শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণগুলি হল— নেতিবাচক মনােভাব, অবাধ্যতা, একগুঁয়েমি, স্কুল-পালানাে ইত্যাদি। এইসমস্ত সমস্যামূলক আচরণগুলি যে-সমস্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায়, তার কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। বাড়ির অভিভাবক, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ একটু পর্যবেক্ষণে রাখলে কিছু লক্ষণ অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
গুরুজনের কথা না শােনা, তাদের নির্দেশ মেনে না চলা, সর্বদা নিজের খেয়াল খুশি মতো চলার মানসিকতা নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি বলে। এর লক্ষণগুলি হল –
(১) এই ধরনের শিক্ষার্থীরা ভীষণ জেদি হয়।
(২) একটা ভালো মন্দ বিচার করে না।
(৩) নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করে।
(৪) কারাের কোনাে অনুরােধ বা আবেদনকে এরা গুরুত্ব দেয় না।
স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে স্কুল পরিত্যাগ স্কুল পালানো বলে। এর লক্ষণ গুলি হল—
(১) এই ধরনের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অজুহাতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে ঘুরতে পছন্দ করে।
(২) শ্রেণিকক্ষের মধ্যে থাকলেও মাথা গুঁজে বসে থাকে।
(৩) শিক্ষণ-শিখনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে না।
অর্থাৎ এরা বিদ্যালয়, পরিবেশ, শিক্ষক, নিয়মনীতি ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গতি বিধান করতে পারে না, যা বিদ্যালয়ের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এইসকল নেতিবাচক আচরণ অবাধ্যতা, একগুয়েমি, স্কুল পালানোর কতকগুলি সাধারণ আচরণ লক্ষিত হয় যে গুলো তিন ভাগে বিভক্ত যথা– (১) দৈহিক লক্ষণ, (২) আচরণগত লক্ষণ, (৩) প্রাক্ষোভিক লক্ষণ।
(১) দৈহিক লক্ষণ: শিক্ষার্থীরা সমস্যামূলক আচরণ করলে সেগুলি তার শরীরের বাহ্যিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। এর ফলে দৈহিক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন—(a) তোতলামি, (b) কথা আটকে আটকে যাওয়া, (c) নখ কামড়ানাে, (d) আঙুল চোষা, (e) সর্বদা অস্থির অস্থির ভাব, (f) আঙুল মটকানো, (g) বমি করা ইত্যাদি।
(২) আচরণগত বিচ্যুতি : আচরণে যে-সমস্ত লক্ষণগুলি প্রকাশ পায় তা হল— (a) আক্রমণধর্মী মনােভাব, (b) ঝগড়া-প্রবণতা, (c) কারণে অকারণে মিথ্যা কথা বলা, (d) যে-কোনাে কাজের পারদর্শিতা দুর্বল প্রকৃতির, (e) অতিরিক্ত কাজ করা ইত্যাদি।
(৩) প্রাক্ষোভিক লক্ষণ : সমস্যামূলক আচরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রাক্ষোভিক লক্ষণ প্রকাশ পায়, যেমন— (a) অত্যধিক ভয়, (b) অকারণে দুশ্চিন্তা, (c) হীনম্মন্যতাবোধের ভােগ, (d) বদমেজাজ, (e) মানসিক চাপ, (f) মানসিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি।
এই সমস্ত লক্ষণগুলো দেখলে শিক্ষার্থীদের সমস্যামূলক আচরণ সম্পর্কে শনাক্ত করা যায়। ফলস্বরূপ শিক্ষাক্ষেত্রে এদের পারদর্শিতার মান খুবই খারাপ হয়। শিক্ষকগণ এই সমস্ত লক্ষণগুলো দেখে শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ব্যবস্থা অবলম্বন করলে এই সমস্যাগুলি থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্ত হতে পারবে।
উপরোক্ত আচরণের কারণ জেনে সেগুলো যথাযথ আন্তরিকতার সঙ্গে প্রতিকারের উপায় নির্ধারণ করলে সমস্যা অনেকাংশে দূর হয়।
Leave a comment