ঋতুভেদে তাপমাত্রা বাড়া কমা নিয়ে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে কথাটি প্রচলিত তা হলঃ গ্রীষ্মকালে পৃথিবী সূর্যের কাছে থাকে, তাই গরম; আর শীতে থাকে দূরে, তাই তখন ঠাণ্ডা।’ তবে এটি কোন সঠিক ব্যাখ্যা নয়। যেমন ধরুন আমাদের দেশে যখন শীতকাল পৃথিবীর অন্য কোথাও হয়তো গ্রীষ্মকাল। সূর্য কাছে দূরে থাকার উপর যদি তাপমাত্রা নির্ভর করত তাহলে পৃথিবীর সর্বত্রই একসাথে শীতকাল বা গ্রীষ্মকাল হত।
তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতকালে তাপমাত্রা এত কমে যাওয়ার পেছনে মূল কারণটি।
আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এ ঘূর্ণনের সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে সামান্য হেলে থাকে। পৃথিবী আবার তার নিজ অক্ষেও ঘোরে, তাই বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে হেলে থাকে। ঠিক নিচের চিত্রটির মত।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনও সূর্যের কাছে চলে যায়, আবার কখনও উত্তর গোলার্ধ। একটা অংশ সূর্যের কাছে থাকা মানে তার উল্টো দিকের অংশটা থাকবে সূর্য থেকে দূরে। আর দূরে থাকলে সেই অংশটা কম আলো ও তাপ পাবে। ফলে ওই অংশের তাপমাত্রা কমে যাবে। তখন সেই অংশে থাকে শীতকাল।
শীতকালে পৃথিবীর ওই অংশে সূর্যের আলো বাঁকা বা তীর্যকভাবে পড়ে, আর এই আলো চারদিকে ছড়িয়েও পড়ে বেশি। অর্থ্যাত একটি নির্দিষ্ট অংশের তাপমাত্রা যথেষ্ট বাড়ানোর মত তাপ সে অংশে পড়ে না। ফলে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়া তাপশক্তির পরিমাণ গ্রীষ্মের তুলনায় বেশ কমে যায়।
আবার শীতকালে দিন হয় ছোট ও রাত বড়। এতে করে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোন স্থানে সূর্যের তাপ ও আলো কম সময় ধরে আপতিত হয়। তাই শীতকালে আমাদের ঠাণ্ডা লাগে।
আরেকটি ব্যাপার হলো, মানুষ হলো উষ্ণ রক্তের প্রাণী। কারণ তার শরীরে সবসময় তাপ উৎপন্ন হয়। আমাদের দেহের তাপমাত্রা সবসময়ই একটু বেশি থাকে। কিন্তু শীতকালে আমাদের দেহ অনেকটাই তাপ হারায়, এ হারানোটা অনুভব করি বলেই আমাদের শীত লাগে।
Leave a comment