সবুজ বিপ্লব ব্যাপক সাফল্য লাভের পর ভারত সরকার অপারেশন ফ্লাড কর্মসূচির মাধ্যমে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ নজর দেয়। 1970 খ্রিস্টাব্দে ন্যাশনাল ডেয়ারি Goaletto cart (National Dairy Development Board)-এর সাহায্যে ভারতে দুগ্ধ উৎপাদনের যে অভাবনীয় উন্নতি দেখা যায় সেই ঘটনাকে শ্বেত বিপ্লব বলা হয়। শ্বেত বিপ্লব ঘটার সাথে যে নামটি বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত তা হল ভার্গিস কুরিয়েন (Verghese Kurien), যিনি ভারতে শ্বেত বিপ্লবের জনক (Father of White Revolution) নামে পরিচিত।
ভারতে ‘অপরেশন ফ্লাড’ কর্মসূচিটি কতকগুলি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে শ্বেত বিপ্লবের উদ্দেশ্য হিসেবে প্রচলিত হয়। এই উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে নীচে আলােচনা করা হল一
(১) দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানো : দুধ ও দুধজাত দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানাে ছিল এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য।
(২) গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বেকারত্ব দূর করা ছিল এই বিপ্লবের অন্যতম উদ্দেশ্য।
(৩) সঠিক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা : দুধ ও দুধজাত পণ্যের সঠিক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তােলা।
(৪) পুষ্টিজাত খাদ্যদ্রব্যের জোগান বাড়ানো : দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টিজাত খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি করা।
(৫) আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ : দুগ্ধ উৎপাদনের সাথে যুক্ত সমবায় সংস্থাগুলিকে আধুনিক করে গড়ে তুলে দুধের সংগ্রহ, দুধের পরিবহণ এবং বৈজ্ঞানিক প্রথায় হিমঘরে সংরক্ষণে সঠিকভাবে পারদর্শী করে তােলা।
দুর্থ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অপারেশন ফ্লাড নামে পরিচিত। অপারেশন ফ্লাড কার্যকরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা হল一
প্রথম পর্যায় (1970-1980) : 1970 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অপারেশন ফ্লাড-1 গৃহীত হয়। এই পর্যায়ের মােট খরচ ছিল প্রায় 116 কোটি টাকা। দেশের 18 টি দুধ বলয়কে (Milkshed) চারটি মহানগর মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই ও কোলকাতার ক্রেতাদের সাথে যুক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায় 19811985 : এই পর্যায়ে দুধ বলয়ের সংখ্যা 18 থেকে বাড়িয়ে 136 করা হয়। 1985 খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে দেশের মধ্যে প্রায় 43 হাজার গ্রামে ‘দোহ সমবায় সংস্থা গড়ে তােলা হয়। যা সারাদেশের প্রায় 42.5 লক্ষ উৎপাদককে যুক্ত করেছে। দুধ উৎপাদক 1 কোটি গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে 485.5 কোটি টাকা বণ্টন করা হয়। দেশের 290 টিরও বেশি শহরে ভালােভাবে বিপণনের জন্য দুধ সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপিত হয়।
তৃতীয় পর্যায় (1985-1996) : এই পর্যায়ে দুধের উৎপাদন উল্লেখযােগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। প্রতিদিন প্রায় 112 লক্ষ লিটার দুধ বাজারে বিপণন করা হয়। দুধ উৎপাদনে যুক্ত গ্রামীণ পরিবারগুলির মধ্যে 680 কোটি টাকা বণ্টন করা হয়। সারা দেশে 73,300 টি সমবায় সংস্থা গড়ে ওঠে।
তৃতীয় পর্যায়ের পরবর্তীকালে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ উল্লেখযােগ্য ভাবে বেড়ে যায়। সারা পৃথিবীতে দুধ উৎপাদনে ভারত প্রথম স্থান লাভ করে। তা ছাড়া মহিষের সংখ্যা ও গবাদি পশুর সংখ্যার ভিত্তিতে ভারত পৃথিবীতে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। অপারেশন ফ্লাড কর্মসূচির গবেষণা কেন্দ্র আনন্দ, মাহেসানা ও বানাসকাঁথায় গড়ে তােলা হয়। তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র শিলিগুড়ি, জলন্ধর ও ইরােড-এ স্থাপিত হয়। ন্যাশনাল ডেয়ারি গ্রিডের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত দুধ ও দুধজাত দ্রব্য ঘাটতিযুক্ত অঞ্চলে সরবারহের ব্যবস্থা করা হয়।
Leave a comment