সরকারের শ্রেণীবিভাগ প্রসঙ্গে পার্লামেন্টারী, রাষ্ট্রপতি-শাসিত প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের শাসনব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। রাজনীতিক শাসন কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে:
-
(১) প্রকৃত শাসক ও নামসর্বস্ব শাসক,
-
(২) একক পরিচালক ও বহু পরিচালক শাসন-বিভাগ এবং
-
(৩) উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত শাসক ও নির্বাচিত শাসক।
(১) নামসর্বস্ব শাসক ও প্রকৃত শাসক
নামসর্বস্ব ও প্রকৃত শাসক: অনেক দেশে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ দু’ভাগে বিভক্ত : নামসর্বস্ব ও প্রকৃত। আইনত দেশের সকল প্রশাসনিক ক্ষমতা ও দায়িত্ব একজন শাসকপ্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে। তত্ত্বগতভাবে তিনি শাসন-বিভাগের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। কিন্তু বাস্তবে তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করেন না। তবে তাঁর নামে শাসনকার্য পরিচালিত হয়। এই শাসক-প্রধানের ক্ষমতা কেবল কিছু আনুষ্ঠানিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এ ধরনের শাসন-বিভাগীয় প্রধানকে নামসর্বস্ব শাসক (Nominal or Titular Executive) বলা হয়। এই শাসনব্যবস্থায় যিনি বা যাঁরা এই বাস্তব শাসনকার্য পরিচালনা করেন অর্থাৎ প্রকৃত ক্ষমতা ভোগ ও প্রয়োগ করেন তাঁকে বা তাঁদের প্রকৃত শাসক (Real Executive) বলে। বস্তুত পার্লামেন্টীয় বা সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় নামসর্বস্ব শাসক ও প্রকৃত শাসকের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। উদাহরণ হিসাবে ব্রিটেনের পার্লামেন্টীয় শাসনব্যবস্থায় রাজা বা রানী এবং প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার কথা বলা যায়। রাজা বা রানী হলেন নামসর্বস্ব শাসক এবং মন্ত্রিসভা বা ক্যাবিনেট (Cabinet) হল প্রকৃত শাসক। ব্রিটেনে রাজা বা রানীর নামে যাবতীয় শাসনকার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে রাজা বা রানী কিছু আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা ভোগ করেন মাত্র। ‘তিনি রাজত্ব করেন কিন্তু শাসন করেন না’ (Reigns but does not govern)। ব্রিটেনের শাসনকার্য প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার দ্বারা পরিচালিত হয়।
(২) (ক) একক পরিচালক শাসন-বিভাগ
একক-শাসন কর্তৃপক্ষ:
একক পরিচালিত শাসনব্যবস্থায় শাসন ক্ষমতা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে এবং তাঁর নির্দেশ ও নেতৃত্বে সকল কাজ সম্পাদিত হয়। দৃষ্টান্ত হিসাবে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কথা বলা হয়। জার্মানীতে নাৎসী দলের (Nazi) প্রধান হিটলারের শাসন এবং ইটালীতে ফ্যাসিদলের নেতা মুসোলিনীর শাসন একক পরিচালিত শাসনব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসাবে গণ্য হয়। ইতিহাসে চরম রাজতন্ত্র (Absolute Monarchy) একক পরিচালক শাসনব্যবস্থার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে উদারনীতিক গণতন্ত্রেও একক শাসন কর্তৃপক্ষ থাকতে পারে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসন এবং ইংল্যাণ্ডের পার্লামেন্টীয় শাসনও একক পরিচালিত শাসন হিসাবে গণ্য হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ‘কংগ্রেসের সদস্য নন এবং আইনসভার কাছে তার কোন দায় দায়িত্বও নেই। সংবিধান রাষ্ট্রপতির উপর যাবতীয় শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত করেছে। তিনি এককভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকেন। আর ইংল্যাণ্ডের দ্বি-দলীয় ব্যবস্থায় যে দল নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলই মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে এবং দলের নেতাই হন প্রধানমন্ত্রী। তত্ত্বগতভাবে যৌথ দায়িত্বশীলতার নীতি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও মর্যাদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ কার্যত ইংল্যাণ্ডে এক দলীয় শাসন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ভারতের মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থার কথা বলা যায়। ইংল্যাণ্ড ও ভারতে একই দলের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। উভয় দেশের রাজনীতিক ব্যবস্থায় মন্ত্রিপরিষদের যৌথ দায়িত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব স্বীকৃত। তার ফলে চূড়ান্ত বিচারে প্রধানমন্ত্রী একক-পরিচালক শাসক হিসাবে দায়িত্ব সম্পাদন করেন।
একক-পরিচালক শাসন বিভাগের সুবিধা
-
(১) একক-পরিচালক শাসনব্যবস্থায় মতপার্থক্য থাকে না। ফলে সরকার দৃঢ় ও শক্তিশালী হয়। জনকল্যাণ সাধনের ব্যাপারে এরূপ শাসনব্যবস্থা বিশেষভাবে উপযোগী।
-
(২) এরূপ শাসনব্যবস্থা দায়িত্বশীল হয়। কারণ এখানে দায়িত্ব নির্ধারণের ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই। হলসে (Hoolsey) বলেছেন: “The advantages of a single chief are obvious: he is able to bring unity and efficiency into the government and being alone, he or his ministry is responsible.”
-
(৩) প্রশাসনিক তথ্যাদির গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারেও এই শাসনব্যবস্থার সুবিধা পাওয়া যায়।
-
(৪) এ ধরনের সরকারে শাসন বিভাগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের অভিন্নতা থাকে। এর সুবিধাও উল্লেখযোগ্য।
-
(৫) এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অযথা সময় অপচয়ের আশংকা থাকে না। তাই যে-কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় এবং তা দৃঢ়তার সঙ্গে কার্যকরী করা যায়। তাই এই শাসনব্যবস্থায় যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা আভ্যন্তরীণ গোলযোগজনিত সংকটসমূহের মোকাবিলা দৃঢ়ভাবে ও সাফল্যের সঙ্গে করা যায়। এই সমস্ত কারণে বিচারপতি স্টোরীর মত হল রাষ্ট্রে একজন শাসক থাকাই বাঞ্ছনীয়।
একক-পরিচালক শাসন বিভাগের অসুবিধা
-
(ক) প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ বা কোন বিরোধিতা থাকে না বলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বৈরাচারের আশংকা থাকে। অ্যাকটন (Lord Acton) মন্তব্য করেছেন: “All power corrupts and absolute, power corrupts absolutely.” ফলে ব্যক্তি-স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হতে পারে।
-
(খ) একক-পরিচালক শাসনব্যবস্থায় শাসক সরকারের অন্যান্য বিভাগের কাজকর্মে অযথা হস্তক্ষেপ করতে পারেন। ফলে সরকারের অন্যান্য বিভাগের স্বাতন্ত্র্য এবং জনসাধারণের স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।
-
(গ) একমাত্র শাসক অযোগ্য হতে পারেন। তখন সরকারী ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
-
(ঘ) বর্তমানকালের আধুনিক ও জটিল প্রকৃতির শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিশেষীকৃত প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং সব বিষয়ে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না। এই সুবিধা একক পরিচালক শাসনব্যবস্থায় পাওয়া যায় না।
(২) (খ) বহু-পরিচালক শাসন-বিভাগ
বহু-শাসন কর্তৃপক্ষ:
একক পরিচালক শাসন-ব্যবস্থার বিপরীত ব্যবস্থাই হল বহু-পরিচালক শাসনব্যবস্থা। এখানে শাসন-বিভাগীয় প্রকৃত ক্ষমতা সমক্ষমতাসম্পন্ন বহুজনের হাতে ন্যস্ত থাকে। যখন শাসন-বিভাগীয় ক্ষমতার প্রয়োগ ও পরিচালনা একাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত কোন সংস্থার হাতে অর্পিত থাকে তখন তাকে বহু পরিচালক শাসন-বিভাগ (Plural Executive) বা সমষ্টিগত শাসন-বিভাগ (Collective Executive) বলা হয়। অতীতে এথেন্সে একাধিক স্বাধীন শাসক ছিলেন। তেমনি প্রাচীনকালের রোমে দু’জন কন্সাল এবং স্পার্টায় দু’জন রাজার হাতে শাসনক্ষমতা অর্পিত ছিল। বর্তমানে সুইজারল্যাণ্ডে বহু পরিচালিত শাসনব্যবস্থা আছে। আবার যুগোশ্লাভিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের কতকগুলি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরনের শাসন দেখা যায়।
সুইজারল্যাণ্ডের উদাহরণ: সুইস সংবিধান অনুসারে সমক্ষমতাসম্পন্ন সাতজন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ (Federal Council)-এর হাতে শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত আছে। আইনসভার উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে এই কাউন্সিলারগণ চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। ফলে তাঁরা বিভিন্ন দল থেকেও নির্বাচিত হতে পারেন। আবার সকল কাউন্সিলার সমান দায়িত্ব ও ক্ষমতার অধিকারী। একজন সভাপতি থাকেন বটে, তবে তাঁর ভূমিকা আনুষ্ঠানিক মাত্র। সভাপতিত্ব করলেও তিনি কর্তৃত্ব করতে পারেন না। এই সভাপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এবং গ্রেট ব্রিটেন বা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মত ক্ষমতা বা কর্তৃত্বের অধিকারী নন। তাঁর পদ নেহাতই সাম্মানিক ও আনুষ্ঠানিক।
বহু পরিচালিত শাসন-বিভাগের সুবিধা
-
(১) সমক্ষমতাসম্পন্ন বহু ব্যক্তির হাতে শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। তাই এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার বা স্বৈরাচারের আশংকা থাকে না। তার ফলে ব্যক্তি-স্বাধীনতার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
-
(২) বহুজনের আলাপ-আলোচনা বা বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে প্রশাসনিক নীতি-নির্ধারিত ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাই ত্রুটি-বিচ্যুতির আশংকা থাকে না। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
-
(৩) বহু শাসকের অস্তিত্বের জন্য সরকারের অন্যান্য বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ক্ষুণ্ন হয় না।
-
(৪) জ্ঞান-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ও কর্মক্ষমতার বিচারে একজনের শাসন অপেক্ষা বহুজনের শাসন স্বাভাবিকভাবেই উন্নত ও সমর্থনযোগ্য।
বহু পরিচালিত শাসন-বিভাগের অসুবিধা
-
(১) সমক্ষমতাসম্পন্ন বহু ব্যক্তিবিশিষ্ট শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তার ফলে প্রশাসনিক নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে। এই কারণে দেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখা যায়। করা কঠিন হয়ে
-
(২) বহু শাসকের হাতে শাসন ক্ষমতা ন্যস্ত থাকলে শাসন-বিভাগের দায়িত্ব নির্দিষ্ট পড়ে। তার ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা দেখা দেয়।
-
(৩) বহুজনের শাসনব্যবস্থায় সরকারী তথ্যাদির গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারেও বিশেষ অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
-
(৪) এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় দ্রুত এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। এই কারণে বহুজনের শাসন শ্লথগতিসম্পন্ন এবং দুর্বল হয়। তাই সত্বর ও সাফল্যের সঙ্গে সংকটপূর্ণ জরুরী অবস্থার মোকাবিলা করা যায় না।
উপসংহার: একক-পরিচালক ও বহু-পরিচালক শাসনব্যবস্থা উভয়েরই সুবিধা ও অসুবিধা আছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাজনীতিক ব্যবস্থায় উভয় ধরনের শাসন-বিভাগীয় সংগঠনের সমর্থন ও বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়। অনেকের মতে একক-পরিচালক শাসনব্যবস্থাই অধিকতর গণতন্ত্রসম্মত।
(৩) উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত শাসক ও নির্বাচিত শাসক
আগে শাসকগণ উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতাসীন হতেন। এইভাবে ক্ষমতাসীন-শাসককে উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত শাসক বলা হয়। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশের আগে শাসকগণ এইভাবে উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত হতেন। তবে এখনও এমন নজির আছে। ব্রিটেনের রাজা বা রানী এই শ্রেণীর শাসক। রাজা বা রানী উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত হন। তবে গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার বিকাশের ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত শাসন কর্তৃপক্ষ হিসাবে রাজা বা রানীর ভূমিকার ক্রমবিবর্তন ঘটেছে। এখন রাজা বা রানীর ভূমিকা নামসর্বস্ব শাসকপ্রধানের। প্রকৃত প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ হল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদ। আবার জাপানেও উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনীত শাসকের দৃষ্টান্ত বর্তমান।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে শাসন-বিভাগের রাজনীতিক অংশ নির্বাচিত হন। এভাবে ক্ষমতাসীন শাসককে নির্বাচিত শাসক বলা হয়। এই নির্বাচন প্রত্যক্ষও হতে পারে, আবার পরোক্ষও হতে পারে। সুইজারল্যাণ্ডে আঞ্চলিক শাসক কর্তৃপক্ষ ও সংগঠনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতকগুলি অঙ্গরাজ্যে প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা বর্তমান। বর্তমানে পঞ্চম সাধারণতন্ত্রের সংবিধান অনুসারে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। তবে শাসন-বিভাগীয় প্রধান কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমানে অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা অনুসৃত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচক সংস্থা (Electoral College)-র দ্বারা নির্বাচিত হন। ব্রিটেন ও ভারতের মন্ত্রিপরিষদকে এবং গণ-প্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ (State Council)-কে আইনসভার দ্বারা নির্বাচিত হতে হয়। সুইজারল্যাণ্ডের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদকে নির্বাচিত করে আইনসভা।
প্রধান কর্মকর্তার নিয়োগ পদ্ধতিসমূহ
রাষ্ট্রের প্রধান কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে চারটি মূল পদ্ধতি আছে। এই চারটি পদ্ধতি হল—
-
উত্তরাধিকার সূত্র,
-
প্রত্যক্ষ নির্বাচন,
-
পরোক্ষ নির্বাচন এবং
-
মনোনয়ন।
(১) উত্তরাধিকার সূত্র: রাজতন্ত্রে রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতাসীন হন। রাজা আমৃত্যু পদে আসীন থাকেন। রাজার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী রাজপদে অধিষ্ঠিত হন। তবে প্রাচীনকালে কোথাও কোথাও রাজাকে নির্বাচিত করা হত। এখন কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে প্রকৃত শাসকপ্রধান হিসাবে রাজার অস্তিত্ব আর নেই। গ্রেট ব্রিটেনে রাজা হলেন নামসর্বস্ব শাসনকর্তা। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রকৃত ক্ষমতা নেই।
(২) প্রত্যক্ষ নির্বাচন: জনগণ প্রত্যক্ষভাবে শাসকপ্রধানকে নির্বাচন করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলির রাজ্যপালগণ, সুইজারল্যাণ্ডের অধিকাংশ ক্যান্টনের শাসকগণ জনসাধারণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হন।
(৩) পরোক্ষ নির্বাচন: রাষ্ট্রের শাসকপ্রধানকে জনগণ পরোক্ষভাবেও নির্বাচিত করতে পারে। অর্থাৎ জনগণ প্রত্যক্ষভাবে যে সকল প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সেই প্রতিনিধিগণই আবার শাসক প্রধানকে নির্বাচন করেন। বর্তমানে অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি আইনসভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন।
(৪) মনোনয়ন: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ (superior authority) শাসকপ্রধানকে মনোনীত করতে পারেন। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলির শাসকপ্রধান হলেন রাজ্যপাল (Governor)। রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন।
Leave a comment