শিক্ষাবিজ্ঞান প্রযুক্তি হল শিক্ষা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বৈদ্যুতিন উপকরণ। শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তি কথার অর্থ হল শিক্ষাকে প্রযুক্তিয়ান কি। অর্থাৎ শিক্ষা প্রযুক্তি হল কৌশল এবং পদ্ধতির বিজ্ঞান, যার সাহায্যে শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন করা যায়। কমিশন অফ ইস্ট্রাকশন টেকনোলজি (USA)-এর মতে, গবেষণাভিত্তিক নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে সমগ্র শিখন এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়া ধারবাহিকভাবে নকশাকরণ, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন ই হলো শিক্ষা প্রযুক্তির কাজ।
শিক্ষা প্রযুক্তি হল শিক্ষা সম্পর্কিত বিজ্ঞান ভিত্তিক জ্ঞান, যা বাস্তব শিখন পরিস্থিতিতে প্রয়ােগ করা হয়। শিক্ষাই প্রযুক্তির লক্ষ্য হল প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য সংক্রান্ত বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, আচরণ বিজ্ঞান এবং মানব প্রকৃতির সাহায্যে শিক্ষায় উৎকর্ষতা নিয়ে আসা।
ম্যান (Man), মেটিরিয়াল (Material ), মিডিয়া (Media), মাস (Mass) এবং মেথড (Method) -এর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রযুক্তির গুরুত্ব বর্তমান শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবলভাবে দেখা যায়। যেমন─ (১) উন্নত পাঠপরিকল্পনা, (২) ব্যক্তিভিত্তিক শিক্ষণ, (৩) শিক্ষণ মডেল, (৪) শিক্ষা উপকরণের বিকাশ, (৫) প্রথা বহির্ভূত শিক্ষা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই আছে শিক্ষা প্রযুক্তির অবদান। (৬) এ ছাড়া মূল্যায়ন ক্ষেত্রে MCQ প্রশ্নের নম্বর দান, (৭) মার্কশিট প্রস্তুত, (৮) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফল প্রকাশ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের কাছে একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই সামগ্রিকভাবে শিক্ষা প্রক্রিয়ার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষা প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিশ্বের সর্বত্রই স্বীকৃত।
(১) শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে প্রযুক্তিবিজ্ঞান: ব্যক্তি ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণে প্রযুক্তিবিদ্যা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেমন— বর্তমানে কম্পিউটার সবক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, প্রাথমিক স্তর থেকেই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মনে করা হয়।
(২) একঘেয়েমি দূরীকরণ : সাধারণ ধর্মের তাত্ত্বিক শিক্ষার মাধ্যমে পঠন পাঠনে শিক্ষার্থীর মনে একঘেয়েমি আসে। কিন্তু শিক্ষায় প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যবহার শিক্ষার্থীকে এই একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয়, ফলে শিক্ষা হয় স্বতঃস্ফূর্ত, শিক্ষার্থীকে আনন্দ দান করে।
(৩) আত্মতৃপ্তি : যে শিক্ষায় যথার্থ তৃপ্তি নেই, সে শিক্ষায় যথার্থ ফল নেই। আত্মতৃপ্তিই আত্মবিকাশের সহায়ক। প্রযুক্তিবিদ্যা আত্মতৃপ্তি আনে, এটি মানুষের দেহে-মনে, চিন্তায়, রুচিতে অভিনবত্বের প্রকাশ ঘটায়।
(৪) সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ : সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানাের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
(৫) শিক্ষা প্রশাসন ক্ষেত্রে প্রযুক্তি : নির্দিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তার, ভরতির আবেদনপত্র, ভরতি তালিকা প্রস্তুত ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তির ব্যবহার সক্রিয়।
(৬) মূল্যায়ন প্রক্রিয়া : আজকের দিনে শিক্ষা প্রযুক্তি মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন— MCQ বা বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নের উত্তরপত্র দেখা, মার্কশিট তৈরি করা, নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ প্রভৃতি।
সুতরাং উল্লিখিত দিকগুলি ছাড়াও প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষকের সাহায্য করে। এটি নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনমত সাহায্য করে ও গবেষণা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
Leave a comment