‘শাশ্বত বঙ্গ’

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একদল তরুণ লেখক ও ভাবুকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ নামক সাহিত্য সংগঠন। এ সংগঠনের মুখপাত্র ছিল ‘শিখা’ নামক পত্রিকা। গতানুগতিকতা বিরোধী মনোভাবের ধারক ছিলেন ‘শিখা’ গোষ্ঠীর লেখকগণ। কাজী আবদুল ওদুদ ১৮৯৪-
১৯৭০] ছিলেন এ ধারার একজন লেখক। মুক্তবুদ্ধির ধারক ও বাহক, ধর্মীয় কুসংস্কার বা কূপমণ্ডুকতা মুক্ত, কাজী আবদুল ওদুদ ছিলেন পুনর্জাগরণে বিশ্বাসী প্রগতিশীল চিন্তার সমন্বয়বাদী লেখক। তিনি সমকালীন মুসলিম সমাজের প্রচলিত ভাবধারা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারাকে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উদারনৈতিক চিন্তা চেতনার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ‘শাশ্বত বঙ্গ’ (১৯৫১) প্রবন্ধ গ্রন্থটি। ‘শাশ্বত বঙ্গ’ গ্রন্থটি মূলত হিন্দু মুসলমানের মিলনমেলা। বিভিন্ন প্রবন্ধে সাহিত্য-স্বদেশ-সমাজ, ইসলামের মূল আদর্শ, মহৎ ব্যক্তিত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মমত প্রভৃতি বিষয়ে কাজী আবদুল ওদুদের মননশীল চিন্তা চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ‘শিখা’ ‘গোষ্ঠীর লেখকগণ যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন ‘শাশ্বত বঙ্গ’ গ্রন্থটি তারই এক মূল্যবান দলিল।

‘শাশ্বত বঙ্গ’ গ্রন্থে কাজী আবদুল ওদুদ তার সত্যার্থ চিন্তা ও বুদ্ধিকে সদাজাগ্রত ও সম্প্রসারিত করেছেন উদার মানবিকতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সীমানায়। তাঁর রচনার বিশ্লেষণ আছে গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের বিরোধ কোথায়, চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথের দূরত্ব কতটা। সেই সঙ্গে সমস্ত বিশ্লেষণকে সংযুক্ত করে আছে একটি সংশ্লেষণ। তিনি বহু বিষয়ে মৌলিক গতানুগতিক চিন্তাধারার অনুসরণ না করে নতুন করে ভেবেছেন। ফলে তাঁর লেখা অন্যের তথা পাঠকের মনে আলোড়ন তুলেছে। ‘শাশ্বত বঙ্গ’ প্রবন্ধ গ্রন্থে তাঁর সহজাত চিন্তা ও কর্ম প্রেরণার উৎস ছিল প্রীতি প্রসূত কল্যাণকামিতা। এখানে তিনি যে প্রগতিশীল মানসিকতা ও মুক্তবুদ্ধির স্বাক্ষর রেখেছেন তা তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।