সমাজব্যবস্থা গড়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই মানুষ তার প্রয়ােজনেই সমাজ সৃষ্টি করেছে। সমাজ চায় তার কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে, তার উন্নতি ঘটাতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তাকে সঞ্চালিত করতে। এ সবই সামাজিক বিকাশের অন্তর্গত। আর এই কাজটি তখনই সম্ভব যখ সমস্ত ব্যক্তিমানুষের মধ্যে একটা সামাজিক চেতনা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়। আর এই জন্যই সমাজ তার শিক্ষাব্যবস্থার সাহায্য গ্রহণ করে।

[1] শিক্ষাবিদদের মতামত : যেসব সমাজতত্ত্ববিদ এবং শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক বিকাশের ওপর অধিক গুরুত্ব দেন, তারা শিক্ষাকে সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়া, সমাজ নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া, সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, সমাজ প্রগতির প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং বিদ্যালয়কে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলে মনে করেছেন।

[2] সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব : সামাজিক বিকাশ ব্যক্তিকে তার সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তােলে এবং সমাজের একজন সক্রিয় সদস্য হতে সাহায্য করে। সামাজিক বিকাশ ব্যক্তির সামাজিক মূল্যায়নেও সহায়তা করে।

[3] সামাজিক বিকাশে শিক্ষার অবদান : সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সামাজিক বিকাশে শিক্ষার উল্লেখযােগ্য কয়েকটি অবদান হল—

  • সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা।

  • সামাজিক সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং তার সমাধানের ব্যবস্থা করা।

  • ব্যক্তির সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটানাে।

  • ব্যক্তিকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা।

  • উত্তরাধিকার সূত্রে সমাজ-সংস্কৃতি গ্রহণ, সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং তাকে পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চালন করা।

সামাজিক বিকাশ শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য—এ কথা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয়, এই লক্ষ্যের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন—এই লক্ষ্যে ব্যক্তির ওপরে সমাজকে রাখা হয়েছে। ব্যক্তির প্রবণতা, আগ্রহ, প্রেষণা ইত্যাদির প্রতি প্রয়ােজনীয় গুরুত্ব আরােপ করা হয়নি। এটি মনােবিজ্ঞানসম্মত নয়। তা ছাড়া শিক্ষা যদি গতানুগতিক সামাজিক আদর্শ ও মূল্যবােধ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয় তাহলে সৃজনশীলতার বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।