“শেষের কবিতা যেন উপন্যাস ও কবিতায় জড়োয়া শিল্প”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের রচনাকাল উনিশ শতকের এক যুগবলয় থেকে শুরু করে বিশ শতকের আর এক যুগবলয় পর্যন্ত বিস্তৃত। তার শেষ জীবনে রচিত উপন্যাস শেষের কবিতা। এতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের বিচিত্র মানসিকতা রূপায়িত হয়েছে। শেষের কবিতা যখন তিনি লেখেন তখন তিনি সুবৃদ্ধ। কল্পনাবৃত্তির কিছুটা খর্ব হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যৌবনমূর্তি বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ শেষের কবিতায় যেন নতুন রামগিরি অলকাপুরীর অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করলেন। অবশ্য শেষের কবিতাকে উপন্যাস শিল্প প্রকরণে পুরোদস্তুর উপন্যাস বলা যায় না। অমিত ও লাবণ্যের প্রেমের আখ্যান এ কাহিনির প্রধান উপাদান হলেও এর মধ্যে কবি একটি তাৎপর্য সংযোজিত করেছেন।
আর তা হচ্ছে দৈনন্দিন বিবাহিত জীবনের কর্তব্যপীড়িত গতানুগতিকতা এবং অপার্থিব রোমান্টিক প্রেমের স্বপ্নাভিসার। বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে এই যে দ্বন্দ্ব রবীন্দ্রমানসে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে তারই প্রকাশ ঘটেছে এখানে। অমিত ও লাবণ্য পরস্পরের প্রেমকে প্রয়োজনের তাড়নার দ্বারা মলিন করল না। অমিত কেটী মিত্রকে এবং লাবণ্য শোভনলালকে সামাজিকভাবে বিবাহ করে স্বাভাবিক কাজ করে যেতে লাগল। আর এভাবেই আধুনিকতার ইতিহাসে শেষের কবিতা মূল্য তাৎপর্যময় হয়ে উঠল। উপন্যাস ও কবিতায় জড়োয়া শিল্প শেষের কবিতা উপন্যাস। পুরুষ অথবা নারীর পক্ষে এক সঙ্গে দুজনকে অবিরোধে ভালোবাসা সম্ভব এবং সে ভালোবাসায় এক পাত্র সম্পর্কিত অপর পাত্র নিঃসম্পর্ক হতে পারে। এটাই শেষের কবিতার আখ্যানবস্তু।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment