গণতান্ত্রিক সচেতনতা বিকাশে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখে। এই গুপগুলি তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশে সাহায্য করে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গতানুগতিক বিদ্যালয়-জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এগুলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্দীপনামূলক ক্রিয়াশীলতা আনে। তারা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে উদ্যোগী হয় এবং এই সক্রিয়তা বিদ্যালয়-পরবর্তী জীবনেও সঞ্চালিত হয়।
বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি, যেমন— সাহিত্য, শিল্পকলা, গানবাজনা ও অন্যান্য নান্দনিক ক্রিয়াকলাপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সঠিক মাত্রায় অনুভূতিশীল হয়ে উঠতে শেখে।
শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনে সহায়তা করা। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিলে তাদের মধ্যে নৈতিকতা ও বিভিন্ন ধরনের বাঞ্ছিত মূল্যবােধ গড়ে ওঠে, যা তাদের চারিত্রিক বিকাশের পক্ষে সহায়ক।
বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলাে, যেমন- ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, ক্রিকেট, খাে খাে, হকি, যােগব্যায়াম, পিটি, লংজাম্প, হাইজাম্প, দৌড় প্রভৃতির দ্বারা শরীরচর্চা হয়ে থাকে।
যেসব পরিকল্পিত কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে বলে নির্দিষ্ট করা হয়, তাদের শিক্ষামূলক কার্যাবলি বলে।
শিক্ষামূলক কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠন, বিদ্যালয়ের বাৎসরিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, বিতর্কসভা, আলােচনাচক্ৰ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ ইত্যাদি।
শিক্ষামূলক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাঞ্ছিত আচরণের বিকাশ ঘটে, যা তাদের জীবনে চলার পথে সহায়তা করে।
যেসব পরিকল্পিত কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে তাদের সাংস্কৃতিক কার্যাবলি বলে।
বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল বিদ্যালয়ের বার্ষিক সামাজিক অনুষ্ঠান, পুরস্কার বিতরণী সভা, মহাপুরুষদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন, বিভিন্ন ধরনের চিত্রকলা প্রদর্শনী, বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিদ্যালয় সংরক্ষণশালা সংগঠন, নাট্য উৎসব ইত্যাদি।
এই কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করে, তাদের মধ্যে সৌজন্য ও বিনয়ভাব আনে এবং তাদের সংস্কৃতিমনস্ক হতে সাহায্য করে।
যেসব কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী নিজেকে প্রকাশ করার সুযােগ পায় তাদের আত্মপ্রকাশনামূলক কার্যাবলি বলে।
আত্মপ্রকাশনামূলক কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে- শিক্ষামূলক ভ্রমণ, প্রকৃতি পরিচয়মূলক কার্যাবলি, পর্বত আরােহণ, বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্প (NCC, NSS), সমাজসেবা, ব্রতচারী, বৃক্ষরােপণ উৎসব পালন, বিদ্যালয়ের বাগান তৈরি, পত্রিকা প্রকাশনা ইত্যাদি।
আত্মপ্রকাশনামূলক কার্যাবলি শিক্ষার্থীকে মানসিক তৃপ্তি দেয় ও মানসিক জটিলতা হ্রাস করে, যা সার্থক অভিযােজন শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে।
যেসব পরিকল্পিত কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতার ভাব উৎসাহিত হয় তাদের সহযােগিতামূলক কার্যাবলি বলে।
স্কাউটিং, ব্রতচারী, সেবামূলক কাজ, বিভিন্ন যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পগুলিতে অংশ নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্কূর্তভাবেই পারস্পরিক সহযােগিতার মনােভাব গড়ে ওঠে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হয়।
সামাজিক চেতনাসহ সামাজিক বৈশিষ্ট্য বিকাশে সহায়ক পরিকল্পিত কাজগুলিকেই সামাজিক কার্যাবলি বলে।
সামাজিক কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—রক্তদান শিবির পরিচালনা, সাক্ষরতা কর্মসূচির বাস্তবায়ন, পরিবেশ সচেতনতা কর্মসূচি, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্যাপন ইত্যাদি। এ ছাড়া বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ত্রাণকার্য ইত্যাদিও সামাজিক কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত।
যেসব সংগঠিত কাজ শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে তাদের প্রাক্ষোভিক বিকাশমূলক কার্যাবলি বলে, যেমন—সংগীত, সাহিত্যচর্চা, নৃত্যানুষ্ঠান, অভিনয় প্রভৃতি।
শিক্ষার্থীরা এইসব কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ করার সুযােগ পায়, প্রাক্ষোভিক বিকাশ ঘটে এবং রুদ্ধ আবেগ মুক্ত হয়ে প্রাক্ষোভিক ভারাসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বিদ্যালয়ের যেসব সহপাঠক্রমিক কাজের সংগঠনে এবং পরিচালনায় শিক্ষার্থীরাই থাকে তাদের স্বায়ত্তশাসনমূলক কার্যাবলি বলে।
বিদ্যালয়ে প্রচলিত বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসনমূলক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশে সহায়তা করে এবং নেতৃত্বদানের গুণগুলির বিকাশ ঘটায়। বিদ্যালয় সমবায় সমিতি, হােস্টেল পরিচালনা প্রভৃতি স্বায়ত্তশাসনমূলক কার্যাবলির উদাহরণ।
বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে যেসব কাজ শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকাশে সাহায্য করে, তাদের সৃজনশীল কার্যাবলি বলে। যেমন-অভিনয়, আবৃত্তি, গানবাজনা, অঙ্কন, নৃত্য, বিতর্ক, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, সেমিনার, বিজ্ঞান প্রদর্শনী ইত্যাদি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ছাড়াও নান্দনিক রুচি এবং মূল্যবােধের বিকাশ ঘটে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর চাহিদার পরিতৃপ্তিতে বিশেষ সাহায্য করে। শিশু জন্মের পর থেকেই পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নেয়। ওই সময় তার মধ্যে বিভিন্ন চাহিদার সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীর চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্দিষ্ট করা হয়। সেই সহপাঠক্রমিক কাজগুলি সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তার চাহিদাও পূরণ হয়।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির যথাযথ সংগঠনের ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহযােগিতা, সমবেদনা, ভ্রাতৃত্ববােধ, পারস্পরিক বােঝাপড়া প্রভৃতি গুণের বিকাশ ঘটে, যা প্রতিটি সমাজের পক্ষে বিশেষ প্রয়ােজনীয়। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে, এই গুণগুলির বিকাশ অপরিহার্য।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তােলার ক্ষেত্রে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় শিক্ষার্থী যে বিষয়ে পটু সেই বিষয়গুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযােগ পায়। নিজের দক্ষতা যাচাই করে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যৎ জীবনে তাকে সাহায্য করে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়-জীবনের গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি দেয়। তত্ত্বগত এবং বাঁধাধরা পাঠক্রমের মাঝে কিছু বৈচিত্র্য আসে। এর ফলে একঘেয়েমি কেটে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তারা পড়াশােনায় মনােযােগী হয়। বিদ্যালয় তাদের কাছে একটা আনন্দনিকেতন হয়ে ওঠে।
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে অনেক সময় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীরা এই কার্যাবলির দ্বারা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযােগ পায়। কোনাে কোনাে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ বৃত্তিজীবন এই জায়গা থেকেই শুরু হয়। এই দিক থেকে বিচার করলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব অপরিসীম।
বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কাজের ব্যবস্থা করা হয়। সেইসব কাজের সবকটি সব ছাত্রছাত্রীর কাছে গ্রহণযােগ্য এবং প্রবণতা অনুযায়ী যথাযথ বলে গণ্য হয় না | শিক্ষার্থীকে তার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি নির্বাচনের সুযােগ দেওয়া উচিত। তবেই শিক্ষার্থী সেগুলিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। আর তার ফলেই তার সার্বিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে।
বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অনুশীলন শিক্ষক- শিক্ষার্থীর সম্পর্ককে অনেক বেশি প্রাণবন্ত করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হয় যা অনেক সময় পাঠক্রমিক কাজে সম্ভব হয় না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যত মধুর হয়, শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণ আরও সার্থক ও কার্যকরী হয়ে ওঠে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি যেহেতু শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশে সহায়ক, তাই তাকে বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যেই স্থান দিতে হবে, অর্থাৎ বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের কাজ চলাকালীন কোনাে একটি সময়ে সেটির অনুশীলন করাতে হবে। বিদ্যালয়ের সময়সূচির বাইরে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠিত করলে তার গুরুত্ব কমে যাবে। ফলে তার প্রকৃত উদ্দেশ্যও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি শিক্ষার্থীর ক্ষমতা ও পছন্দ অনুযায়ী হবে। সব শিক্ষার্থীর জন্য সব রকমের সহপাঠক্রমিক কাজ বাধ্যতামূলক করা ঠিক নয়। যেমন, শারীরিক দিক থেকে দুর্বল শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পরিশ্রমের কোনাে কাজ দেওয়া ঠিক নয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েই সহপাঠক্রমিক কাজ করা উচিত। বিদ্যালয়ের ব্যতিত বাইরের অন্য কোনাে ব্যক্তি যেন তাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে সে-বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লক্ষ রাখতে হবে।
পাঠক্রমিক কাজগুলির মতােই সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির সাফল্যও নির্ভর করে শিক্ষকের যােগ্যতার ওপর। কেবলমাত্র যােগ্য ও পারদর্শী শিক্ষকশিক্ষিকাকে নির্দিষ্ট কাজের ভার দিতে হবে। যেসব শিক্ষকশিক্ষিকা উক্ত সহপাঠক্রমিক কাজে আগ্রহী নন বা যাঁরা নিজেরা সেই বিষয়ে কোনােরকম প্রশিক্ষণ নেননি, তাঁদের জোর করে ওই দায়িত্ব দিলে এই শিক্ষার উদ্দেশ্য বিফল হবে।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা রেকর্ড কার্ডের ব্যবস্থা করতে হয়। ওইসব রেকর্ড কার্ড থেকে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বা পারদর্শিতার মূল্যায়ন করা হবে। শুধু তাই নয়, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিরও মূল্যায়ন করা হবে। মূল্যায়নের ভিত্তিতে স্থির করা হবে কোন্ কাজটি রাখা হবে, কোন কাজটি পরিবর্তন করতে হবে আর কোন কাজটি বাতিল করা হবে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মূল্যায়ন অভ্যন্তরীণ হওয়া উচিত। অনেকক্ষেত্রে অবশ্য বহির্মূল্যায়ন করা হয়।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোঠারি কমিশনে বলা হয়েছে যে, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির দ্বারা-
-
শিক্ষার্থীর দৈহিক বিকাশ সুনিশ্চিত করা যায়,
-
শিক্ষার্থীর মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তােলা যায়,
-
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা যায়,
-
শিক্ষার্থীদের সহজে পরিবেশের উদ্দীপনা গ্রহণের উপযােগী করে তােলা যায়।
বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ®
-
শরীরচর্চামূলক সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি,
-
বিশেষ ধরনের শিক্ষামূলক সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি,
-
সামাজিক ও সেবামূলক সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি এবং
-
নান্দনিক সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি
যেসব কাজ শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশ-সহ অন্যান্য বিকাশে সাহায্য করে সেইসব কাজকে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি বলে।
পাঁচটি সহপাঠক্রমিক কাজের উদাহরণ হল-
-
শিক্ষামূলক ভ্রমণ,
-
বিজ্ঞান প্রদর্শনী,
-
বৃক্ষরােপণ উৎসব,
-
স্বাধীনতাদিবস পালন এবং
-
বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযােগিতা।
শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়ক দুটি সহপাঠক্রমিক কাজ হল-
-
কুইজ, বিতর্কসভা, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ,
-
বিদ্যালয় পত্রিকা, দেয়ালপত্রিকা ইত্যাদির প্রকাশনা।
দুই প্রকার সহপাঠক্রমিক কাজ হল-
-
সাংস্কৃতিক কার্যাবলি, যেমন—নাটক মঞ্চস্থ করা, সংগীতানুষ্ঠানের আয়ােজন করা ইত্যাদি।
-
সমাজসেবামূলক কার্যাবলি, যেমন—নিরক্ষরতা দূরীকরণ, রক্তদান শিবিরের আয়ােজন, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি।
দুটি সৃজনাত্মক সহপাঠক্রমিক কাজ-
-
নান্দনিক সৃজনাত্মক কাজ। নাচ, গান, মৃৎশিল্প, খােদাই শিল্প ইত্যাদি এবং
-
বৌদ্ধিক সৃজনাত্মক কাজ: তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, বিতর্কসভা, সেমিনার ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির দুটি বৈশিষ্ট্য হল—
-
সকলের জন্য একই সহপাঠক্রমিক কাজ নির্দিষ্ট না করে, শিক্ষার্থীর আগ্রহ, ক্ষমতা, রুচিভেদে সহপাঠক্রমিক কাজের পার্থক্য করা হয়।
-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির শৃঙ্খলা স্বতঃস্ফূর্ত।
বিদ্যালয়ের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অসাফল্যের দুটি কারণ হল-
-
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রতি শিক্ষক ও অভিভাবকদের অবহেলা এবং
-
উপযুক্ত পরিকাঠামাের অভাব।
পরিবেশ হল কোনাে জীবের চারপাশে অবস্থিত সমস্ত সজীব ও জড় উপাদান দ্বারা গঠিত সামগ্রিক অবস্থা, যা জীবের জীবনকে প্রভাবিত করে।
পার্ক-এর মতে, “যে-কোনাে নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট স্থানে মানুষকে ঘিরে থাকা সামগ্রিক অবস্থাকে পরিবেশ বলে।”
প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত পরিবেশকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
মানুষ তার উদ্দেশ্যসাধনের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটিয়ে যে কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাকে মনুষ্যসৃষ্ট পরিবেশ বলে। যেমন—শস্যক্ষেত্র, নগর, শিল্পাঞ্চল ইত্যাদি।
আর্থসামাজিক পরিবেশ বলতে সমাজের সেই সকল রীতিনীতি ও ব্যবস্থাকে বােঝায় যেগুলি মানুষের বিভিন্ন গােষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের বিকাশ, বৃদ্ধি ও ঐতিহ্যকে প্রভাবিত করে। যেমন —সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক বিষয়সমূহ ইত্যাদি।
সংস্কৃতি হল মানুষের জ্ঞান, ধারণা, নীতি, রীতি, শিল্প, আইন, অভ্যাস প্রভৃতির সমষ্টি। মানুষের এই সংস্কৃতির দ্বারা সৃষ্ট সামাজিক পরিবেশকে সাংস্কৃতিক পরিবেশ বলে।
পরিবেশ বলতে পরস্পর ক্রিয়াশীল উপাদানগুলির মাধ্যমে পড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিক ও জীবমণ্ডলীয় প্রণালীকে বােঝায়, যার মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদানগুলি বেঁচে থাকে, বসবাস করে।
Leave a comment