শাসন বিভাগের প্রধানের উৎস
শাসকপ্রধানের সামাজিক পটভূমি:
শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের কার্যপদ্ধতি, নীতি নির্ধারণ, কার্যকালের স্থায়িত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে তাঁর সামজিক-সাংস্কৃতিক পটভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কতকগুলি উপাদানের আলোচনার উপর জোর দেন। এই উপাদানগুলি হল শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের ধর্ম, বর্ণ, পেশা, পারিবারিক অবস্থা প্রভৃতি। এই প্রসঙ্গে শাসকপ্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার সামাজিক পটভূমির উপরও জোর দেওয়া হয়। শাসন-বিভাগের প্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার বিষয়টি দেশ-কাল ভেদে বাস্তবিকই বিচিত্র। এ ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ব্যক্তিগত যোগ্যতা, পারিবারিক ভূমিকা, আঞ্চলিকতা, উপজাতীয় চেতনা প্রভৃতি উপাদানের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
রাজনীতিক ক্ষমতার উৎস বিভিন্ন:
শাসন-বিভাগের প্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার উপায়-পদ্ধতি বিচিত্র ও বিভিন্ন। বল তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “The processes of achieving the position of chief executive are varied.” সকল ক্ষেত্রে তাঁরা দেশবাসীর সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনের ভিত্তিতে ক্ষমতাসীন হন না। উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাংবিধানিক পথেই শাসন-বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন। এখানে ক্ষমতার উৎস হল সংবিধান। সুতরাং রাজনীতিক প্রধান সাংবিধানিক পদ্ধতিতে নিযুক্ত হন। অনেক দেশে ক্ষমতা লাভের উৎস হল উত্তরাধিকারের নীতি। এই সমস্ত দেশে বংশানুক্রমিকভাবে রাষ্ট্র-প্রধানেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। এই ধরনের ব্যবস্থা অবাধ রাজতন্ত্রে বর্তমান থাকে। আবার সফল সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সমরনায়ককে ক্ষমতাসীন হতে দেখা যায়। অনেক সময় কোন কোন জননেতা সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। এই ব্যক্তিত্বই তাঁদের ক্ষমতা লাভে সাহায্য করে। সুতরাং রাজনীতিক প্রধানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার উপায়-উৎস বিচিত্র।
রাজনীতিক প্রধানরা সমাজের সকল অংশের প্রতিনিধি নন:
আইনগত বিচারে রাজনীতিক প্রধান সমগ্র দেশবাসীর প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিপন্ন হন। কিন্তু বাস্তব ঘটনা তা নয়। যে-কোন রাজনীতিক প্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার পিছনে জাতি, উপজাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমাজের সকলের সমর্থন বা অনুমোদন থাকে না। সাধারণত তারা সমাজের বিশেষ একটি অংশ বা গোষ্ঠীর সক্রিয় সমর্থনের ভিত্তিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। রাজনীতিক প্রধানদের ক্ষমতাসীন হওয়া ও ক্ষমতাসীন থাকার পিছনে সাধারণত সমাজের এলিট বা প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী গোষ্ঠী অথবা আর্থনীতিক বিচারে ক্ষমতাশালী শ্রেণী বা দলের সমর্থন থাকে। এবং তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই সমাজের সংশ্লিষ্ট অংশের বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। বলের এই বক্তব্য উদারনীতিক গণতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র প্রভৃতি নির্বিশেষে সকল সরকারী ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা যায়। বলের মতানুসারে সাংবিধানিক রাজা, অ-সামরিক রাষ্ট্রপতি বা সামরিক একানায়ক— শাসন-বিভাগের প্রধান যেই হোন না কেন তিনি সমাজে সংখ্যাগত বিচারে প্রাধান্যকারী শ্রেণী বা জাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেন। শাসন-বিভাগের প্রধানেরা সমগ্র সমাজের প্রতিনিধিত্বমূলক সত্তা হিসাবে প্রতিপন্ন হন না। বল বলেছেন: “Chief executives, whether constitutional monarchs, civilian presi dents or military dictators are rarely representative in that they reflect the numeri cally dominant social classes, ethnic groups etc., in society. They are produced by powerful groups such as the church or the army or they are recruited by the political party machines.
শাসন-বিভাগের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর সাহায্য-সমর্থন সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিক দল বা গোষ্ঠীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা:
অনেক ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী সরাসরি ক্ষমতা দখল করে এবং বাহিনীর নেতা শাসকপ্রধানের পদে আসীন হন। আবার অনেক ক্ষেত্রে শাসকপ্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার পিছনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা হল পরোক্ষ, প্রত্যক্ষ নয়। গৃহযুদ্ধ, সামরিক অভ্যুত্থান প্রভৃতির মাধ্যমে নতুন শাসকপ্রধানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অনেক ঘটনা মানবজাতির ইতিহাসে পরিলক্ষিত হয়। বল তাঁর Modern Politics and Government গ্রন্থে বলেছেন: “Armies supply the chief executives in many developing political systems not only because of their mo nopoly of physical force, but also from the concentration of technical and adminis trative competence in the armed forces, and sometimes their ability to cut across tribal divisions.” আঞ্চলিকতা এবং উপজাতীয় বিবাদ-বিসংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সৈন্যবাহিনী আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শাসকপ্রধানের নিয়োগের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জেনারেল দ্য গল (General Charles de Gaulle)-এর রাজনীতিক প্রধানের পদে আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং সামরিক বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রকৃত প্রস্তাবে আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনেক দেশে, এমনকি ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানে রাজনীতিক প্রধানের নিয়োগের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকার ইতিহাস পরিলক্ষিত হয়।
ধর্মীয় প্রভাব:
শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে ধর্ম বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলির ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না। সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি আর্চবিশপ ম্যাকারিয়স ( Archbishop Makarios)-এর ক্ষমতাসীন হওয়ার পিছনে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রভাব বর্তমান ছিল। শাসকপ্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী সংখ্যাগুরু উপজাতীয় নেতাদের দাবিও অনেক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। এরকম ক্ষেত্রে উপজাতীয় আনুগত্য সিদ্ধান্তমূলক শক্তি হিসাবে কাজ করে। আফ্রিকার অনেক দেশে এ রকম নজির পাওয়া যাবে।
উদারনীতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলের ভূমিকা:
উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবস্থা অন্য রকম। এরকম রাজনীতিক ব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতিক দলগুলির ভূমিকাই হল মুখ্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনীতিক প্রধানের পদে আসীন হওয়ার জন্য রাজনীতিক দলের সক্রিয় সাহায্য সমর্থন একান্তভাবে অপরিহার্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে এখন সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের নীতিকে স্বীকার করা হয়েছে। এই অবস্থায় দলীয় মনোনয়ন এবং রাজনীতিক যোগ্যতা ব্যতিরেকে রাজনীতিক শাসকপ্রধানের পদে আসীন হওয়া অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ভারত প্রভৃতি দেশের রাজনীতিক শাসকপ্রধানের নিয়োগ-ব্যবস্থার কথা বলা যায়। আবার শাসকপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের বিশেষ গোষ্ঠী বা এলিট অংশের প্রভাব ও প্রাধান্য সর্বত্রই দেখা যায়। বল বলেছেন: “usually, political parties based on a wide franchise have forced traditional elites in society to widen the avenues for political promotion.” তিনি আরও বলেছেন: “In liberal democracies chief executives are recruited from established political elites working through the political parties.” গ্রেট ব্রিটেনে শ্রমিক দল বা রক্ষণশীল দল থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে যাঁরা নিযুক্ত হন তাঁরা প্রায় ক্ষেত্রেই অভিন্ন আর্থ-সামাজিক পটভূমি থেকে আসেন। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হিসামে ম্যাক্ডোনাল্ড (Ramsay MacDonald) এর নাম বলা যায়। একমাত্র তিনিই শ্রমিক শ্রেণী থেকে এসেছিলেন। উইলসন (Harold Wilson) এবং কালাঘান (James Callaghan) নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে এসেছিলেন।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতিক দলের ভূমিকা:
কেবলমাত্র উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নয়, রাজনীতিক দল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেও শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের পদে নিয়োগের ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করে। এই সমস্ত দেশে শাসকপ্রধানের মনোনয়নের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা গ্রহণ করে। বল বলেছেন: “In socialist systems the political party becomes the sole source of recruitment ….” তিনি আরও বলেছেন: “In socialist regimes the emphasis is on the manoeuvring within the single party. Stalin achieves supreme power by his control of the party bureaucracy and his subsequent ruthlessness in dealing with party rivals.
শাসন-বিভাগের প্রধানের স্থায়িত্ব
ক্ষমতা অর্জনের উপায় পদ্ধতির উপর প্রধানের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। সরকারের সাফল্য রাজনীতিক ব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্বের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। আবার রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্বের বিষয়টি তাঁর ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর স্থায়িত্ব তাঁর ক্ষমতা অর্জনের পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। ক্ষমতাসীন হওয়ার উপায় পদ্ধতি, সামাজিক সমর্থন ও ভিত্তি এবং সরকারের প্রকৃতির উপর শাসন-বিভাগের প্রধানের স্থায়িত্বের বিষয়টি নির্ভরশীল। অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে শাসন-বিভাগের প্রধানের ক্ষমতাসীন হওয়ার উৎস তাঁদের পদের স্থায়িত্বের মাধ্যমেই প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তিনি তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “The stability of the position of chief executive reflects their origins.” শাসন-বিভাগের প্রধানের স্থায়িত্ব অধিকতর দৃঢ় হবে, যদি তিনি সমাজের ব্যাপক অংশের প্রতিনিধিত্ব লাভ করেন। যে-কোন সরকারের বৈধতা জনসাধারণের স্বীকৃতির উপর নির্ভরশীল। সুতরাং সরকারের বৈধতা যত বেশী ব্যাপক ও শক্তিশালী হবে শাসন-বিভাগের প্রধানের স্থায়িত্বও তদনুসারে বেশী হবে। এই কারণে সকল সরকারী ব্যবস্থায় রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্ব সমান হয় না। সরকারী ব্যবস্থার পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে তা পৃথক হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় রাজনীতিক প্রধানের পদ অধিকতর স্থায়ী:
মন্ত্রিপরিষদ-শাসিত শাসনব্যবস্থায় এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্বের ব্যাপারে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তুলনামূলক বিচারে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্ব বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ নির্দিষ্ট। মৃত্যু, পদত্যাগ বা পদচ্যুতির ঘটনা ছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হয় না। একবারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের জন্য কোন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন। এখন এই নির্বাচনে যদি তাঁর পরাজয় ঘটে, তা হলে তার দ্বারা মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদের স্থায়িত্বের অভাব সূচিত করে না। কার্টারের কাছে ফোর্ড (১৯৭৬), রেগনের কাছে কার্টার (১৯৮০), ক্লিনটনের কাছে বুশ (১৯৯২) পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু এই পরাজয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিক প্রধানের পদের স্থায়িত্ব বিপন্ন হয়নি। আবার পরাজিত হওয়ার আশংকায় কোন কোন মার্কিন রাষ্ট্রপতি দ্বিতীয় বার নির্বাচনপ্রার্থী হতে রাজি হননি। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ট্রুমান ও জনসনের কথা বলা যায়। এ পর্যন্ত কোন মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে ইম্পিচমেন্টের কারণে পদচ্যুত হতে হয়নি। তবে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে ইম্পিচ্মেন্টের আশংকায় রাষ্ট্রপতি নিকসন পদত্যাগ করেছিলেন।
সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের প্রধানের পদের স্থায়িত্ব:
উদারনীতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের পদের স্থায়িত্বের বিষয়টি পৃথক প্রকৃতির। অ্যালান বলের অভিমত অনুসারে এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় দলীয় কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থার উপর শাসন-বিভাগের প্রধানের পদের স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। তিনি তাঁর Modern Politics and Government শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “…it is very difficult to discuss the stability of chief executives in liberal democratic systems without reference to the party system and the electoral system.” ইতালী ও ফ্রান্সের সংসদীয় সরকারের অস্থায়িত্ব উদাহরণ হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সংবিধান -(১৯৫৮) প্রবর্তিত হওয়ার পর ফরাসী সরকারের অস্থায়িত্বের বদনাম ঘুচেছে। কিন্তু সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, গ্রেট ব্রিটেন প্রভৃতি দেশের শাসনব্যবস্থায় রাজনীতিক প্রধানের পদের স্থায়িত্ব বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে। ব্রিটেনে মন্ত্রিসভার পিছনে কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন সরকারের স্থায়িত্বকে সুনিশ্চিত করে। বর্তমানে ব্রিটেনে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে মন্ত্রিসভাকে অপসারিত করার ঘটনা ঘটে না। তবে নির্বাচনে জয় পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পরিবর্তন ঘটে থাকে। ব্রিটেনের শ্রমিক দল বা রক্ষণশীল দল সাধারণত তাদের প্রধানমন্ত্রীদের পিছনে দলীয় সাংসদদের সমর্থনের বিষয়টিকে অনিশ্চিত করে তোলে না। কোন প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থার অভাব ঘটলেও শাসক দল প্রধানমন্ত্রীকে অপসারিত করে না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ব্যালফোর ও চেম্বারলেনের কথা বলা যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন থাকাকালীন সময়ে হিউম (১৯৬৪), উইলসন (১৯৭০) ও হীথ (১৯৭৪)-এর দল সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তবে এই সব ঘটনাকে ব্রিটিশ সরকারের রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্বের অভাব হিসাবে গণ্য করা যায় না।
কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব অধিক:
আবার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় (authoritarian regimes) শাসন-বিভাগের প্রধানের কার্যকালের স্থায়িত্ব সাধারণত বেশী হয়ে থাকে। এই বক্তব্যের পক্ষে উদাহরণের উল্লেখ করতে গিয়ে বল বলেছেন: “Salazar, Mussolini and Hitler held power for thirty six, twenty-one and twelve years respectively and Franco ruled for over thirty years.” তবে সামরিক শাসনব্যবস্থায় নেতাদের মধ্যে সরকারী ক্ষমতা দখলের জন্য যদি লড়াই শুরু হয়, তা হলে অচিরেই সরকারের উত্থান-পতন ঘটতে পারে। বিপরীতক্রমে সমরনায়েক যদি দৃঢ়চেতা ও জবরদস্ত প্রকৃতির হন, তা হলে এ ধরনের সরকারের স্থায়িত্ব সুনিশ্চিত হয়।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্থায়িত্ব ও পরিবর্তন:
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসন-বিভাগের রাজনীতিক প্রধানের স্থায়িত্বের বিষয়টি মাত্রাযুক্ত। যৌথ নেতৃত্বের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থার একটি বড় বৈশিষ্ট্য। যৌথ নেতৃত্ব ও যৌথ দায়িত্ব সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বর্তমান থাকে। এই কারণে শাসন-বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কোন একজনের পদত্যাগ, পদচ্যুতি বা মৃত্যুর কারণে সরকারের স্থায়িত্ব বিপন্ন হয় না। আবার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে রাজনীতিক বা সরকারী ক্ষমতা দখলের জন্য নেতাদের মধ্যে তীব্র লড়াই প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের লড়াই-এ ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত, এমনকি গোপন-হত্যার ঘটনাও ঘটে। সাবেকী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এখানে অনুসৃত হয় না। সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতালিপ্স নেতারা প্রতিক্রিয়াশীল শোষণবাদী এবং আনুষঙ্গিক বহুবিধ অন্যায় উপায় পদ্ধতি অবলম্বন করতে দ্বিধা করেন না। এর ফলে সরকারী ক্ষেত্রে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতার আশংকা অস্বীকার করা যায় না। এই কারণে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় স্থায়িত্ব ও পরিবর্তন, এই উভয় উপাদানের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। অ্যালান বল তাঁর Modern Politics and Government গ্রন্থে বলেছেন: “The Soviet Union provides on illustration of stability and change in socialist systems.”
Leave a comment