শিক্ষা একটি পরিকল্পিত কর্মসূচি। লক্ষ্যই শিক্ষার মধ্যে গতি আনে৷ যেসব কারণে শিক্ষার লক্ষ্যসমূহের প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে, তা হল—
-
শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের প্রেষণা বৃদ্ধি করে।
-
এটি শিক্ষা-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টাকে অর্থবহ করে তােলে।
-
শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়নে শিক্ষার লক্ষ্যই সাহায্য করে।
-
শিক্ষায় মূল্যায়নের ভিত্তি তৈরি হয়।
-
শিক্ষার লক্ষ্য শিক্ষামূলক কর্মসম্পাদনের পথ নির্দেশ করে, সময় ও শ্রম সাশ্রয় করে।
-
এটি শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক সক্রিয়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
-
শিক্ষার লক্ষ্যগুলি শিক্ষা প্রক্রিয়ার নিরবচ্ছিন্নতা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
-
বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতেও সাহায্য করে।
-
বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার লক্ষ্য পর্যালােচনা করে সেই সময়ের দেশের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
শিক্ষার্থী কী শিখবে এবং কেন শিখবে অথবা শিক্ষক কী শেখাবেন—এই প্রত্যেকটি বিষয়ই শিক্ষার লক্ষ্যের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার লক্ষ্য প্রতিটি মানুষের জীবন বিকাশের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য।
শিক্ষা একটি সচেতন গতিশীল সামাজিক প্রক্রিয়া। শিক্ষার ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের প্রধান কারণসমূহ নীচে আলােচনা করা হল—
[1] সমাজ ও জাতির চাহিদার পরিবর্তন : সমাজ এবং জাতির চাহিদা ও আশা-প্রত্যাশা শিক্ষার মধ্য দিয়েই প্রতিফলিত হয়।
[2] ব্যক্তির চাহিদার পরিবর্তন : শিক্ষার লক্ষ্য হল ব্যক্তির চাহিদাপূরণ সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ব্যক্তি শিক্ষার্থীর চাহিদার পরিবর্তন ঘটে যায়, ফলে শিক্ষার লক্ষ্যেরও পরিবর্তন ঘটে।
[3] জ্ঞানের প্রসার : আমাদের চারিপাশে প্রতিনিয়ত জ্ঞানের প্রসার ঘটে চলেছে। তাই বলা যায়, জ্ঞানের প্রসারের সঙ্গে সামগঞ্জস্যবিধান করে শিক্ষার লক্ষ্যও পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়ােজন।
[4] শিক্ষাবিজ্ঞান সম্পর্কে নতুন তথ্য : বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে শিক্ষা বিষয়ে অবিরাম গবেষণা চলছে। এই গবেষণা থেকে পাওয়া তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার লক্ষ্যে পরিবর্তন সাধন আধুনিক শিক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যরূপে বিবেচিত হয়।
[5] পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক আদর্শ : রাজনৈতিক মতাদর্শ শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শের পরিবর্তন শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।
ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিবর্তন, জ্ঞানের বিস্ফোরণ, শিক্ষা-গবেষণা, রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রভৃতি কারণে শিক্ষার লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটে এবং শিক্ষা প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী ও কার্যকরী হয়ে ওঠে।
Leave a comment