অথবা, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে ‘বড়াই’ এর ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
অথবা, বড়াই চরিত্রের বিশেষত্ব আলোচনা কর
অথবা, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে ‘বড়াই’ এর ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
উত্তর: বড়ু চণ্ডীদাস রচিত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রধান চরিত্র বড়াই। বড়াই টাইপ জাতীয় চরিত্র। বড়াই চরিত্র সৃষ্টিতে কবির মৌলিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রচলিত পদাবলীতে রাধার যেসব সখীর উল্লেখ রয়েছে, বড়াই তাদের সমপর্যায়ভুক্ত নয়। বড়ায়ির ভূমিকা অনেকটা গুরু বা পথপ্রদর্শকের মতো। এ কাব্যে সে দ্বৈতকার্যে নিযুক্ত এবং সখীর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বড়ায়ির মধ্যস্থতা ব্যতীত রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠা সম্ভব ছিল না। এ মিলন বা মধ্যস্থতায় বড়ায়ির কোনো স্বার্থ নেই। কৌতুক আর আনন্দই একমাত্র লক্ষ্য। বড়ায়ির সাথে রাধার প্রাণের সম্পর্ক স্বার্থের নয়। বড়াই চরিত্রের বিশেষত্ব হচ্ছে সে দূতীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও স্নেহবশত রাধাকৃষ্ণের মিলন ঘটাতে তৎপর হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে বড়ায়ির পরামর্শ ও প্ররোচনায় অধিকাংশ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সমস্ত ঘটনার নিয়ামক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বড়াই সাধারণ কূটনী চরিত্র হতে মানবিক মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। বড়াই কখনো রাধা কখনো কৃষ্ণের পক্ষাবলম্বন করেছে। ‘দানখণ্ডে’ তারই ষড়যন্ত্রে রাধা কৃষ্ণের কবলে পড়েছে। আবার বাণখণ্ডে কৃষ্ণের শরের আঘাতে রাধা মূর্ছিত হয়ে পড়লে বড়াই কৃষ্ণের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে তিরস্কার করেছে। বংশীখণ্ডে বড়াই রাধার পক্ষ অবলম্বন করে কৃষ্ণকে ছলনা করেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বড়াই চরিত্রের আবেদন সমগ্র রসিক সমাজে। তার প্রখর বুদ্ধি ও চাতুর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। সুতরাং স্নেহ প্রীতির মমতায় বড়াই পরিপূর্ণ একটি মানবীয় চরিত্র। এখানেই বড়াই চরিত্রের সার্থকতা।
Leave a comment