শিক্ষক-শিক্ষণ প্রসঙ্গে সার্জেন্ট কমিটি যে সমস্ত মূল্যবান সুপারিশ নথিভুক্ত করেছে, সেগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলㅡ

(১) শিক্ষক-শিক্ষণ বিভাগ স্থাপন: শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেশাগত উন্নতি সাধনের জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষা বিভাগ খুলতে হবে। তা ছাড়া নতুন নতুন শিক্ষক-শিক্ষা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে৷

(২) ব্যপক কর্মসূচি গ্রহণ: সারা দেশে শিক্ষক-শিক্ষণের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

(৩) স্নাতক ডিগ্রিহীন শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা: স্নাতক নন এমন শিক্ষকদের জন্য তিন ধরনের শিক্ষা শিক্ষালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলি হল

  • প্রাকৃপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য,

  • বুনিয়াদি বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য,

  • মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য।’

(৪) রিফ্রেসার কোর্স প্রবর্তন: বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জন্য রিফ্রেসার কোর্সের প্রবর্তন করতে হবে।

(৫) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন বৃদ্ধি: আর্থিক মানােন্নয়নের জন্য সবস্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন বৃদ্ধি করতে হবে।

(৬) অবৈতনিক প্রশিক্ষণ: শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে বা বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্ররা বিনা বেতনেই প্রশিক্ষণ নেবে। বরং প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তারা কিছু পরিমাণ আর্থিক সাহায্য পাবে।

সার্জেন্ট কমিটির রিপাের্টে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়| এগুলি হল

(১) অবসর যাপনের ব্যবস্থা: প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রথাগত পাঠক্রমের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে খেলাধুলা, ড্রিল, ছবি আঁকা, গানবাজনা, লােকনৃত্য প্রভৃতির মধ্যে নিয়ােজিত থেকে অবসর যাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।

(২) সমাজসেবামূলক কার্যাবলি পরিচালনার সুযােগ: মাধ্যমিকস্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলাে, ড্রিল, ব্যায়াম, শরীরচর্চা প্রভৃতির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যাবলি পরিচালনার সুযােগ সৃষ্টি করতে হবে। এ ছাড়া বিতর্ক সভা, ক্রীড়া প্রতিযােগিতা, নানাবিধ দলগত ক্রিয়া প্রভৃতিতে শিক্ষার্থীরা যাতে অংশগ্রহণের সুযােগ পায়, তার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(৩) যুব আন্দোলন গড়ে তােলা: দেশের যুবক-যুবতিদের নিয়ে যুব আন্দোলন গড়ে তােলার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযােগিতা, দলবদ্ধ ভ্রমণ, খেলাধুলার ব্যবস্থা ইত্যাদির মতাে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে যুব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এর মধ্য দিয়েই তাদের মধ্যে নেতৃত্বদানের গুণের বিকাশ ঘটবে।

শিক্ষান্তে ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থান বিষয়েও সার্জেন্ট কমিটির রিপাের্টে কিন্তু সুপারিশ করা হয়। এগুলি হল

(১) কর্মসংস্থান কেন্দ্র স্থাপন: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে কর্মসংস্থান কেন্দ্র (employment exchange) স্থাপন করতে হবে।

(২) ছাত্রাবস্থায় শিক্ষানবিশির সুযোগ প্রদান: কারিগরি ও বৃত্তি শিক্ষার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাকালেই বিভিন্ন উৎপাদনমূলক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। এর ফলে একদিকে তারা যেমন বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, অন্যদিকে তেমনি শিক্ষাশেষে তাদের কাজ খুঁজে পেতেও সুবিধা হবে।

(৩) প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ আইন প্রণয়ন: প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকুরির ক্ষেত্রে অধিক সংখ্যক আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়ােজনে প্রতিবন্ধীদের নিযুক্তির জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করতে হবে।