অথবা, রাধা শাশ্বত বাঙালি নারীর প্রতিমূর্তি – এ প্রসঙ্গে তোমার মতামত উপস্থাপন কর

উত্তর: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রধান এবং আকর্ষণীয় চরিত্র শ্রীরাধা। রাধার চরিত্র চিত্রণে কবি নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে রাধা রক্তমাংসে গঠিত সাধারণ নারী। সে বৈকুন্ঠের লক্ষ্মী কিংবা কৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি নয়। সে একেবারে লৌকিক। মানবীয় গুণের বিকাশ ঘটেছে তার মধ্যে। রাধা আইহনের স্ত্রী, গোপবধূ, ঘরে তার সর্বাঙ্গসুন্দর স্বামী, ননদ, শাশুড়ি তথা সামাজিক অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত সে। রাধা এগারো বছরের বালিকা। শরীরে সে অর্থে রতি জন্ম হয়নি। কিন্তু কৃষ্ণ রাধার যৌবন সুখে উন্মাদ। এজন্য সে রাধাকে প্রেম নিবেদন করে তাম্বুল পাঠাল। কিন্তু রাধা হিন্দু ঘরের মেয়ে সতীত্ব বোধের কারণে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। নৌকা খণ্ড থেকে রাধার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

বংশীখণ্ডেই রাধার পূর্ণ যৌবন প্রকট হয়ে উঠে। সে সমাজ সংস্কারকে দুয়োধ্বনি দিয়ে উদভ্রান্ত চিত্তে কৃষ্ণের বাঁশির মধুর সুরে আত্মহারা ও পাগল পারা। রাধার মনে প্রেমের পরিপক্ক অবস্থা। তাই কৃষ্ণের বাঁশিতে রাধার মন উন্মনা হয়ে উঠে। কৃষ্ণ প্রেমে রাধার চিত্ত ভরপুর। কৃষ্ণ ধরা দিচ্ছে না। তাই রাধার নিকট পৃথিবী যেন শূন্য, জীবন অসার, যৌবন জঞ্জাল, শয়নে স্বপনে রাধা জাগরণ চিত্তে কেবলই কৃষ্ণের ছবি। বিরহখণ্ডে এসে আমরা রাধা চরিত্রের এক অন্তর্জাগতিক সৌন্দর্যের পরিচয় পাই। কেলককে ” বিরহ বেদনায় আতপ্ত স্পর্শে মানবী রাধা যেন সহসা মহিমান্বিত লোকে উত্তীর্ণ হয়েছে। রাধার চপলতা, পরিহাস, শানিত ব্যাঙ্গের তীক্ষ্ণতা সবই রাধা বিরহে এসে একান্ত আত্মনিবেদনের অশ্রু ভারাতুর আকাঙ্ক্ষায় সরসর করে কল্পিত হয়েছে। এক দিন যে বালিকা নীতি বহির্ভূত অসামাজিক প্রেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, সেই রাধা আবার প্রেমের উত্তাপে দগ্ধ হয়েছে। সুতরাং রাধা চরিত্রের জীবনোজ্জ্বল এবং চঞ্চলতা পাঠককে আকৃষ্ট করেছে।