একত্রে বসবাস করতে হলে প্রত্যেকের মধ্যে অভিন্নতাবােধ থাকতে হবে। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ইত্যাদি বিভিন্নতার সীমাকে অতিক্রম করে সংঘবদ্ধভাবে থাকতে হবে। শিক্ষা শিক্ষার্থীকে এমনভাবে গড়ে তােলে যার মাধ্যমে সমস্ত ভেদাভেদের প্রাচীর ভেঙে ঐক্যবদ্ধ সমাজের সৃষ্টি হয়।

একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা’ শব্দটি তাৎপর্যবাহী। শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল সমাজের অস্তিত্ব রক্ষা করা, স্থায়িত্ব বজায় রাখা, মানোন্নয়ন করা। তাই শিক্ষা দ্বারা এই উদ্দেশ্যপূরণ সম্ভব।

(১) শ্রদ্ধার মনোভাব: প্রত্যেক শিক্ষার্থী যথাযথ শিক্ষা লাভের মাধ্যমে শ্রদ্ধাশীল মনােভাব গঠন করতে পারে। তাই বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে এমনসব কর্মসূচির আয়ােজন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের মনে একের অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনােভাব গঠিত হয়।

(২) শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান : পরিবারের সকল সদস্য যেমন একসঙ্গে বাস করে তেমনি সমাজের প্রত্যেক মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে, সেই ব্যাপারে শিক্ষা সাহায্য করবে। হিংসা, হানাহানি ভুলে সহযােগিতাপূর্ণ পরিবেশে বাস করার মানসিকতা শিক্ষা তৈরি করবে। এ ছাড়া প্রেরণা ও শক্তি জোগাবে।

(৩) মানবিক গুণের বিকাশ : বিদ্যালয়ে পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমানুভূতি, সহানুভূতি, ধৈর্য, ত্যাগ মানিয়ে নেওয়ার গুণের বিকাশ ঘটবে।

(৪) দলগত কর্মের সুযােগ : বিদ্যালয়ে বিভিন্নরকম দলগত কাজের দ্বারা শিক্ষার্থী অন্যের মতামত গ্রহণ ও নিজের মতামত অন্যের মনে গ্রথিত করার সুযােগ পাবে। এই ভাবের বিনিময়ের দ্বারা শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ থাকার সুযােগ পাবে।

(৫) বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা : সমাজে অনেকসময় নানা সমস্যার উদ্ভব হয়, যুথবদ্ধভাবে থাকার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা তারা একত্রে সমাধান করতে পারে।

(৬) সমাজ সচেতনতা : পরিবেশ সংরক্ষণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রদান ইত্যাদি সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে হবে। সমাজের প্রত্যেক মানুষের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতার মনােভাব শিক্ষার্থীদের একত্রে বসবাসের শিক্ষাদান করতে পারবে।

(৭) আন্তর্জাতিকতাবাদ : বিশ্বযুদ্ধের মতাে আন্তর্জাতিক সংকট দূর করতে আন্তর্জাতিকতাবাদ জাগরিত করতে হবে। বিশ্বশান্তি, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববােধ, সামাজিকতা, শাস্তি, ন্যায়বিচার, সম-অধিকার বোধ ইত্যাদির বিকাশ শিক্ষার মাধ্যমে সম্ভব। এইভাবে আন্তর্জাতিকতাবােধ গড়ে তােলা সম্ভব।

(৮) ঐক্যবোধ : ভারতবর্ষে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য হল প্রধান আদর্শ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার-এই বােধ শিক্ষার দ্বারা জাগ্রত করতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, ভাষাগত পার্থক্য থাকলেও সকলের মধ্যে ঐক্যবােধ গড়ে তােলাই হল শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।