অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক কর্মকেন্দ্রগুলি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ভূমিকা পালন করে থাকে। এগুলি হল一

(১) বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা প্রদান: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক কর্মকেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শিক্ষার্থীকে জীবনের উপযােগী এবং বাস্তবধর্মী অভিজ্ঞতা লাভের সুযােগ করে দেওয়া। এই সমস্ত কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে বাড়িয়ে তােলে।

(২) সামাজিক বোধ সৃষ্টি: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক কর্মকেন্দ্রগুলিতে বহু মানুষের সংস্পর্শে আসার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকতার বােধ গড়ে ওঠে।

(৩) দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলি ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিশেষ কাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

(৪) পরিচালনসংক্রান্ত অভিজ্ঞতা দান: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক। কেন্দ্রগুলি ব্যক্তিকে পরিচালন (Management)-সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

(৫) মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা: উৎপাদনমূলক এবং অর্থনৈতিক সংস্থাগুলি আমাদের দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

(৬) আন্তর্জাতিক বােঝাপড়ায় সহায়তা: এই ধরনের সংস্থাগুলি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যােগাযােগের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক বােঝাপড়ার তাৎপর্য উপলব্ধিতে সাহায্য করে।

(৭) জাতীয় সংহতি রক্ষায় সহায়তা: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক সংস্থাগুলিতে বিভিন্ন ভাষার ও ধর্মের মানুষ কাজ করে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বৈসাদৃশ্য থাকলেও একসঙ্গে কাজ করার ফলে তাদের মধ্যে একটি সংহতি লক্ষ করা যায়।

(৮) সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা: উৎপাদনমূলক ও অর্থনৈতিক সংস্থা ব্যক্তির সাংস্কৃতিক বিকাশে সাহায্য করে।

ধর্মীয় সংস্থাগুলি অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এগুলি প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নীচে এদের কয়েকটি ভূমিকা সম্পর্কে আলােচনা করা হল

(১) সামাজিক সংস্কৃতির বিকাশ: ধর্মীয় সংস্থাগুলি মানুষকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক কৃষ্টির সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করে। ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে।

(২) মূল্যবোধের বিকাশ: ধর্মীয় সংস্থাগুলি নানান কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তু জনগণের সামনে ব্যাখ্যা করে। এর ফলে সাধারণ মানুষ ওই সমস্ত আদর্শ অনুসরণ করে এবং মানুষের মধ্যে আদর্শ ও মূল্যবােধের বিকাশে সহায়তা করে।

(৩) সৌন্দর্যবােধের বিকাশ: ধর্মীয় সংস্থায় নানা ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও পরিচালনার মাধ্যমে ব্যক্তির সৌন্দর্যবােধের বিকাশ ঘটে।

(৪) নৈতিক বিকাশ: ধর্মীয় সংস্থাগুলি মানুষের নৈতিক মান উন্নত করে শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছােতে সাহায্য করে।

(৫) আচরণের উন্নয়ন: ধর্মীয় সংস্থাগুলি ব্যক্তির আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

(৬) সামাজিক বিকাশ ও জনশিক্ষার সুযোগ: ধর্মীয় সংস্থার বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচির মাধ্যমে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযােগ পায় এবং তাদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান ঘটে। ফলে মানুষের মধ্যে সামাজিক বিকাশ ঘটে এবং অনেকে এর মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পায়।

(৭) শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ: ধর্মীয় সংস্থাগুলি নিজ নিজ ধর্মানুযায়ী অত্যন্ত নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে আচার-অনুষ্ঠান, পূজা-অর্চনা এবং বিশেষ বিশেষ দিনগুলি পালন করে। এইভাবে তাদের মধ্যে শৃঙ্খলাবােধের বিকাশ ঘটে।

(৮) সেবামূলক কাজ: অধিকাংশ ধর্মীয় সংস্থা শিক্ষামূলক এবং সেবামূলক কাজ করে, যেমন রামকৃয় মিশন, রামকৃয় মঠ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, আল-আমিন মিশন প্রভৃতি।