অথবা, শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে মানবিক রস মুখ্য-এ প্রসঙ্গে তোমার মতামত উপস্থাপন কর
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রধান আকর্ষণ রাধা। এ কাব্যে রাধা প্রধানত মানবীয় চরিত্র। তাই একান্ত আত্মসমর্পণের সাথে মানবীয় গুণের যথেষ্ট সমাবেশ হয়েছে। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের মধ্যেই নিহিত আছে দেবভাব। বৈষ্ণব পদাবলীতে আমরা রাধাকে জীবাত্মা এবং কৃষ্ণকে পরমাত্মা হিসেবে জানি। পদাবলীর এ রাধা-কৃষ্ণকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে আবির্ভূত। কিন্তু এ প্রেম একান্ত লৌকিক। রাধা-কৃষ্ণ রক্ত মাংসের উপাদানে গঠিত মানুষ। তাই এ কাব্যের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণের মধ্যে প্রত্যক্ষ করি রাধাকে ভোগের চেষ্টা।
আত্মাকে কেন্দ্র করে নয়, দেহকে কেন্দ্র করেই কাহিনির পরিক্রমা। গোটা কাব্যখানি দৈহিক আকর্ষণে টান টান। যেন জৈবিক রসে সিঞ্চিত এবং মানবীয় আবেদনে আকর্ষণীয়।
পদাবলীতে রাধার মধ্যে আত্মসমর্পণ মূলক ধ্যান গম্ভীর মূর্তি লক্ষ করি কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে তা নয়। রাধার প্রেমের মধ্যে আত্মবিস্মৃতি নেই, এটা একান্ত বহির্মুখী। এ প্রেম আপন মহিমায় অপার্থিব লোকে পৌঁছতে পারে না। রাধার বিরহ বেদনার মধ্য দিয়ে কবি শাশ্বত নারীর হাসি-কান্না, বেদনা অনুভূতির সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে। তাই রাধার বিলাপ আমাদের চিত্ত স্পর্শ করে। এখানেই রাধা বিরহের মানবিক দিক প্রকটিত।
Leave a comment