে যতখানি সম্ভব লক্ষ রেখে বিবেচনা করতে হবে (অনুচ্ছেদ ৩৩৫]।
আর্থ সামাজিক নীতি রুপায়ণের জন্য সুপারিশ
সংবিধানে বর্ণিত আর্থসামাজিক নীতি বিষয়ক বিধির সার্থক রূপায়ণের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
(১) জনসাধারণের ব্যবহারযােগ্য যে-কোনাে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যবহারের জন্য সর্বসাধারণের জন্য নােটিশ দেওয়া বা থাকা প্রয়ােজন।
(২) মৌলিক অধিকার তথা সমতার বিষয়ে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি তরফে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়ােজন।
(৩) নারী ও শিশুকল্যাণের জন্য প্রায় সমস্ত রাজ্যেই আলাদা দপ্তর আছে ও তারা নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবুও মনে হয়, এ ব্যাপারে সংবিধানের স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকলে শুধু জাতীয় বা রাজ্যস্তরে নয়, স্থানীয় স্তরেও কর্তৃপক্ষের পক্ষে বিভিন্ন বিধিগ্রহণে সুবিধা হবে।
(৪) তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত কোনাে পদে যদি উপযুক্ত ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়া যায়, তবে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য পদটি ওই শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত করে রাখা প্রয়ােজন [অনুচ্ছেদ ১৬(৪)]। তাতে ওই শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব বাড়বে ও আর্থসামাজিক নীতিতে ভারসাম্য আনবে।
(৫) সংবিধানের ৩৫১নং ধারায় বলা হয়েছে, হিন্দি ভাষার উন্নতি ও প্রসার ভারত সরকারের দায়িত্ব। সংবিধানের নির্দেশিকা মােতাবেক সারা দেশে হিন্দি ভাষার প্রসার প্রয়ােজন, যাতে সারা দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভাষা বাধা হতে না পারে।
Leave a comment