সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রসঙ্গে হান্টার কমিশন যেসব সুপারিশ করেন, সেগুলি হল一
(1) রাজন্যবর্গের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: কমিশন দেশের রাজন্যবর্গের ছেলেমেয়েদের জন্য পৃথক বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপনের সুপারিশ করে।
(2) মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষের জন্য পৃথক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে। এক্ষেত্রে বলা হয় যে, ওখানে কেবলমাত্র মুসলমান শিক্ষার্থীরাই পড়তে পারবে। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পাঠ্যসূচিও আলাদা হবে। প্রয়ােজনে দরিদ্র মুসলিম শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে। মুসলিম বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য পৃথক নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করতে হবে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য মুসলমান সম্প্রদায়ের পরিদর্শক নিযুক্ত করতে হবে।
কমিশন ধর্মশিক্ষার বিষয়টি বিচারবিবেচনা করে বেশ কিছু সুপারিশ করে। এগুলির মধ্যে রয়েছে—
(1) ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিক শিক্ষা: নীতিশিক্ষা প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার স্তরেও বিশেষভাবে প্রয়ােজন। বলে কমিশন মতামত প্রকাশ করে। বলা হয়, শিক্ষার্থীদের নৈতিক চরিত্র গঠনে উৎসাহিত করাই হবে এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
(2) সর্বধর্মের সাধারণ নীতির ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক নির্মাণ: কমিশন সকল ধর্মের সাধারণ নীতির ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের পরামর্শ দেন।
(3) নাগরিক ও মানবিক সচেতনতার জন্য শিক্ষক নিয়ােগ: প্রতিটি কলেজে ছাত্রদের নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলার জন্য এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে পাঠদানের জন্য অন্তত একজন অধ্যাপক নিয়ােগের সুপারিশ করা হয়।
হান্টার কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে খুবই সংক্ষিপ্ত সুপারিশ করেছিলেন। তবে ওই সুপারিশগুলি যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই।
(1) মাধ্যমিক শিক্ষার বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহদান: কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করায় পরবর্তী বিশ বছরে দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা উল্লেখযােগ্যভাবে বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিশ বছরে প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পায়।
(2) আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন: কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকার জেলায় জেলায় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। ওইগুলি আজও মডেল স্কুলের ভূমিকা পালন করে চলেছে।
(3) পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি কর্মাউত্তিক শিক্ষার প্রচলন: মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে A কোর্স বা B কোর্স প্রবর্তনের সুপারিশ করে কমিশন গতানুগতিক পুথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাবহারিক জীবনের উপযােগী কর্মভিত্তিক শিক্ষার যে সুযােগ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তার মধ্যে। বর্তমান যুগের বহুমুখী মাধ্যমিক শিক্ষার বীজ নিহিত ছিল। সুতরাং বলা যায়, কমিশনের ওই সুপারিশের মধ্যে যথেষ্ট সন্তাবনা ও দূরদৃষ্টির পরিচয় ছিল।
(4) সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্র থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করার যে নীতি কমিশন সুপারিশ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তার প্রভাবে দেশে মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যপারে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছিল।
এতগুলি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের পাশাপাশি কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যম প্রসঙ্গে নীরব থেকে শাসকগােষ্ঠীর কুমতলবকেই প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এটি জনগণের ক্ষোভের একটি উল্লেখযােগ্য কারণ হয়ে দাড়ায়।
Leave a comment