দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম শৌখীন পূজারী বলতে সখের স্বাধীনতাসংগ্রামী বা দেশপ্রেমিকদের বুঝিয়েছেন।
স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে এমন কিছু লােক থাকে যারা শুধু নিজেদের নামকে বিখ্যাত করার তাগিদে দেশের লােকের সামনে তাদের নকল দেশপ্রেম জাহির করে বেড়ায়। এদেরকেই কবি শখের আন্দোলনকারী বলেছেন। আমরা জানি, সকল পূজারি প্রকৃত দেববন্দনা করে না। কিছু লােক নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ভক্তরূপে পূজা করে থাকে। ভগবান বন্দনার পেছনে লুকিয়ে থাকে তাদের অভীষ্ট সিদ্ধির নির্লজ্জ বাসনা।
রবীন্দ্রনাথের ভাষা ধার করে তাই বলা যায়, এই স্বার্থ- সন্ধানী লােকের পূজা পূজাই নয়, বেতন। এইরকম স্বার্থান্বেষী, সুযােগসন্ধানী সখের পূজারিদের সঙ্গে কবি এই দেশের শখের স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের তুলনা করেছেন। এরা প্রকৃত অর্থে দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমােচনের জন্য আন্দোলনকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দলে নাম লেখালেও একনিষ্ঠ হয়ে তাদের পথ অনুসরণ করে না। সবসময় নিজের স্বার্থ বজায় রেখে চলে। আবার সময়বিশেষে মত পরিবর্তন করে বিপক্ষের দলে যােগ দিয়ে প্রকৃত স্বদেশীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের কাজে বাধা দান করে। এরা কখনও দেশের বা দশের জন্য নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিতে এগিয়ে যায় না। কবির মতে, স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে সমাজে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা অর্জন এবং নিজের আখের গােছানাের মানসিকতাসম্পন্ন এইরকম শখের আন্দোলনকারীর কোনাে প্রয়ােজন নেই স্বাধীনতার লড়াইতে।
কাজি নজরুল ইসলামের স্বাধীনতার পটভূমিতে লেখা কবিতা ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী থেকে এই পক্তিটি নেওয়া হয়েছে। পরাধীন ভারতভূমিকে স্বাধীন করবার জন্য প্রতিবাদী বিপ্লবীদের শাস্তিস্বরূপ আন্দামানে নির্বাসিত করা হত। সেখানে লৌহ কারাগারে ব্রিটিশ প্রহরীদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করে তাদেরকে তেলের ঘানি ঘােরাতে হত, যেটা প্রকৃতপক্ষে পশুর ন্যায় শ্রমসাধ্য একটি কাজ। এখানে সেই ঘানির কথাই বলা হয়েছে। এই ঘানি পিষে তেল বের করতে করতে আমাদের বিপ্লবীদের চরম জীবনীশক্তি নিঃশেষিত হয়ে যেত, সমস্ত তেজ বেরিয়ে গিয়ে তারা নিস্তেজ হয়ে পড়ত। হারিয়ে যেত তাদের পুনরায় লড়বার ক্ষমতা। জীবনীশক্তিকে নষ্ট করে দেওয়ার ঘানিকেই এখানে জীবন-চুয়ানাে’ বাক্যবন্ধের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এইভাবে ক্রমাগত ঘানি ঘােরাতে ঘােরাতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনীশক্তি ফুরিয়ে গেলেও কবি জানেন যে, এইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মত্যাগ কখনােই সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার নয়। তাদের জীবনের তিতিক্ষা ও আত্মদানের নমুনাকে পাথেয় করে দেশের বাকি সকলের মনেও পরাধীনতার গ্লানি জাগিয়ে তুলতে হবে। দ্বীপান্তরে বন্দি বীরদের আত্মত্যাগ আর তিতিক্ষাই হল এখানে ‘আরতির তেল’। আর কবির স্থির বিশ্বাস—এই আরতির তেলের সাহায্যেই একদিন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিময়ী শিখা।
বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের লেখা দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় ভারতী বলতে ভারতবর্ষের তথা আন্দামানে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে নির্বাসিত দেশমাতাকে বােঝানাে হয়েছে।
ভারতমাতার পরাধীনতার কথা এই কবিতার ছত্রে ছত্রে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত মানুষজনকে ইংরেজ সরকার আইনের অপপ্রয়ােগের সাহায্যে আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠাতেন। দেশের মূলস্রোত থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ভারতের স্বাধীনতার জোরালাে দাবি বা আন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়াই ছিল এর একমাত্র উদ্দেশ্য। কবির কাছে আন্দামান তাই এমন এক জায়গা ‘রূপের-কমল রূপার কাঠির/কঠিন স্পর্শে যেখানে স্লান।’ রূপের-কমল’ বলতে এখানে দেশপ্রেমিক তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রাণশক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাধীনতার শতদল সেখানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ব্রিটিশ সান্ত্রি বা শস্ত্র-পাণির’ অর্থাৎ ইংরেজদের পুলিশ-প্রশাসনের নির্মম আঘাতে। অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিপ্লব সাধনাকে এইভাবে দমন করার চেষ্টাকে সান্ত্রীর সাহায্য বীণার তন্ত্রীকে ছিন্ন করে দেওয়ার মতাে কাজ বলে কবি উল্লেখ করেছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসককে কবি এই কবিতায় রক্ষ-পুর’ বা ‘যক্ষপুরী’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
এ ছাড়াও কংগ্রেসের আবেদন-নিবেদন নীতিতেও কবির ঘাের সংশয় ছিল। তাই কবি জানেন যে, এদেশের স্বাধীনতা লাভের পথ মােটেও সুগম নয়। এত কিছুর পরেও অবশ্য, কবিতাটির শেষ পর্যায়ে কবির আশাবাদী কণ্ঠস্বর ই শােনা যায়। কবি সেখানে স্থির প্রত্যয়ে জানান, ভারতের স্বাধীনতা লাভের সুযােগ প্রায় সমাগত, কারণ ‘দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে/যুগান্তরের ঘুর্ণিপাক’।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকদের অত্যাচারী স্বরূপকে প্রকাশ করেছেন। ইংরেজ শাসকেরা শুধু স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনরত সংগ্রামীদের আন্দামানে নির্বাসনেই পাঠাত না, প্রতিবাদীদের উপর নেমে আসত নির্মম অত্যাচার। স্বাধীনতার শতদলকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হত অস্ত্রের আঘাতে। বীণার তন্ত্রী অর্থাৎ স্বাধীনতার দাবিকে সান্ত্রীর তরবারি ছিন্ন করে দিত। সত্য বললে এখানে বন্দি হতে হত। অত্যাচারের প্রতিবাদ তাে দূরের কথা, অত্যাচারের কথা বলারও অধিকার ছিল না। সাধারণ মানুষের উপরে এই দমনপীড়ন এবং স্বাধীনতার কণ্ঠরােধের প্রচেষ্টাতেই দেশ রক্তলাঞ্ছিত হয়।
এই রক্তাক্ত অধ্যায় সমাপ্ত হতে পারে একমাত্র স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে। বন্দিনী বাণী’র মুক্তির অর্থ ‘রক্ষ-পুর ইংরেজ শাসনের অবসান। ‘কামান গােলার সীসা-স্তৃপে স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা এই অরাজক অবস্থার অবসান ঘটাতে পারে। স্বাধীনতাই পারে দেশে শান্তি নিয়ে আসতে। সাম্রাজ্যবাদী শাসনে। অপবিত্র স্বদেশভূমি পবিত্র হয়, স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠায়। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের যে ঘূর্ণিপাক কবি প্রত্যক্ষ করেছেন তাই ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাবে। আর তার মাধ্যমেই, অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠাতেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটতে পারে।
“নাই কিনারা নাই তরণী পারে”- মন্তব্যটির প্রকৃত অর্থ বিশ্লেষণ করাে। সেখানে যাওয়ার অন্য কোন্ পথের কথা কবি উল্লেখ করেছেন?
“হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা নাই রে”—মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। এরকম পড়শী কবিকে স্পর্শ করলে কী হত?
“সে আর লালন একখানে রয় / তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে।”— একখানে থাকার তাৎপর্য কী?
“তবু লক্ষ যােজন ফাক রে” -লক্ষ যােজন ফাক বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
বাউল তত্ত্ব ভাবনার উৎপত্তি কীভাবে হয়েছে লেখাে।
বাউল সাধক লালন ফকির কীভাবে চিত্ত পরিশুদ্ধির কথা বলেছেন?
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ ‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
লালনের মতে যম-যাতনা কীভাবে দূর করা যেতে পারে?
‘বাড়ির কাছে আরশীনগর’ কবিতায় বর্ণিত ‘পড়শী’-র স্বরূপ বর্ণনা করাে।
পাঠ্য লালন-গীতিতে বাউল সাধনার যে গুহ্যতত্ত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -কবি কী বা করছেন এবং কেন?
“আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি” -বক্তা কাকে দেখতে চান? কিভাবে তার দর্শন পাওয়া যাবে?
“ও সে ক্ষণেক থাকে শূন্যের উপর/আবার ক্ষণেক ভাসে নীরে।” -কার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“..এক পড়শী বসত করে।” -পড়শী বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন? বক্তা তার পড়শীকে দেখতে পাচ্ছেন না কেন তা কবিতা অবলম্বনে আলােচনা করাে।
“আমার বাড়ির কাছে আরশীনগর” -কার বাড়ি? আরশীনগর কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির যে স্বদেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে তা আলােচনা করাে।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শাসকের যে বর্ণনা কবি দিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখাে।
দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির রচনাশৈলীর অভিনবত্ব আলােচনা করাে।
“কামান গােলার সীসা-স্তৃপে কি / উঠেছে বাণীর শিশ মহল?” -কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিচার করাে।
“হায় শৌখিন পূজারী, বৃথাই/দেবীর শঙ্খে দিতেছ ফু” -মন্তব্যটির তাৎপর্য উল্লেখ করাে।
“মুক্ত কি আজ বন্দিনী বাণী?/ধ্বংস হল কি রক্ষপুর?” -মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“শতদল যেথা শতধা ভিন্ন / শস্ত্র পাণির অস্ত্র-ঘায়” -মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।
“বাণী যেথা ঘানি টানে নিশিদিন, / বন্দী সত্য ভানিছে ধান,” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করে কবি নজরুলের স্বদেশচেতনার পরিচয় দাও।
“আইন যেখানে ন্যায়ের শাসক,/সত্য বলিলে বন্দী হই” -অংশটির মধ্য দিয়ে কবির কোন মনােভাব প্রতিফলিত হয়েছে?
“বাণীর মুক্ত শতদল যথা আখ্যা লভিল বিদ্রোহী” -এই মন্তব্যটির মাধ্যমে বক্তা কী বােঝাতে চেয়েছেন?
“দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক”। -‘যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক’ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“ধ্বংস হল কি রক্ষ-পুর”—‘রক্ষ-পুর’ কী এবং কীভাবে তা ধ্বংস করা সম্ভব?
Leave a comment