প্রশ্নঃ শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে লিখ ৷

অথবা, শিল্প বিপ্লব পরবর্তী সমাজের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা কর।

ভূমিকাঃ বিপ্লব বলতে মানবসমাজের চিরাচরিত অবস্থানসমূহের ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী মৌলিক পরিবর্তন ও নবরূপায়ণকেই বুঝিয়ে থাকে। বিপ্লবের প্রকাশ আকস্মিক হলেও তা মানবসমাজের কোনো ভূঁইফোড় ঘটনা নয়। প্রত্যেক বিপ্লবের পেছনে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি লোকচক্ষুর অন্তরালে সক্রিয় থাকে। মাটির নীচে যুগ-যুগান্তরের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে যেমন গলিত পদার্থসমূহ বিস্ফোরক হয়ে আগ্নেয়গিরির উদগীরণ বা ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়।

শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের বৈশিষ্ট্যঃ প্রাক-শিল্পসমাজ এবং শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে, শিল্পবিপ্লবের সুদূরপ্রসারী বৈপ্লবিক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিম্নে শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-

মানবকল্যাণে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার বৃদ্ধিঃ প্রাক-শিল্পযুগে দীর্ঘদিন যাবত গাছ-পালা, পশু- পাখি, কৃষিদ্রব্য মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আহার ও শক্তি যোগাতে শিল্পবিপ্লব মানুষের সামনে বিরাট এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে। মনুষ্য ও পশু শক্তির পরিবর্তে কয়লা, তেল, বিদ্যুৎ পরমাণু ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তিকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মানুষ নিজেদের উন্নয়ন ও কল্যাণে লাগাবার কৌশল আবিষ্কার করে। এ জন্য বলা হয়, শিল্পবিপ্লব মানুষের বিরাট প্রাকৃতিক শক্তিভাণ্ডারকে আয়ত্ত করার এবং তা নিশ্চিতভাবে ব্যবহার করার একটি সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক ঘটনা।

বৃহৎ আকারের যান্ত্রিক উৎপাদনঃ শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বৃহৎ আকারের যান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়া। শিল্পবিপ্লব উৎপাদন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে। প্রাকৃতিক শক্তিচালিত যান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে গৃহকেন্দ্রিক ক্ষুদ্রাকৃতির উৎপাদনের পরিবর্তে বৃহদাকার উৎপাদন ব্যবস্থা চালু হয়। যার ফলে বিপ্লবোত্তর সমাজে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

পেশার পরিবর্তন ও নতুন নতুন সামাজিক শ্রেণির উদ্ভবঃ শিল্পবিপ্লবের ফলে বংশানুক্রমে আরোপিত পেশার পরিবর্তন ঘটে। শিল্পভিত্তিক সমাজে মানুষ সহজেই পেশা পরিবর্তনের সুযোগ পায়। এতে মানুষের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তা ছাড়া শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ি কাজ দেয়া হয়ে থাকে। শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে নতুন শ্রেণিসম্পর্ক গড়ে ওঠে।

যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নঃ শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকে। ফলে ভৌগোলিক দূরত্ব হ্রাস পায়। জনজীবন সহজ, দ্রুততর ও আরামপদ হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত এবং শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

পরিশেষঃ শিল্পবিপ্লবের ফলেই শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের উৎপত্তি। আর শিল্পবিপ্লবের ফলে সমাজব্যবস্থায় বিশেষ করে শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে সমাজের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও চিন্তাধারায় যে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তাকে শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের বৈশিষ্ট্য বলা হয়ে থাকে। তবে শিল্পবিপ্লবোত্তর সমাজের বৈশিষ্ট্য যে অবিমিশ্র আশির্বাদ নয় তা উপর্যুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।