শিশুর সমস্যা যখন খুব গভীর হয়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিকার করা যাচ্ছে না, তখন পরামর্শদাতার প্রয়ােজন হয়। পরামর্শদাতা সমস্যার প্রকৃতি ও গভীরতা অনুধাবন করে এই সমস্যার সমাধান করেন।

(১) পরামর্শদানে সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন: পরামর্শদানে, পরামর্শদাতাকে কতকগুলি বিষয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক হতে হয়। যেমন—পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না। বিদ্যালয় এবং গৃহ পরিবেশের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ শিশুর আচরণগত সমস্যার জন্য যে পরিবেশ দায়ী, সেই পরিবেশের পরিবর্তন সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে যাতে ওই পরিবেশে একই সমস্যামূলক আচরণ না করে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়ােজন।

(২) তথ্যসংগ্রহ : যখন অভিভাবক বা শিক্ষক পরামর্শদাতার সহযোগিতা গ্রহণ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন তখন পরামর্শদাতা। শিক্ষার্থীর সমস্যা সম্পর্কে জানার জন্য তথ্য সংগ্রহ করেন। পিতা-মাতা, স্কুলের শিক্ষক এবং অন্যান্য সহপাঠীদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহের পর সমস্যার গভীরতা যাচাই করে তিনি স্থির করবেন যে, তার প্রয়ােজন আছে কি না অর্থাৎ কোনাে সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি না।

(৩) বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ : প্রাথমিকভাবে অভিভাবক এবং শিক্ষক থেকে তথ্য সংগ্রহের পর পরামর্শদাতা বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন। যেমন— অভীক্ষা, বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা, সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ। এই পদ্ধতিগুলো নানাবিধ তথ্য সংগ্রহে সাহায্য করবে।

(৪) তথ্যগুলিকে বিশ্লেষণ : এরপর পরামর্শদাতা তথ্যগুলির বিচার বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যা, দুর্বলতা, পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজন ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে একটি চিত্র তুলে ধরেন।

(৫) পরামর্শদাতার সুপারিশ : শিক্ষার্থী সম্পর্কিত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরামর্শদাতা অভিভাবক এবং শিক্ষকের সঙ্গে আলােচনা। করেন শিক্ষার্থীর সমস্যার কারণ, কীভাবে তার প্রতিকার সম্ভব এবং প্রতিকার না হলে ভবিষ্যতে কী ফল হতে পারে ইত্যাদি সম্পর্কে। সন্তানের প্রতি অভিভাবকের ব্যবহার, দায়িত্ব-কর্তব্য কীরূপ হবে, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়।

(৬) শিক্ষক ও পরামর্শদাতার যৌথ ভূমিকা : শিক্ষার্থীর সমস্যা নিয়ে শিক্ষক ও পরামর্শদাতা উভয়েই যৌথভাবে আলােচনা করুন। পরামর্শদাতা মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীর আচরণের ব্যাপারে শিক্ষকের থেকে খোঁজখবর নেবেন। কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে, শিক্ষার্থীদের আচরণ কতটা পরিবর্তন হয়েছে ইত্যাদি।

(৭) অনুসরণ করা : পরামর্শদানের কার্যকারিতা কতটা সফল হয়েছে, পূর্বের সমস্যামূলক আচরণ পুনরায় ফিরে এসেছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শদাতা অভিভাবক ও শিক্ষকের থেকে নিয়মিত খবর রাখবেন। ভবিষ্যতে যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয় তার ব্যবস্থা করবেন। এর থেকে বোঝা যায় শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পরামর্শদাতা অনুসরণ করবে।