আইয়াপ্পা পানিকরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কুরুক্ষেত্রম’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে এবং এই কাব্যগ্রন্থেই তিনি আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটান মালয়ালম্ সাহিত্যে। পানিকরের আগে মালয়ালম কবিতার প্রধান ঝোঁক ছিল রােমান্টিকতার দিকে এবং এই ধারার শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন ভাল্লাথােল। বাংলা সাহিত্যের মতাে মালয়াল সাহিত্যের ক্ষেত্রেও আধুনিক কাব্য আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে টি. এস. এলিয়টের প্রভাবে। আইয়াপ্পা পানিকর ‘মালয়ালম্ সাহিত্যের টি. এস. এলিয়ট’ নামেও খ্যাত ছিলেন। পানিকরের ‘দিন ও রাত্রি’ কাব্যসংকলনটির প্রধান সুর সংগীতময় ধ্রপদি দার্শনিক চিন্তা—কখনও অস্তিত্বকেন্দ্রিক বেদনা ও আধুনিক মানুষের উদ্ভ্রান্তি, কখনও পৌরাণিক চরিতকথার নব উচ্চারণ; ‘গােপিনীদের গান’-এর উদাহরণ। কিন্তু আমাদের আলােচ্য ‘শিক্ষার সার্কাস’ যেন সব অর্থেই এই কাব্যসংকলনের একটি ব্যতিক্রমী কবিতা।
লক্ষণীয় যে, শিক্ষার সার্কাস’ তার কার্টুন কবিতাগুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ বক্তব্যের বিস্তারে, শ্লেষে, শব্দ ও বাক্য ব্যবহারের ধরনে এবং কৃপণতায় ‘শিক্ষার সার্কাস’ কার্টুন গােত্রেরই কবিতা। মামুলি কিছু শব্দ আর ইমেজারি তৈরি করতে করতেই কবি পৌছে গেছেন তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই যে ‘জ্ঞান অবহেলিত, শুধুমাত্র তথ্যের চাপ আর ডিগ্রি সর্বস্বতাই যার একমাত্র লক্ষ্য, তার বিরুদ্ধে লিখে গেছেন বহু শিক্ষাবিদ তাদের বড়াে বড়াে প্রবন্ধে এবং গ্রন্থে। কিন্তু এত সংক্ষিপ্ত আকারে, এত সাধারণ চলনে মাত্র ষােলাে পঙক্তিতে যে একই কথা বলা যায়, আইয়াপ্পা পানিকরের ‘শিক্ষার সার্কাস তার একটি উত্তম উদাহরণ।
আইয়াপ্পা পানিকরের ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটি চারটি স্তবকে বিভক্ত। কবিতাটির পঙক্তি সংখ্যা ষােলাে। প্রথম স্তবকে ছয়টি পঙক্তি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকে তিনটি করে এবং শেষ স্তবকে চারটি পঙক্তিতে সমগ্র কবিতাটি নির্মিত। গদ্যের কাঠামাের ওপর কবিতাটি রচিত এবং স্বাভাবিকভাবেই তা অন্ত্যমিল বর্জিত।
প্রথম স্তবকে শিক্ষাব্যবস্থায় এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে চলার যে কথা আছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তবকে তারই সম্প্রসারণ ঘটেছে। চতুর্থ স্তবকে ঘটেছে নাটকীয় বিস্তার এবং কবিতার মূল বক্তব্যেও উচ্চরিত হয়েছে—
“জ্ঞান কোথায় গেল?
সে যেখানে গেছে, সেটা ধোকা।”
এক ধরনের তীব্র শ্লেষ প্রকাশিত হয় কবিতার একেবারে শেষ পর্বে এসে। শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতাকে ফুটিয়ে তােলার জন্যই প্রথম তিনটি স্তবক জুড়ে একটি আদলকেই বারবার ব্যবহার করেছেন কবি।
একই ধরনের বাক্য বারবার ব্যবহার করা বা সমান্তরালতা পানিকরের কবিতার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শিক্ষার হেরফের’ রচনায় লিখেছিলেন—“আমরা বাল্য হইতে কৈশাের এবং কৈশাের হইতে যৌবনে প্রবেশ করি কেবল কতকগুলাে কথার বােঝা টানিয়া। সরস্বতীর সাম্রাজ্যে কেবলমাত্র মজুরি করিয়া মরিচ পৃষ্ঠের মেরুদণ্ড বাঁকিয়া যায় এবং মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ হয় না।” আইয়াপ্পা পানিকর তাঁর ‘শিক্ষার সার্কাস কবিতায় শিক্ষাব্যবস্থার এই অন্তঃসারশূন্যতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। আমাদের প্রচলিত পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে উত্তরণের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পায়। এমনকি বৃহত্তর জীবনেও এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। মানুষ তার ব্যক্তিগত সাফল্যের চূড়ান্ত নিরিখ খুঁজে পায় এই পরীক্ষায় সাফল্যের মধ্যেই। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা হল জ্ঞানের সমৃদ্ধি। কিন্তু বিস্ময়কর হল, আমাদের দেশের বর্তমান ব্যবস্থায় শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞান সম্পূর্ণ সংযােগহীন হয়ে উঠেছে। শ্রেণিগত উত্তরণ আর পরীক্ষার শৃঙ্খলে বাঁধা এই শিক্ষা যেন শুধুমাত্র সার্কাসের সঙ্গেই তুলনীয়। স্কুল কলেজে প্রদত্ত এই বাঁধাধরা শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাই কখনােই সুশিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযােগ পায় না। এই ধরনের শিক্ষায় তাদের মনের কোনােরূপ সন্তোষ বিধান না হওয়ায় কালক্রমে একটি গােটা জাতিরই জীবনীশক্তি হ্রাস পেয়ে যায়। শিক্ষার্থী তথা জাতির এই মানসিক অপমৃত্যু সম্বন্ধে সবাইকে সজাগ করে দিতেই পানিকর এই কবিতাটি রচনা করেছেন।
আইয়াপ্পা পানিকর শিক্ষাক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আদর্শের তীব্র বিরােধিতা করেছেন তার বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং লেখায়। তাঁর সেই আদর্শের সুর ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাতে বেশ স্পষ্টরূপে শােনা যায়। আমাদের দেশে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষার মূল কথাই ছিল চাকুরে তৈরি করা এবং তার জন্য যে-কোনাে প্রকারেই পরীক্ষায় পাস করা। এর জন্য এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে উত্তরণই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে। শিক্ষা এইভাবে শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের বদলে যেভাবে শুধুই পরীক্ষা পাসের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, তাকেই তীব্র ভাষায় ব্যঙ্গ করেছেন কবি আইয়াপ্পা পানিকর তাঁর শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায়। যেভাবে সার্কাসে ট্রাপিজের খেলায় একটা দড়ি ছেড়ে আর একটা দড়ি ধরে কুশলী খেলােয়াড়—ঠিক সেভাবেই এক শ্রেণি থেকে আর-এক শ্রেণিতে ওঠার মধ্যেই শিক্ষার সার্থকতা খোঁজে এদেশের শিক্ষার্থীরা। তাই শিক্ষা কবির কাছে সার্কাস বলে মনে হয়েছে, যার সাহায্যে শুধুই পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যায়। শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞানের সংযােগহীনতার কারণে পাণ্ডিত্য, উদ্ভাবনীশক্তি বা ধারণাশক্তি—কোনােটারই যথাযথ বিকাশ ঘটে না। এর ফলে ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী তথা একটি সমগ্র জাতির মানসিক অপমৃত্যু। সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে তাই কবির ধোঁকা বলে মনে হয়েছে। এইভাবে গদ্যকবিতার ঋজু লেখনভঙ্গির সাহায্যে কবি সমাজসংকটের গভীরে আলাে ফেলতে চেয়েছেন।
“আমি তার মাথায় চড়ি” -কে কার মাথায় চড়ে? পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
“সে অনেক পরের কথা” -বক্তার কোন্ বিষয়কে কেন অনেক পরের কথা বলা হয়েছে?
“ফুল কি হবেই তাতে”—কোন্ ফুলের কথা এখানে বলা হয়েছে? এই সংশয়ের কারণ কী?
“মাঝে মাঝে চলেও না দিন”—দিন চলে না কেন? এর ফল কী হয়?
নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।
শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের জীবনযন্ত্রণা ‘নুন কবিতায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
“আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক” -কেন কার কাছে এই দাবি করেছে?
“সব দিন হয় না বাজার” -বাজার হয় না কেন? হলে কী কী বাজার হয়?
“সে অনেক পরের কথা”—কোন্ কথা? উক্তিটির মর্মার্থ লেখাে।
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে প্রতীকের ব্যবহার যেভাবে ঘটেছে তা সমগ্র গল্প অবলম্বনে আলােচনা করাে।
কে, কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে প্রথম দেখেছিল?
“পড়ে-থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।” -তাদের হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার কারণ কী?
বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে দেখে বিভিন্ন জনের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখাে।
পাদরি গােনসাগা ডানাওয়ালা বুড়ােটিকে কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেছিলেন তা বিশ্লেষণ করাে।
“শেষটায় তার মাথায় ফন্দিটা খেলে গেলাে” -ফন্দিটা সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করাে।
“এই দেবদূতই ছিল একমাত্র যে তার নিজের এই হুলুস্থুল নাট্যে কোনােই ভূমিকা নেয়নি।” -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করাে।
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে মাকড়সায় রূপান্তরিত হওয়া মেয়ের চরিত্রটি কোন প্রয়ােজন সিদ্ধ করেছে?
মাকড়সা হয়ে যাওয়া মেয়েটি থুরথুরে ডানাওয়ালা বুড়ােকে কতটা প্রভাবিত করেছিল আলােচনা করাে।
“বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনােই কারণ ছিল না।” -এই বিলাপ করার কারণ ছিল না কেন?
মানুষের কৌতূহল কমে যাওয়ার পরে ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে যেভাবে গল্পে পাওয়া যায় তা আলােচনা করাে।
“এলিসেন্দা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে-” এলিসেন্দা কী দেখেছিল? এলিসেন্দা কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল? সে কেমনভাবে উড়ে যাচ্ছিল? এলিসেন্দা কেন তাকিয়ে তাকে দেখতে থাকে?
“…সে তাে আর তখন তার জীবনের কোনাে উৎপাত বা জ্বালাতন নয়, বরং সমুদ্রের দিকচক্রবালে নিছকই কাল্পনিক একটা ফুটকিই যেন।” -উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটিকে কাল্পনিক একটা ফুটকির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন?
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে ডানাওয়ালা বুড়াের আবির্ভাব ও মিলিয়ে যাওয়ার কাহিনি বিবৃত করাে।
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো’ গল্পে পাদরি গােনসাগার চরিত্রটি আলােচনা করাে।
‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে জাদু বাস্তবতা (magic realism)-র যে ব্যবহার লক্ষ করা যায় তা নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।
ছােটোগল্প হিসেবে ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পের সার্থকতা আলােচনা করাে।
“পড়ে থাকা শরীরটার দিকে তাকিয়ে তারা কেমন হতভম্ব হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল” -কারা ‘চুপচাপ’ দাঁড়িয়ে রইল? পড়ে থাকা শরীরটার’ বিবরণ তােমার নিজের ভাষায় লেখাে।
Leave a comment