শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল一 [1] জ্ঞানার্জন (Acquiring knowledge), [2] সংরক্ষণ বা ধারণ। (Retention), [3] পুনরুদ্রেক (Recall) এবং প্রত্যভিজ্ঞা (Recognition)। এবার এই তিনটি স্তরের সম্পর্কে আলােচনা করা হল一

(১) জ্ঞানার্জন: শিখনের প্রথম স্তর হল জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন। ব্যক্তি প্রথাগত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এই জ্ঞান বিভিন্নভাবে অর্জন করা যায়। ব্যক্তি বই পড়ে, শিক্ষক, অভিভাবক বা ব্ধুবাল্ধবের কাছ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আবার জীবনে চলার পথে প্রাকৃতিক বা সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে থাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলি যেমন সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, যাত্রা, নাটক ইত্যাদির সাহায্যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে।

(২) সংরক্ষণ বা ধারণ: শিখন বা অভিজ্ঞতাগুলিকে মনের মধ্যে ধরে রাখাকে সংরক্ষণ বলা হয়। সংরক্ষণের সঠিক ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। বিভিন্ন মনস্তত্ত্ববিদ বিভিন্নভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যাইহােক, সংরক্ষণের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব না হলেও, এর জন্য অনুকূল পরিস্থিতির উল্লেখ করা যায়, যেমন

  • যে-কোনাে বিষয় ভালােভাবে বুঝে নেওয়া এবং বিষয়টিকে বারবার অনুশীলন করা।

  • বিষয়টি যত বেশি সাম্প্রতিক হবে সংরক্ষপও তত ভালাে হবে।

  • বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকলে সংরক্ষণ উত্তম হয়।

  • শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য উত্তম সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থপূর্ণ বিষয়, অনুশীলন, আগ্রহ, অতিশিখন, দেহ ও মনের সুস্থতা ইত্যাদি সংরক্ষণের সহায়ক। এ ছাড়াও ছন্দ সহকারে পাঠ, সংকেতের ব্যবহারের ফলেও সংরক্ষণের উন্নতি ঘটে।

(৩) পুনরুদ্রেক এবং প্রত্যভিজ্ঞ: শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল পুনরুদ্রেক। সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাকে যদি ঠিক সময় ঠিক জায়গায় পুনরুদ্রেক করা না যায়, তাহলে শিখন সম্পূর্ণ হয় না। পূর্ব-অভিজ্ঞতাসমূহ পুনরায় মনে করাকে বলে পুনরুদ্রেক। পুনরুদ্রেক প্রধানত দুই প্রকারের। যথা—প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক এবং পরােক্ষ পুনরুদ্রেক। যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার ক্ষেত্রে কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। আবার যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার জন্য তার সঙ্গে পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে বলে পরােক্ষ পুনরুদ্রেক। আধুনিক মনােবিজ্ঞানীরা পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে তিনটি সূত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা

  • সান্নিধ্যের সূত্র: পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে যখন একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয় তখন তাকে সান্নিধ্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রসগােল্লার কথা মনে আসলেই তার মিষ্টত্ব এবং রসের কথা মনে হয়।

  • সাদৃশ্যের সূত্র: পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশি মিল থাকলে একটির কথা মনে হলেই অপরটির কথা মনে আসে। যেমন রামায়ণে লবের কথা মনে হলে কুশের কথাও মনে পড়বে।

  • বৈসাদৃশ্যের সূত্র: বৈসাদৃশ্যও পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা সহজে আমাদের মনে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়ঃআলাের কথা মনে হলেই অন্ধকারের কথা মনে হয়। রােগা লােকের কথা মােটা লােককে মনে করিয়ে দেয়।

প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বােধ, যা না থাকলে শিখনকে সফল বলা যায় না। প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির প্রকৃত অর্থ হল ‘চিনে নেওয়া। পূর্বে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞ| উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটি ছেলেকে দেখে চিনতে পারলাম যে ছেলেটি বছর দুয়েক আগে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আমার পাশে বসে ভােজ খেয়েছিল। এই চিনতে পারার বিষয়টি হল প্রত্যভিজ্ঞা| মনােবিজ্ঞানীদের মতে প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বােধ বা চেতনা যার অভাব ঘটলে শিখন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।