গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো গল্পে দেখা যায়, পাদরি গােনসাগা ডানাওয়ালা বুড়ােটিকে জোচ্চোর ফেরেববাজ বলে মনে করেছিলেন। এর কারণ মুরগির খাঁচাটির মধ্যে ঢুকে গােনসাগা যখন তাকে লাতিন ভাষায় সুপ্রভাত জানান, তখন যথাযথ উত্তর না পেয়ে গােনসাগা ভেবেছিলেন যে, থুরথুরে বুড়াে লােকটি “ঈশ্বরের ভাষাই বােঝে না, কিংবা জানেও না কী করে ঈশ্বরের উজির-নাজিরদের সম্ভাষণ করতে হয়।” বুড়াে লােকটির চেহারাতেও কোনাে দৈব মহিমার ছাপ তাে ছিলই না, বরং তাকে বড় বেশি মানুষ মানুষ দেখাচ্ছিল এবং তার গা থেকে বেরােচ্ছিল খােলামেলা এক অসহ্য গন্ধ। গােনসাগা অবশ্য এসবের পরেও যাজকতন্ত্রের উচ্চপর্যায় (সর্বোচ্চ মােহান্ত) থেকে চূড়ান্ত রায়ের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেছেন। পাদরি গােনসাগা এও ভেবেছিলেন যে, বুড়াে লােকটি হয়তাে আসলে একটি শয়তান। রােমান ক্যাথােলিকদের উৎসবকে আচমকা পণ্ড করে দেওয়ার তালে আছে সে। অসাবধানীদের বেকায়দায় ফেলার বা বিপথে নিয়ে যাওয়ার কুমতলবও থাকতে পারে তার।
ডানাওয়ালা বুড়াের মূল্যায়নে নিয়মতান্ত্রিকতা, রক্ষণশীলতা আর যাজকতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়াসই লক্ষ করা যায়। যেভাবে ডানাওয়ালা বুড়ােকে জোচ্চোর ফেরেব্বাজ আখ্যা দেওয়া হয়েছে তা আসলে যাজকতন্ত্রের ক্ষমতার দম্ভ আর অসহিষ্ণুতার অমার্জিত প্রকাশ।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে কাদা থেকে উদ্ধার করা বুড়ােকে নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের শেষ ছিল না।
বাড়ির মুরগির খাঁচায় বন্দি করে রাখা ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াের খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার পরে এই দেবদূতকে দেখার জন্য পেলাইওদের বাড়ির সামনে মানুষের ভিড় ক্রমশই বাড়তে থাকে। প্রায় হাটবাজারের মতাে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় পেলাইওর স্ত্রী এলিসেন্দা ফন্দি আঁটে যে চারপাশে বেড়া দিয়ে দর্শকদের অবাধ প্রবেশকে নিয়ন্ত্রণ করে যদি ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখার জন্য দর্শনি বাবদ পাঁচ সেন্ট করে আদায় করা যায়, তাহলে মােটেও মন্দ হয় না।
এলিসেন্দার এই ফন্দি দারুণভাবেই সফল হয়েছিল। নানাজন নানান সমস্যা নিয়ে সেখানে হাজির হয়। জগতের সবচেয়ে দুর্ভাগা ও অশক্ত ব্যক্তিরা সেখানে আসে তাদের স্বাস্থ্যোন্নতির উদ্দেশ্যে। আসে অনিদ্রা রােগে ভােগা পাের্তুগিজ। কিংবা ঘুমের মধ্যে হেঁটে বেড়ানাে একজন লােক। হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা নিয়ে একটি মেয়েও আসে। কোনাে ভয়াবহ অসুখ নেই এমন অনেকেই আসে। ক্রমে ক্রমে দর্শনার্থীদের ভিড়ের এই সারি যেন দিগন্তকেও ছাড়িয়ে চলে যায়। আর এর ফলশ্রুতিতে এক সপ্তাহের মধ্যেই এলিসেন্দাদের ঘর টাকায় উপচে ওঠে ক্রমশ সুখী হয়ে ওঠে তারা।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে পেলাইও-এলিসেন্দার বাড়ির জালঘেরা মুরগির খাঁচার সামনে ডানাওয়ালা বুড়ােকে দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমা হয়। দেবদূত ভেবে তার উপাসনার জন্য খাঁচার মধ্যে তেলের বাতি, মােমের বাতি ইত্যাদি জ্বালানাে হয়। প্রচণ্ড জ্বালা আর উত্তাপ থুরথুরে বুড়াের কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। পেলাইও-দের পরম জ্ঞানী প্রতিবেশিনীর বিধান অনুযায়ী দেবদূতের খাদ্য হিসেবে তাকে ন্যাপথলিন দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিক যেভাবে ডানাওয়ালা বুড়াে পােপের ভােজ ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেভাবেই সে ন্যাপথলিনও প্রত্যাখ্যান করে। যখন মুরগিরা তাকে ঠোকরাত কিংবা তাকে দাঁড় করানাের জন্য কেউ টিল ছুঁড়ে মারত, পঙ্গুরা তাদের অঙ্গে ছোঁয়ানাের জন্য পালক ছিড়ে নিত-তখনও ডানাওয়ালা বুড়াে একেবারে প্রতিক্রিয়াহীনভাবে শান্ত হয়ে থাকত। একমাত্র যেদিন তাকে নিশ্চলভাবে পড়ে থাকতে দেখে সে মরে গেছে ভেবে তাকে গরম লােহার ছেঁকা দেওয়া হয়, তখনই তাকে দুর্বোধ্য অচেনা ভাষায় চিৎকার করতে দেখা গিয়েছিল। চোখ ফেটে তখন জল বেরিয়ে এসেছিল তার। লােকটির এই নিষ্ক্রিয় উদাসীনতা দেখে বেশিরভাগ লােকই বুঝেছিল, এই অবস্থা কোনাে মহাপ্লাবনের উপক্রমণিকা মাত্র।
মার্কেজের লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটি পেলাইওদের শহরে এসেছিল এক ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর সূত্রে। ভয়ংকর তারানতুলা সদৃশ মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটি আকারে ছিল একটি মস্ত ভেড়ার আকৃতির। তার মাথাটা ছিল এক বিষাদময়ী কুমারী মেয়ের। খুব ছােটোবেলায় বাবা-মাকে না জানিয়ে সে গিয়েছিল নাচের আসরে এবং তাদের বিনা অনুমতিতে সেখানে সারারাত ধরে নাচার পরে যখন মেয়েটি বনের ভিতর দিয়ে বাড়ি ফিরছিল তখন প্রবল বজ্রপাতের মধ্যে নেমে আসে জ্বলন্ত গন্ধকের এক বিদ্যুৎশিখা যা তাকে বদলে দিয়েছিল আজব এক মাকড়সায়। বুড়াে লােকটিকে দেখার চেয়ে অনেক কম পয়সা দর্শনি দিয়ে সকলে তাকে আগাপাশতলা খুঁটিয়ে দেখতে পেত, প্রশ্ন করারও সুযােগ পেত। এদের মধ্যে দয়াশীলদের ছুঁড়ে দেওয়া মাংসের বড়া খেয়ে বেঁচে ছিল সেই মাকড়সা হয়ে যাওয়া মেয়েটি।
বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াের কাহিনিতে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়েটির উপকাহিনির সংযােজন আপাতভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বিষয় মনে হলেও ডানাওয়ালা বুড়াের দেবদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তাকে খণ্ডন করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল। এক ধরনের নৈতিকতার বিস্তার এই মাকড়সা হয়ে যাওয়া মেয়েটির কাহিনিতে আছে। লেখক একে বলেছেন মানবিক সত্য আর এক ভয়ংকর শিক্ষা। নীতিশিক্ষাটি হল, মা- বাবার অবাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাচার জীবনযাপন কীভাবে নিজের সর্বনাশ বা বিপদ ডেকে আনে।
নুন কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
নুন কবিতায় কবির যে জীবনবােধের প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্ধৃতিযােগে আলােচনা করাে।
‘নুন’ কবিতার শিল্পসার্থকতা আলােচনা করাে।
“নিম্নবিত্তের নােনা চোখের জলের দিনলিপি নয়, জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছে লবণাক্ত সমুদ্রের গর্জন।” -ব্যাখ্যা করাে।
“চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে” -এই চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে জীবনের কোন বিশেষ তাৎপর্যের দিকে কবি ইঙ্গিত করেছেন?
“মাঝে মাঝে চলেও না দিন” কবির এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা করাে।
“আমরা তাে এতেই খুশি; বলাে আর অধিক কে চায়?” -কবির এই মন্তব্যের মর্মার্থ আলােচনা করাে।
“সে অনেক পরের কথা। টান দিই গঞ্জিকাতে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে/সব দিন হয় না বাজার; হলে হয় মাত্রাছাড়া” -উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কোন জীবনসত্যের প্রকাশ ঘটেছে?
“কী হবে দুঃখ করে?কবির এই মন্তব্যের কারণ কী?
“করি তাে কার তাতে কী?” -মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।
“আমরা তাে অল্পে খুশি”—কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছেন? এই ‘অল্পে খুশি’ হওয়ার তাৎপর্য কী?
“আমরা তাে অল্পে খুশি” -বক্তা সত্যিই খুশি কি না আলােচনা করাে।
“বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গালাপচারা।” -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
“কিনে আনি গােলাপচারা” -গােলাপচারা কিনে আনলেও বক্তার জীবনচর্যার প্রকৃত স্বরূপ আলােচনা করাে।
“রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি” -রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করে কবি তার মাথায় চড়ে কাকে কী বার্তা দিতে চান?
“আমি তার মাথায় চড়ি” -কে কার মাথায় চড়ে? পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
“সে অনেক পরের কথা” -বক্তার কোন্ বিষয়কে কেন অনেক পরের কথা বলা হয়েছে?
“ফুল কি হবেই তাতে”—কোন্ ফুলের কথা এখানে বলা হয়েছে? এই সংশয়ের কারণ কী?
“মাঝে মাঝে চলেও না দিন”—দিন চলে না কেন? এর ফল কী হয়?
নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।
শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের জীবনযন্ত্রণা ‘নুন কবিতায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
“আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক” -কেন কার কাছে এই দাবি করেছে?
“সব দিন হয় না বাজার” -বাজার হয় না কেন? হলে কী কী বাজার হয়?
“সে অনেক পরের কথা”—কোন্ কথা? উক্তিটির মর্মার্থ লেখাে।
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে প্রতীকের ব্যবহার যেভাবে ঘটেছে তা সমগ্র গল্প অবলম্বনে আলােচনা করাে।
কে, কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে প্রথম দেখেছিল?
“পড়ে-থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।” -তাদের হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার কারণ কী?
বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে দেখে বিভিন্ন জনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখাে।
Leave a comment