শিশুর অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারই হল নিরাপদ আশ্রয়। তাই শিশুর মধ্যে যাতে কোনোভাবেই সমস্যামূলক আচরণ দেখা দিতে না পারে, সে ব্যাপারে পিতা-মাতা ও পরামর্শদাতার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
(১) শিশুর প্রাথমিক চাহিদা পূরণ: শিশুর প্রাথমিক চাহিদা গুলি হল খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অবশ্যই ভালােবাসা ও নিরাপত্তার চাহিদা। শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। আবার সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন মানসিক চাহিদাগুলো পূরণ করা। যেমন—একদিকে স্নেহ-ভালোবাসায় পূর্ণ করতে হবে, অন্যদিকে তেমনি শিশুর যে বস্তু সামগ্রীর চাহিদা থাকে সেগুলো ন্যূনতম পূরণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
(২) পিতা-মাতার সম্পর্ক : বাবা-মার মধ্যে সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। ভালো সম্পর্ক শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মা-বাবা ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিবাদ লেগে থাকলে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়, শিশু আক্রমণধর্মী হয়ে ওঠে।
(৩) বাবা-মার শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান : পিতা-মাতার শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে ভালো হয়। শৈশবে শিশুর কি কি চাহিদা থাকে, সেগুলো কিভাবে পূরণ করা যায়, শিশুর আচরণ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্থাৎ বিভিন্ন সমস্যামূলক আচরণগুলি কীভাবে শিশুর উপর প্রভাব বিস্তার করে ইত্যাদি। শিশু মনস্তত্ত সম্পর্কে সাধারণ কিছু জ্ঞান থাকলে শৈশবে পিতা-মাতা সেগুলির প্রতিকার করতে সক্ষম হবেন।
(৪) স্বাধীনতার পরিবেশ : শৈশবে শিশুর খুব সক্রিয় থাকে। শিশুকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনাে কাজ করতে গেলে তাকে পদে পদে বাধা দেওয়া উচিত নয়। তবে তার কাজের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে তার কোনো ক্ষতি না হয়। অতিরিক্ত স্বাধীনতা যেন শিশুকে বিশৃঙ্খল করে না তােলে, সে ব্যাপারে পিতা-মাতার সতর্ক হওয়া উচিত। পিতা-মাতা শিশুর বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কতটা স্বাধীনতা দেবেন, তা ঠিক করতে পারবেন। স্বাধীনতার মাধ্যমে শিশু শৃঙ্খলা পরায়ন হবে। বরং শিশুর অনিচ্ছায় চাপ দিয়ে কাজ করালে, সে বিশৃঙ্খল হয়ে ওঠে।
(৫) নৈতিক চরিত্রগঠনে পিতা-মাতার ভূমিকা : শিশু প্রাথমিক অবস্থায় অন্যের দেখে শেখে। সুতরাং পিতা-মাতার আচরণ যেন আদর্শস্থানীয় হয়। পিতা-মাতা শিশুর সামনে এমন কিছু কাজ করবেন না, যাতে শিশুর নৈতিক মানের অবনতি ঘটে। তারা শিশুর থেকে যেমন আচরণ প্রত্যাশা করবেন তাদের আচরণ সেরকম হওয়া উচিত। শিশু কোনো অন্যায় কাজ করলে তাকে শাসন করবে, বুঝিয়ে বলেন। আবার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করবেন। যেভাবে শিশুর নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করবেন।
(৬) নিরপেক্ষ আচরণ : পিতা-মাতার যদি একাধিক সন্তান থাকে অথবা ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই থাকে, তাহলে মা-বাবার আচরণ অবশ্যই সব সন্তানের জন্যই নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। মা-বাবার নিরপেক্ষ আচরণ শিশুর সুস্থ মানসিকতা গঠনে সহায়ক হবে।
(৭) বয়ঃসন্ধিক্ষণে মা-বাবার বিশেষ ভূমিকা : বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক পরিবর্তন হয়। দেহ-মনের হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে শিশুর অভিযোজনে সমস্যা হয়। মা-বাবার দায়িত্ব বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তন সম্পর্কে অবহিত করা। এই পরিবর্তন যে স্বাভাবিক ঘটনা, সবার জীবনেই ঘটে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে বয়ঃসন্ধিক্ষণের সঠিক বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মা-বাবাকে বিশেষ সচেতন হতে হবে।
উক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সুস্থ পারিবারিক জীবন শিশুর শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং আচরণগত সমস্যা প্রতিকারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে।
Leave a comment