প্রশ্নঃ কেন আমাদের দেশের বিচারালয়গুলি শুধুমাত্র স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে সহযোগী আসামীকে শাস্তি প্রদান করতে অস্বীকার করে?
উত্তরঃ শুধুমাত্র স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে সহযোগী আসামীকে শাস্তি দেয়া হয় নাঃ যে ব্যক্তি অপরাধ করে তাকে অপরাধী বলে এবং তার অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনের বিধান অনুযায়ী তাকে শাস্তি দেয়া হয়। সে ছাড়াও অন্যান্য ব্যক্তি যারা তার সাথে অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল বা এ কাজে সহায়তা করেছে তাদেরকে দুষ্কর্মের সহযোগী বলা হয়। অপরাধ সংঘটনের পূর্বেও তার প্রস্তুতিতে যারা সহযোগিতা করেছেন কিংবা অপরাধের পরেও যারা তাকে সহায়তা করে তারাও সহযোগী। দুষ্কর্মের সহযোগীরা সাক্ষ্য আইনের ৩০ ধারা ও ১৩৩ ধারার বিধান অনুযায়ী গ্রহণীয় এবং এর ভিত্তিতে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া যায়। কিন্তু ১৪৪ ধারার (খ) উদাহরণে বলা হয়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদিসহ সমর্থিত না হলে দুষ্কর্মের সহযোগী বিশ্বাসের অযোগ্য। এছাড়া আদালতও এরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, সহযোগী আসামীর দোষ স্বীকারমূলক বিবৃতির উপর ভিত্তি করে অন্য আসামীদের অপরাধী সাব্যস্ত করা যায় না । [পি এল. ডি ১৯৬৩ করাচি ৭৩৯ ডি. বি.]
সাক্ষ্য আইনের ৩০, ১৪৪ ও ১৩৩ ধারা বিশ্লেষণ করে এবং আদালতের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, দুষ্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্য গ্রহণীয় হতে হলে তা অবশ্যই সমর্থিত হতে হবে এবং এই সমর্থন থাকতে হবে অপরাধ সম্পর্কে ও প্রতিটি আসামীর কার্যকলাপ সম্পর্কে পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট মন্তব্য করেছেন যে, দুষ্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্যের সমর্থন ঘটনার মূল বিষয়বস্তুর উপর হতে হবে। আদালত আরো বলেন যে, সব সময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন যে, দুষ্কর্মে সহযোগীর সাক্ষ্য একজন দুষ্ট লোকের সাক্ষ্য ছাড়া কিছুই নয় [পি. এল. ডি. ১৯৫৯ (সুপ্রীম কোর্ট) ৩৭৭]। দুষ্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্য একেবারেই অগ্রাহ্য করলে বিচারকার্য বিঘ্নিত হতে পারে আবার সহজভাবে ও নির্দ্বিধায় গ্রহণ করলে চরিত্রহীন ও হীনমনষ্ক লোককে গুরুত্ব দেয়া হয় । তাই আইন বলে যে, দুষ্কর্মের সহযোগীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দণ্ডদান বেআইনী নয়, কিন্তু এ বিষয়ে আদালত যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে . থাকেন এবং পর্যাপ্ত সমর্থনমূলক সাক্ষ্য আছে কিনা তা অনুসন্ধান করেন । কেন দুষ্কর্মের সহযোগীকে সহজে বিশ্বাস করা যায় না তা সহজেই অনুমেয়। প্রথমত: যে ব্যক্তি নিজে অপরাধ করেছে তার স্বীকারোক্তি দ্বারা এর গুরুত্ব কমে না। দ্বিতীয়ত: তার বন্ধু ও সহচরদের সাথে সে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তৃতীয়ত: যাদের সাথে দুষ্কর্ম করেছে তাদেরকে বিপদে ফেলে নিজে বাঁচার জন্য এরূপ স্বীকারোক্তি সে করেছে। কাজেই তার বিগত কার্যকলাপ ও ব্যক্তিগত চরিত্রের কথা বিবেচনা করেই একজন সহযোগী অপরাধীকে আদালত সহজে বিশ্বাস করতে চান না।
Leave a comment