প্রেষণা কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Motivation’, যার উৎপত্তি ল্যাটিন ‘Moveer’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘To move (সচল প্রক্রিয়া)। প্রেষণা হল এমন এক অভ্যন্তরীণ শক্তি যার মূলে রয়েছে স্বাধীন ব্যক্তিচিন্তা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক শক্তি, উদ্যমকে জাগরিত করতে প্রেষণার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণার ভূমিকাগুলি নিম্নে আলােচনা করা হল一


(1) আগ্রহ সৃষ্টি: যে-কোনাে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বা মনােযোেগ অতি গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণা সৃষ্টির মাধ্যমে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।


(2) উদ্যম সৃষ্টি: প্রেষণা কোনাে ব্যক্তির মধ্যে উদ্যম সৃষ্টি করে। এই উদ্যম হল অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। উপযুক্ত উদ্যমের প্রয়ােগে শিক্ষার্থীরা শিখনে উদ্বুদ্ধ হয়।


(3) কর্মসম্পাদন: প্রেষণা যে-কোনাে কাজে উদ্বুদ্ধ করে, যে কারণে ব্যক্তি অনেক কাজ অনেক জটিল সমস্যা অন্যের সাহায্য ছাড়াই সমাধান করতে পারে। প্রেষণার দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে শিক্ষার্থীতার। কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে উপনীত হবে।


(4) ব্যক্তিত্ব গঠন: প্রেষণা শিক্ষার্থীর শিখনের ইচ্ছাকে বজায় রেখে তাকে বিভিন্ন কর্মসম্পাদনে সাহায্য করে এবং ব্যক্তিত্ব গঠন করে, যাতে সে সুনাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

(5) আচরণের লক্ষ্য নির্ণয়: প্রেষণা যেমন ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর শিখনে উদ্বুদ্ধ করে, ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীর আচরণের গতিপথও নির্ণয় করে।


(6) কৌতূহল সৃষ্টি: যে-কোনাে বিষয় সম্পর্কে শিখনের আগে সেই বিষয় সম্পর্কে ইচ্ছা বা কৌতূহল সৃষ্টি হওয়া দরকার যা প্রেষণার  দ্বারাই সৃষ্টি হতে পারে।


(7) সৃজনশীলতা: শিক্ষার্থীর মধ্যে সৃজনশক্তির বিকাশ ঘটায় প্রেষণা। এর ফলে তারা স্বাধীনভাবে কল্পনা করতে পারে।


(8) শিক্ষক-শিক্ষিকার ভুমিকা: প্রেষণা সৃষ্টিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা নিম্নলিখিত一

  • প্রশংসা: শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রশংসা প্রেষণার ন্যায় কাজ করায়। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশােনার আগ্রহ দেখা দেয়।
  • উচ্চাকাচ্চা: শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরিতে সাহায্য করবে যা শিখনে তাদের প্রেষণার সঞ্চার করবে।
  • কাজে সফলতা: কোনাে কাজে সফলতা শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তােলে যা প্রেষণা হিসেবে কাজ করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের কাজে সফলতা আসে। 
  • প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতা:  শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হলে তা একে অপরের মধ্যে প্রেষণা তৈরি করে।
  • পুরস্কার: শিক্ষার্থীদের ভালাে কাজের জন্য, পরীক্ষায় ভালাে ফলাফলের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকা পুরস্কার প্রদান করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রেষণার সঞ্চার ঘটে, যা শিখনে সহায়তা করে। 

(9) জীবনের আদর্শ ও মূল্যবােধ গঠন: প্রেষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে  আদর্শবােধ ও মূল্যবােধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। প্রেষণার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন সম্ভব হয়।



এরূপে প্রেষণা শিক্ষার্থীদের শিখনে সাহায্য করে, আত্মবিশ্বাস ও বাড়িয়ে তােলে। তা ছাড়া এই প্রেষণা সৃষ্টিতে পরিবেশ ও সমাজের প্রভাবও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।