‘ভক্তের আকৃতি পর্যায়ের পদে প্রতিবিম্বিত সামাজিক চিত্রের বিস্তৃত বিবরণ লিপিবদ্ধ করো। বৈচিত্র্য ও জটিলতার দিক হইতে উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হয় কী।
সাহিত্যকে বলা হয় সমাজ জীবনের দর্পণ। যে ব্যক্তিমানুষ সাহিত্য রচনা করেন, তিনি সমাজেরই সৃষ্টি, সমাজ পরিবেশই তার ব্যক্তিমানস গঠন ক’রে থাকে। কাজেই রচনার বিষয় যদি একান্তভাবে বস্তুনিষ্ঠ না হয় এবং ব্যক্তিমানুষটিও যদি একান্তভাবে সংসার-বিবিক্ত না হয়ে থাকেন, তবে তার রচনায় সমাজ জীবনের ছায়াপাত ঘটবেই, এই সত্য অনস্বীকার্য। এই সত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যদি আমরা শাক্ত পদাবলীকে বিচার করি, তাহলে এর মধ্যে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষীভূত হয়। শাক্ত পদাবলীর যে অংশটি ‘উমাসঙ্গীত’ বা ‘আগমনী বিজয়া’র গান বলে পরিচিত, সেখানে একটি ঘরোয়া কাহিনী এবং কয়েকটি চরিত্র বর্তমান। কাহিনীটি পৌরাণিক হলেও সমসাময়িক যুগ ও জীবনের একটি বিশ্বাসযোগ্য আলেখ্যের পরিচয় এতে পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে, শাক্ত পদাবলীর যে অংশ ‘শ্যামাসঙ্গীত’ নামে পরিচিত, এর অন্তর্ভুক্ত দুটি প্রধান শ্রেণী – ‘জগজ্জননীর রূপ’ এবং ‘ভক্তের আকৃতি’। ‘জগজ্জননীর রূপ’ একান্তভাবেই বস্তুনিষ্ঠ এবং ভক্তের আকৃতিতে মাতৃসাধনার প্রেক্ষাপটে ভক্তহৃদয়ের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এতে ভক্তের সামগ্রিক জীবনবোধের পরিচয় নেই, কিন্তু যে সংসার জ্বালার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য ভক্ত মাতৃচরণে শরণ গ্রহণ করতে চান, সেই সংসারজীবনের কিছুটা চিত্র পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, এই সংসার জীবনে সমসাময়িক সমাজ জীবনেরই প্রতিরূপ মাত্র।
‘আগমনী-বিজয়া’র গানে একটি পৌরাণিক পটভূমিকা থাকলেও আসলে এটি মধ্যবিত্ত বাঙালী গৃহস্থ ঘরের রূপেই চিত্রায়িত হয়েছে। গিরিরাজ হিমালয়, মেনকা, উমা এবং মহাদেবকে। নিয়ে যে সাংসারিক জীবনের পরিচয় শাক্তপদাবলীতে প্রকাশিত হয়েছে তা কোনো দেবী বা স্বর্গীয় ব্যাপার নয়—–চিরন্তন মানসিক ব্যথা-বেদনার কাহিনীই এঁদের নামে পরিবেশিত হয়েছে। কাহিনীর মূল চরিত্র মেনকা কন্যার বিচ্ছেদ কাতরা হতভাগিনী স্নেহপরায়ণা বঙ্গজননী; গিরিরাণী হয়েও যে তিনি তার অষ্টমবর্ষীয়া কন্যা উমাকে নেশাখোর বিহীন বৃদ্ধ বরের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন, সম্ভবত তৎকালীন সমাজশাসন তার পশ্চাতে ক্রিয়মান ছিল। বিবাহের পর সাধারণত বিশেষ উপলক্ষ্য ছাড়া কন্যারা একবারই পিতৃগৃহে আগমনের সুযোগ পেতেন। সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কন্যা-বিচ্ছেদ-বিধুরা জননীকে পাঠাতেন কন্যার স্বামীগৃহে – কন্যা-জামাতাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কন্যাকে সঙ্গে ক’রে নিয়ে আসতেন কন্যার পিতা। জননীর পক্ষে স্বয়ং জামাতৃ-গৃহে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই ঘরে বসে তাঁকে বিরহ-যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়—
‘কামিনী করিল বিধি, তেঁই হে তোমারে সাধি
নারীর জনম কেবল যন্ত্রণা সহিতে।’
মনে হয়, সেকালে বর্ধিষ্ণু গৃহস্থরা কেউ কেউ ঘর জামাই পুষতেন। মহাদেব উমাকে বিবাহ ক’রে হিমালয়-গৃহে দীর্ঘকাল ঘর-জামাইরূপে অধিষ্ঠিত ছিলেন—মঙ্গলকাব্যে এই কাহিনী বর্ণিত হলেও শাক্তপদে এরূপ ঘটনার উল্লেখ নেই, কিন্তু মা মেনকার যে এরূপ একটি মনোগত ইচ্ছা ছিল তা প্রকাশ পেয়েছে কোনো অজ্ঞাত কবির একটি পদে—
‘আমার মনে আছে এই বাসনা
জামাতা সহিতে আনিয়ে দুহিতে,
গিরিপুরে করবো শিব-স্থাপনা।’
লৌকিকতা বা সমাজিকতার ব্যাপারে উদাসীন গৃহকর্তার তুলনায় গৃহিণীরা যে অধিকতর সচেতন ছিলেন, তার পরিচয় পাওয়া যায় মেনকার উক্তিতে। স্বামীকে কৈলাসে পাঠাবার সময় বলে দিলেন—
‘শিবকে পুজবে বিহুদলে, সচন্দন আর গঙ্গাজলে
ভুলবে ভোলার মন….
এনো কার্তিক গণপতি লক্ষ্মী সরস্বতী ভগবতী
এনো মস্তকে করে।।
জামাই যদি আসেন, এনো সমাদর করে।’
সেকালে গৌরীদান প্রথা প্রচলিত ছিল বলেই উমাকে অষ্টমবর্ষেই স্বামীর হস্তে সমর্পণ করা হয়। তৎকালে বহু-বিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল, তাই জেনেশুনেও অনেকেই স্বীয় কন্যাকে সতীনের ঘরেই তুলে দিতেন, যদিও তার জন্য জননীকে অনেক সময় মনস্তাপও ভোগ করতে হত। বুদ্ধিমতী কন্যা অবশ্যই সান্ত্বনা দিয়ে মার যন্ত্রণা লাঘবে যত্নবতী হত। যেমন, মার জিজ্ঞাসার উত্তরে উমা বলেছেন—
‘শুনেছ সতীনের ভয়, সে সকল কিছু নয় মা
তোমার অধিক ভালোবাসে সুরধনী।’
কিংবা—
‘সত্য বটে সুরধনী, অগ্রজা সমান মানি,
সে দারা ভগিনী জিনি, অধিক যতন করে।’
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা চলে যে গঙ্গা ছিলেন শিবের অপরা পত্নী, এখানে উমার সতীন রূপে শিবের মস্তক স্থিতা সেই গঙ্গার কথাই বলা হয়েছে।
স্বামীর অনুমতি ভিন্ন স্ত্রীর পক্ষে পিতৃগৃহে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই গিরিরাজ কৈলাসে গিয়ে উমাকে নিয়ে আসতে চাইলে উমা স্বামীর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন—
‘গঙ্গাধর হে শিবশঙ্কর, কর অনুমতি হর,
যাইতে জনক-ভবনে।’
জামাতা শ্বশুর গৃহে আমন্ত্রিত হ’লেও অধিক দিন থাকতে হতে পারে, এই ভয়ে পত্নীর সঙ্গে যেতেন না; তিনি পরে গিয়ে পত্নীকে নিয়ে আসবেন—
‘ঐ দ্বারে বাজে ডম্বুর, হর বুঝি নিতে এল।
নবমী না পোহাইতে অমনি এসে দেখা দিল।’
তৎকালে গ্রামীণ সমাজে কোনো পরিবারই অপর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। এক পরিবারের সুখদুঃখে অপর পরিবারও সমান অংশীদার হ’ত। তাই বৃদ্ধ ভিখারী শিবের হাতে উমাকে দান করায় তা যেমন প্রতিবেশীদের সমালোচনার বিষয় ছিল, তেমনি উমার পিতৃগৃহে আগমনে প্রতিবেশীরাও সমান উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন। পুরবাসীরা মেনকাকে ভৎসনা করে বলেন—
‘নারদের বাক্য-কৌশলে, না জেনে-শুনে কি বলে,
মেয়েকে ফেলিলে জলে, ভূধর রমণি।
বিয়ে দিলে এম্নি বরে, ভিক্ষা করে কাল হরে
অন্নবস্ত্র নাইকো ঘরে, অতি দুঃখিনী।’
আবার উমার আগমনে উল্লসিত পুরবাসী—
“পুরবাসী বলে-“উমার মা,
তোর হারা তারা এলো ওই।’
শুনে পাগলিনীর প্রায়, অমনি রাণী ধায়,
‘কই উমা’ বলে ‘কই’।”
বক্তৃত ‘আগমনী-বিজয়া’র গানে সমকালীন বাঙালী সমাজ-জীবনের সুন্দর পরিচয় পাওয়া যায়, শারদ প্রকৃতি, বাংলার উৎসব সামাজিক রীতি-নীতি প্রভৃতির চিত্র ঐ সমস্ত গানে মূর্তিমান হয়ে উঠেছে।
‘ভক্তের আকৃতি’ পর্যায়ের শাক্ত পদগুলিতে সমসাময়িক সমাজের যে অবক্ষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তার সম্যক পরিচয়ের জন্য সে কালের ঐতিহাসিক বিবরণের সঙ্গে একটু পরিচয় থাকা প্রয়োজন। অষ্টাদশ শতকের প্রারম্ভকাল থেকেই সমগ্র দেশ জুড়ে চলছিল একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশেও সংক্রামিত হয়েছিল সেই স্থিতিহীনতা। রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার সঙ্গে আর্থনীতিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ও ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে।
বাংলার তাৎকালিক অবস্থার চিত্র— ‘‘মুর্শিদাবাদের শাসনযন্ত্রের বিশৃঙ্খলা ও নিপীড়ন অপেক্ষা ভূস্বামী-সামন্ত প্রভুদের শোষণ ও নিপীড়ন কিছু কম ছিল, এমন নয়। তাঁহাদের নিজেদের মধ্যেও নানা স্বার্থের বিরোধ, নানা ব্যক্তিগত আক্রোশ ও শত্রুতা ইত্যাদি অবলম্বন করিয়া বিচিত্র চক্রান্ত লাগিয়াই ছিল। একজন আর একজনের স্বার্থে আঘাত করিতে, অপরের শত্রুতা সাধন করিয়া নিজের স্বার্থ সাধন করিতে কিছুমাত্র দ্বিধা করিতেন না। আর প্রজার রক্ত শোষণ করিয়া, ছলে, বলে, কলে, কৌশলে, অত্যাচারে, নিপীড়নে রাজস্ব ও অন্যান্য নানাপ্রকারের কর আদায় করিয়া নিজেদের প্রভুত্ব ও ঐশ্বর্য অক্ষুণ্ণ রাখিবার চেষ্টা, ইহা তো তাহাদের নিত্যকর্মই ছিল।”
দেশের যখন এরূপ অবস্থা, তেমন সময় আবির্ভূত হলেন সাধক কবি রামপ্রসাদ হাতে তার আলোর মশাল। তিনিই প্রথম শাক্তপদ রচনা করে আশাহীন, আশ্বাসহীন, নিরানন্দ জীবনে মাতৃচরণে শরণ গ্রহণের আহ্বান জানালেন। তাঁকে অনুসরণ ক’রে আরো শতাব্দীকাল শাক্তপদ রচনা চলতে লাগলো।
শাক্তপদের রচনাকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘ক্রান্তিকাল’ নামে অভিহিত হয়। এই কালের যুগযন্ত্রণার কিছু চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় বিভিন্ন শাক্তপদে। সেকালে সাধারণ মানুষের মনে যে বিক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছিল, রামপ্রসাদের নিম্নোক্ত পদটিতে তার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়—
‘করুণাময়ি কে বলে তোরে দয়াময়ী।
কারো দুগ্ধেতে বাতাসা, (গো তারা) আমার এমনি দশা
শাকে অন্ন মেলে কৈ।।
কারে দিলে ধনজন মা হস্তী অশ্ব রথচয়।
ওগো তারা কি তোর বাপের ঠাকুর, আমি কি তোর কেহ নই।’
অপর একটি পদে বলেছেন—
‘কেহ যায় মা পাল্কী চড়ে, কেহ তারে কাঁধে করে।
কেহ গায় দেয় শালদোশালা, কেহ পায় না ছেঁড়া টেনা।’
মানুষে মানুষে শুধু এজাতীয় পার্থক্যের কথাই কবিরা বলেন নি, অযোগ্য জনে পুরস্কার দান এবং সাধারণের ওপর অবিচারের কথাও কবি বলেছেন।—
‘প্যাদার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার নামেতে নিলাম জারি।
ঐ যে পান বেচে খায় কৃষ্ণ পাপ্তি তারে দিলে জমিদারি।’
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জমিদারি নিলাম হল, আর পান-বিক্রেতা কৃষ্ণকাপ্ত হলেন রাজা—এই অবিচার জনসাধারণকে বিস্মিতই করে। শুধু তাই নয়, কবি নিজেও বিস্মিত হয়ে ভাবেন তার ওপরই বা কেন এত অবিচার !–কবি বলেন,
‘কোন্ অবিচারে আমার ‘পরে করলে দুঃখের ডিক্রি জারি।
এক আসামী ছয়টা প্যাদা, বল মা কিসে সামাই করি।…
হুজুরে উকিল যে জন্য, ডিমিসে তার আশয় ভারি।
করে আসল সন্ধি, সওয়াল ফন্দি, যেরূপে মা আমি হারি।’
এই দুর্গতির মধ্যে পড়ে কবি অর্থাৎ সাধারণ লোক ভাবতে বসেন—’বল কিবা উপায় করি।’
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আরও এক ধরনের অত্যাচারের কথা একাধিক কবি উল্লেখ করেছেন, সেটি হল নিপীড়নের সাহায্যে আদায় তশিল করা।—
‘মসিল ছয় দূত, তশিল করে কত’
অথবা—
‘মসিল দিয়ে তশিল করে।’
শাক্ত কবিদের বিশেষভাবে সাধক কবি রামপ্রসাদের ভক্তি সাধনার পদগুলিতে গ্রামবাংলার সমাজচিত্রের যে বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে, সে সম্পর্কে মনীৰী অধ্যাপক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য ও দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন, তা থেকে আমরা সমসাময়িক সমাজজীবনের একটি সুন্দর আভাস পেতে পারি।
তিনি লিখেছেন— “রামপ্রসাদের সংসার চিত্রের মধ্যে এরূপ অবাস্তবতা ও দৃষ্টিবিভ্রমের মরীচিকা নাই। সংসারের খেরুয়া খাতাকে তিনি ভক্তির স্বর্ণসূত্রে শতপাকে জড়াইয়াছেন। তিনি হিসাবের বই-এ কালীনাম লেখেন জগদীশ্বরী কন্যারূপে তাঁহার বেড়া বাঁধিতে সাহায্য করেন। আদালতের পেয়াদা যখন তাহার ওপর ডিক্রি জারি করিতে আসে তখন তাহার তকমার ওপর কালীনামের শীলমোহর অঙ্কিত থাকে। সংসারের শত তুচ্ছ অভাব অভিযোগ, পীড়ন-অপমানের রন্ধ্রপথ দিয়া তিনি কালীর কল্যাণহস্তের স্পর্শ অনুভব করেন। জীবনের খেলাধূলা, ক্রীড়াকৌতুক সবই তাঁহার কাছে অধ্যায়লোকের দ্বার উন্মুক্ত করে। পাশাখেলার এক অদৃশ্য বস্তু তাহার দান উল্টাইয়া দেয় ও পাকা ঘুটিকে কঁাচা করে ও কাচাকে পাকাইয়া দেয়। মন-ঘুড়ি কালীপদ— আকাশের ঊর্ধ্বলোকে উড়িতে উড়িতে হঠাৎ কু-বাতাসের ঝাপটায় পৃথিবীর কাছাকাছি নামিয়া আসে ও আবিল বায়ুস্তরে মাথা লুটাইয়া পড়ে। প্রত্যেকটি ব্যবসায় ও বৃত্তি অপার্থিব জীবনসাধনার প্রতীকরূপে তাঁহার নিকট প্রতিভাত হয়। কৃষি কর্মরত কৃষককে দেখিয়া অকস্মাৎ তাঁহার মনে জাগে যে, স্বর্ণপ্রসূ মানবজমিন অকর্ষিত রহিয়া গেল এবং চাষের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার রূপকে সাধনার সমস্ত ক্রমগুলি তাহার মনে পুনরাবৃত্ত হয়। চোখে ঠুলি-আঁটা কলুর বলদ তাঁহাকে অনিবার্যভাবে মোহাগ্ধ, প্রবৃত্তিতাড়িত মানবজীবনের কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। জেলের জাল ফেলায় মৎস্য কুলের আকুলতা মহাকালের পাশবন্ধ হইবার জন্য অসহায়ভাবে প্রতীয়মান মানবের করুণ চিত্রটি তাহার মনে ফুটাইয়া তোলে। সুতরাং রামপ্রসাদের ভক্তিসাধনার পদগুলিতে বাংলা গ্রামীণ চিত্রের সমগ্রতা প্রতিবিম্বিত হইয়াছে।”
অতএব বিচার করলে দেখা যায় যে শাক্তকবিরা সমাজ বিষয়ে যথেষ্টই সচেতন ছিলেন; তবে ‘আগমনী-বিজয়া’র ‘উমা-কীর্তনে’ প্রাধান্য পেয়েছে পারিবারিক জীবন এবং ‘জগজ্জননীর রূপ’ ও ‘ভক্তের আকৃতি’র ‘শ্যামা কীর্তনে’ পারিবারিক জীবন অপেক্ষা সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর সমাজ জীবনের চিত্রই স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে।
Leave a comment