শিক্ষামনােবিজ্ঞান ফলিত মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা। শিক্ষাক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানের প্রয়ােগকেই শিক্ষামনােবিজ্ঞান বলে। এখানে ব্যক্তির শিক্ষাকালীন আচরণের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস দেওয়া হয়। কয়েকজন প্রখ্যাত শিক্ষামনস্তত্ত্ববিদের দেওয়া সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল一
(১) মনােবিদ স্কিনার প্রদত্ত সংজ্ঞা: শিক্ষামনােবিজ্ঞান হল মনােবিজ্ঞানের শাখা যা শিক্ষা ও শিখন নিয়ে কাজ করে।
(২) মনােবিজ্ঞানী জাড় প্রদত্ত সংজ্ঞা: জীবনবিকাশের বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া শিশুদের মধ্যে যেসব পরিবর্তন সংগঠিত হয়, সেইসব বিষয়ে বিজ্ঞানের যে শাখা আলােচনা করে তা হল শিক্ষামনােবিজ্ঞান।
(৩) কোলেসনিক প্রদত্ত সংজ্ঞা: মনােবিজ্ঞানের যেসব তত্ত্ব ও নীতি শিক্ষাপ্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে, তাদের অনুশীলন হল শিক্ষামনােবিদ্যা।
মনোবিজ্ঞান
-
মানুষের সব আচরণের অধ্যয়ন।
-
মনােবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত।
-
মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে এই প্রক্রিয়ার গতিপ্রকৃতিকেঅধ্যয়ন ব্যবহারের মাধ্যমে করে এবং নানা সূত্র আবিষ্কার করে।
-
আচরণকে বিশ্লেষণ করে কিন্তু তার ভালােমন্দ বিবেচনা করে না| অর্থাৎ এটি বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
-
জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা।
শিক্ষামননাবিজ্ঞান
-
মানুষের শিক্ষাকালীন আচরণের অধ্যয়ন।
-
পরিধি অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ, শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
-
শিক্ষার ক্ষেত্রে মনােবিজ্ঞানের পরীক্ষিত সূত্রগুলিকে ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করে।
-
শিক্ষাকালীন আচরণ বিশ্লেষণ এবং তার ভালােমন্দ বিবেচনা করে। এটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
-
মনােবিজ্ঞানের একটি শাখা।
(১) বর্তমান শিক্ষা শিশুকেন্দ্রিক। তাই শিশুর রুচি, আগ্রহ, প্রবণতা, সহজাত ক্ষমতার পরিমাণ জানা শিক্ষকের বিশেষ প্রয়ােজন।
(২) শিশুর জীবনবিকাশের বিভিন্ন স্তরে তার বৈশিষ্ট্য, চাহিদা ও আগ্রহের পরিবর্তনশীলতা যে শিখনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা বিকাশমূলক মনােবিজ্ঞান থেকে জানা যায়।
(৩) শিক্ষকের প্রধান কাজ হল পাঠদান। পাঠদানের কৌশল, কীভাবে পাঠদানকে আরও কার্যকরী করা যায়, এ সবই শিক্ষক মনােবিজ্ঞান থেকে জানতে পারেন।
(৪) বিদ্যালয়ের রুটিন তৈরি, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি সংগঠন, স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলা প্রবর্তন, সংশােধনমূলক শিক্ষা, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা নির্দেশনা প্রভৃতি শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য।
(৫) বর্তমানে শিক্ষাকে অভিযােজন প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই অভিযােজন প্রক্রিয়া কী, অভিযােজনের কৌশল, কীভাবে অপসঙ্গতিমূলক আচরণকে দূর করা যায়, মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে, কীভাবে শিক্ষক নিজের এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে যথাযােগ্য ভূমিকা পালন করবেন, সেসবই মনােবিদ্যা থেকে অবহিত হওয়া যায়।
(৬) শিক্ষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ব্যতিক্রমী শিশুদের নির্দিষ্ট করা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদানে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৭) সবশেষে বলা যায়, শিক্ষামনােবিজ্ঞান নিয়ে ব্যাপক গবেষণার ফলে শিক্ষার নতুন নতুন দিক উন্মােচিত হচ্ছে। আর এই দিকগুলি প্রধানত মনােবিজ্ঞাননির্ভর। তাই আধুনিক শিক্ষককে প্রতিপদেই মনােবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়।
Leave a comment