মহাকাশ নিয়ে আমাদের সবার কম বেসি ভালোই কৌতূহল রয়েছে।নিশ্চয়ই আমার মত আপনার ও আছে তাইতো আপনি আমাদের সাথে।আমরা সবাই জানতে চাই ওই দূর আকাশে লুকিয়ে থাকা রহস্য গুলো।
শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা আকাশের কোথায় ও কোন দিকেই বা দেখা যায়,এদের মধ্যে পার্থক্য বা কি,ধ্রুবতারা ও শুকতারা আসলে কি এই সব গুলো বিষয় নিয়ে জানা যাক।

শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা কোন আকাশে দেখা যায়

শুকতারা ও সন্ধাতারা নিয়ে আমাদের অনেকের অনেক কৌতূহল রয়েছে।রাতের বেলায় আমাদের সবার কাছে চাঁদের পরে দ্বিতীয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হলো শুক্র।চাঁদের মতন শুক্র গ্রহের আলো স্থির।
সৌরজগতের গ্রহগুলো বুধ,শুক্র,পৃথিবী,মঙ্গল,বৃহস্পতি,শনি,ইউরেনাস,নেপচুন মূলত একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থেকে সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে।দুরত্তগত দিক থেকে সূর্য ও পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে অবস্থিত শুক্র গ্রহ।
যা সৌরজগতের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর নিকটতম একটি গ্রহ।শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা আসলে মূলত কোনো তারা নয়।এটি হচ্ছে সৌরজগতের একটি গ্রহ যার নাম শুক্র।যেহেতু শুক্র গ্রহের নিজস্ব কোন আলো নেই তাই আমরা বলতে পারি এর আলো সূর্য থেকে ধার করা।
সূর্যের অতি নিকটে হওয়ার কারনে চাঁদের মতই এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।সব গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তিকার কিন্তু শুক্রের কক্ষপথ গোলাকার।সূর্য থেকে শুক্র গ্রহের দুরত্ত পৃথিবী থেকে কম হবার কারনে পৃথিবী থেকে সূর্য যে দিক থেকে উদয় হয় ঠিক সে দিক থেকে শুক্র ওঠে।
ভোরের পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার আগে একে দেখা যায়।যাকে আমারা শুকতারা বা Morning star বলে থাকি।অন্যদিকে সূর্য অস্ত জাওয়ার পর পশ্চিম আকাশে যখন উদিত হয় তখন আমরা একে সন্ধ্যাতারা বা Evening star বলে থাকি।
যেহেতু শুক্র গ্রহের নিজের কোন আলো নেই এবং চাঁদের মতই এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।তাই সূর্যের আলো সরাসরি শুক্র গ্রহে প্রতিফলিত এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব কম হবার জন্য ভোর রাতে পূর্ব আকাশে শুকতারা রুপে।
আর সন্ধ্যার পর পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা রুপে অসংখ্য তারার মাঝে বড় ও উজ্জ্বল আকারে দেখা যায়।শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা কোন আকাশে দেখা যায় পূর্ব আকাশে শুকতারা এবং পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা।

শুকতারা ও ধ্রুবতারার মধ্যে পার্থক্য

মহাবিশ্বের সকল গ্রহ নক্ষত্র সবার সাথে কিছু না কিছু পার্থক্য আছে।যার মধ্যে শুকতারা ও ধ্রুবতারার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।শুকতারা ও ধ্রুবতারার মধ্যে পার্থক্য নিরুপন করতে হলে সেটা নিয়ে কিছুটা জনা দরকার।
শুকতারাঃশুকতারা কোন তারা নয় আসলে এটি একটি গ্রহ।যার নাম শুক্র।শুক্র গ্রহের ইংরেজি নাম Venus।এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ।উপাদান এবং আচরণগত দিক থেকে পৃথিবীর সাথে মিল থাকার কারনে একে পৃথিবীর “বোন গ্রহ” বলা হয়ে থাকে।
শুক্রের কক্ষপথ গোলাকার।শুক্র গ্রহের নিজস্ব কোন আলো নেই।সূর্যের অতি নিকটে হওয়ার কারনে চাঁদের মতই এটি সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে।চাঁদের মতন শুক্র গ্রহের আলো স্থির।সাধারনত শুকতারা ভোরের আকাশে দেখা যাওয়ার কারনে একে লুসিফার মানে শয়তান বলেও ডেকে থাকে।
মূলত এই শুক্র গ্রহকেই আমরা সবাই শুকতারা ও সন্ধাতারা বলে থাকি।হ্যা আপনি ঠিকই পড়ছেন যখন দেশের আকাশে আমরা একে ভোরে সূর্য উদয়ের আগে পূর্ব আকাসে দেখি তখন আমারা একে শুকতারা বলি।
আর সন্ধ্যার আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর দেখলে সন্ধ্যাতারা বলে থাকি।শুক্র গ্রহের নিজের কন উপগ্রহ নেই।
ধ্রুবতারাঃধ্রুবতারা যার ধ্রুব অর্থ স্থির।ইংরেজিতে যাকে বলা হয় পোল স্টার,পোলার স্টার বা পোলারিশ।এটি মূলত একটি নক্ষত্র।আমাদের কাছে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তারাদের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় হল, ধ্রুবতারা।
রাতের আকাশে উত্তর দিকে বহু নক্ষত্রের মাঝে জ্বলজ্বল করছে একটি নক্ষত্র। এটিই ধ্রুবতারা।এটি সব সময়ই উত্তর আকাশে দেখা যায়।এই তারাটি পৃথিবীর অক্ষের ওপর এর ঘূর্ণনের সঙ্গে একই গতিতে সামাঞ্জস্যপূর্ণভাবে আবর্তিত হয়।
কম্পাস আবিস্কারের পূর্বে সমূদ্রে জাহাজ চালানোর সময় নাবিকরা এই তারার অবস্থান আবিস্কার করে। কম্পাস আবিস্কারের পূর্বে সমূদ্রে জাহাজ চালানোর সময় নাবিকরা এই তারার অবস্থান আবিস্কার করে।শুধুমাত্র ধ্রুবতারাই মোটামুটি একই স্থানে অবস্থান করে থাকে।
তা দেখে নাবিকেরা উত্তর দিক নিরূপণ করতেন।তাই যে কোনো একটি দিক জানার কারনে বাকি দিক গুলো খুব সহজে জানা যেত।তাই একে আধুনিক COMPASS ( দিক নির্ণায়ক) বলা হয়।

ধ্রুবতারা কয়টি তারা নিয়ে গঠিত

রাতে যখন আমরা আকাশের দিকে তাকাই তখন আকাশের উত্তর দিকে একটি তারাকে সবসময় একই স্থানে জ্বলজ্বল করতে দেখি। রাতের আকাশে উত্তর দিকে বহু নক্ষত্রের মাঝে জ্বলজ্বল করা এই নক্ষত্রটির নাম এ হল ধ্রুবতারা।
ধ্রুব অর্থ যেমন অটল বা স্থির তেমনি নামের সাথে মিল আছে বলে একে আকাশের একই স্থানে দেখা যায়।সকল তারার মধ্যে উজ্জ্বল ভাবে থাকে বলে একে খালি চোখে দেখা জায়।
এইজন্য নাবিকরা খুবসহজে উত্তর দিক নিরুপন করে নিত এই তারার এক অবস্থান আর উজ্জল্ভাবে জ্বলজ্বল করার কারনে। ধ্রুবতারা কয়টি তারা নিয়ে গঠিত তা জানার পূর্বে আমদের সপ্তর্ষি মণ্ডল(Ursa Major বা Great Bear)নিয়ে কিছু জেনে রাখা উচিত।
সপ্তর্ষি মণ্ডল মুলত সাতটি তারার একত্রিত একত্রিত নক্ষত্রমণ্ডল।ভারতীয় উপমহাদেশের সাতজন ঋষির নাম অনুযায়ী এই সাতটি তারার নাম দেওয়া হয় নিম্নরূপঃ
  • ক্রতু
  • পুলহ
  • পুলস্ত্য
  • অত্রি
  • অঙ্গিরা
  • বশিষ্ঠ
  • মরীচি
বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে এই সাতটি তারা আকাশের উত্তর থেকে পূর্ব দিকে খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।যারা সবাই মিলে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্নের সৃষ্টি করে।সপ্তর্ষি মণ্ডলের প্রথম দিকের দুটি তারা ক্রতু ও পুলহ কে নিয়ে একটি সরলরেখা কল্পনা করে সামনে এগুলে তা ধ্রুবতারা কে দেখাবে।
যার জন্য এই দুটি তারাকে নির্দেশক তারা বলা হয়।তাহলে আমরা জানতে পারলাম ধ্রুবতারা সাতটি তারা নিয়ে গঠিত যাদের প্রত্যেকের নাম ভারতের সাতজন ঋষির নাম অনুযায়ী রাখা হয়ে ছিল।

ধ্রুবতারা কে কেন আধুনিক দিক নির্ণায়ক বলা হয়

ধ্রুব’ অর্থাৎ স্থির বা অটল। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় পোল স্টার, পোলার স্টার বা পোলারিশ। ধ্রুবতারা গাইডিং স্টার, নর্থ স্টার নামেও বেশ পরিচিত।আমাদের কাছে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তারাদের মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় হল, ধ্রুবতারা।
পৃথিবীর আকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু তার স্থান পরিবর্তন করবেই। কারণ পৃথিবী ঘূর্ণনশীল। ধ্রুবতারা ও ঘূর্ণনশীল। কিন্তু এই তারাটি পৃথিবীর অক্ষের ওপর এর ঘূর্ণনের সঙ্গে একই গতিতে সামাঞ্জস্যপূর্ণভাবে আবর্তিত হয়।
যে কারণে খালি চোখে পৃথিবী থেকে ধ্রুবতারাকে মনে হয় স্থির।এ কারণেই মনে হয় ধ্রুবতারার উদয় নেই,অস্ত নেই,গতি নেই।রাতের আকাশে উত্তর দিকে বহু নক্ষত্রের মাঝে জ্বলজ্বল করছে একটি নক্ষত্র। এটিই ধ্রুবতারা।এটি সব সময়ই উত্তর আকাশে দেখা যায়।
এক জায়গায় দেখা জায় বলে নামের সাথে মিল আছে।এটি সবসময়ই স্থির থাকে উত্তর আকাশে।আধুনিক COMPASS ( দিক নির্ণায়ক) বলা হয় একে। চুম্বক আবিস্কারের পূর্বে প্রাচীন কালে দিক নির্ণয় যন্ত্র বা কম্পাস আবিস্কারের পূর্বে সমূদ্রে জাহাজ চালানোর সময় নাবিকরা এই তারার অবস্থান আবিস্কার করে।
যা দেখে তারা দিক নির্ণয় করতো।পুলহ এবং ক্রতু যা সপ্তর্ষী মন্ডল এর প্রথম দুটি তারা যাকে সমান্তরালে রেখে সামনে এগিয়ে গেলে সেটি এ তারাটিকে নির্দেশ করে। এটি মূলত লঘু সপ্তর্ষী মন্ডলে দেখা যায়।রাত বাড়ার সাথে সাথে আকাশের সকল তারা দৃশ্যমান ও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
কিন্তু শুধুমাত্র ধ্রুবতারাই মোটামুটি একই স্থানে অবস্থান করে থাকে।তা দেখে নাবিকেরা উত্তর দিক নিরূপণ করতেন।তাই যে কোনো একটি দিক জানার কারনে বাকি দিক গুলো খুব সহজে জানা যেত।পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ থেকে ধ্রুবতারাকে সারাবছরই আকাশের উত্তরে নির্দিষ্ট স্থানে দেখা যায়।
ঢাকা থেকে ধ্রুব তারার উচ্চতা ২৩ ডিগ্রি ৪৩ মিনিট। আসেপাসে এর মতো উজ্জ্বল আর কোনো তারকা না থাকায় চিনতে বিশেষ অসুবিধা হয় না।বাংলাদেশ থেকে যতই উত্তরে যাওয়া যাবে, ধ্রুবতারা ততই ওপরে দেখা যাবে।

শুকতারা ও ধ্রুবতারা আসলে কি

শুকতারা মুলত একটি গ্রহ।যার নাম শুক্র গ্রহ।যার নিজের কোন আলো নেই।একেই আমরা শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা বলে থাকি।আচ্ছা তাহলে বলুন তো শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা কোন আকাশে দেখা যায় হ্যা উপরের অংশটুকু পরা হয়ে গেলে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন পূর্ব আকাশে শুকতারা রুপে এবং পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা রুপে।অপরদিকে ধ্রুবতারা হল একটি নক্ষত্র।যা উত্তর আকাশে সবসময় স্থির অবস্থায় উজ্জল্ভাবে জ্বলতে দেখা যায়।

লেখকের মন্তব্য

মহাকাশের রহস্য শেষ হবার নয়।বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কিছু না কিছু আবিষ্কার করছে।তাইত আমারা প্রতিনিয়িত কিছু না কিছু শিখছি যার কোন শেষ নেই।