সূচনা: ইসলাম কেবলমাত্র একটি ধর্ম নয়, তা হল মানুষের পূর্ণাঙ্গ একটি জীবনব্যবস্থা, কেননা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণের বিধিবিধান দেয় ইসলাম। এই সমস্ত বিধিবিধানগুলি ইসলামি পরিভাষায় হল শরিয়ত। শরিয়তে মুসলমানদের অধিকার বা কর্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে।
[1] ধর্মীয় অধিকার: মুসলমানদের কাছে আল্লাহ্ একমাত্র উপাস্য। এ প্রসঙ্গে কালেমায়ে তাইয়্যেবার প্রথম অংশে বলা আছে লাইলাহা ইল্লাল্লাহ্ (আল্লাহ ছাড়া আর কোনাে উপাস্য নেই)। মুসলমানরা কোরান বা সুন্নাহর বিধান মেনে চলেন। তাদের অন্যান্য কয়েকটি ধর্মীয় অধিকার হল ইবাদৎ (উপাসনা), নামাজ, রােজা, জাকাত প্রভৃতি।
[2] ব্যক্তিগত অধিকার: শরিয়তের লক্ষ্য হল সমগ্র মানবজাতির কল্যাপসাধন। শরিয়তে প্রত্যেকটি মানুষের নিজের ওপর অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। নিজের সন্ত্রম রক্ষা প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত অধিকার। এ ছাড়া পারিবারিক উত্তরাধিকার, আইনগত নিরাপত্তা প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারেরই অন্তর্ভুক্ত।
[3] অন্যের অধিকার: শরিয়তে নির্দেশ রয়েছে ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষিত বা ভােগ করতে গিয়ে অন্যের অধিকার যেন ব্যাহত না হয়। নিজেদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করতে গিয়ে অপরের স্বাধীনতা যেন বিপন্ন না হয়। জালিয়াতি বা প্রতারণা করা, অসাধু কাজে লিপ্ত হওয়া, শরিয়তে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এগুলির মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতিসাধন করে নিজে লাভবান হয়। শরিয়তে জুয়া খেলা, লুঠতরাজ চালানাে, মদ্যপান করা, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া প্রভৃতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বলে উল্লিখিত হয়েছে। পাশাপাশি একচেটিয়া ব্যাবসার দ্বারা মুনাফা অর্জন, মজুতদারি দ্বারা অবৈধ পথে অর্থ অর্জন বা চোরাই কারবার দ্বারা হঠাৎ করে বিত্তবান হয়ে ওঠাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
[4] সৃষ্টজীবের অধিকার: আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল মানুষ। এই দুনিয়ায় আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেগুলি সবই মানুষের প্রয়ােজনে। কিন্তু জগতের এইসমস্ত ঐশ্বর্য শুধু ভােগ করেই মানুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে প্রমাণ করতে পারে না। মানুষের সেবা করার জন্য আল্লাহ্ যে সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন সেগুলিকে রক্ষা করাও মানুষের বিশেষ কর্তব্য। মানুষ গাছের ফল লাভের অধিকারী হলেও গাছ কাটা বা তাকে বিনষ্ট করার অধিকারী কখনই নয়। বিশেষ উদ্দেশ্য ছাড়া পাখি ধরা বা তাকে খাঁচায় আটকে রাখাও নিষিদ্ধ।
[1] শরিয়ত সম্পর্কে: শরিয়ত হল ইসলামি বিধিবিধান। কিন্তু আলাউদ্দিন তাঁর পূর্ববতী সুলতানদের মতাে শরিয়তের বিধান মেনে দেশশাসনে বিশ্বাসী ছিলেন না। রাষ্ট্রের প্রয়ােজনে তিনি শরিয়তি করব্যবস্থা বাতিল করেন এবং বস্তু নতুন কর ধার্য করেন। আলাউদ্দিন “I am the state”—এই নীতিতে বিশ্বাসী হওয়ায় শরিয়তি বিধিকে অমান্য করার সাহস দেখান। রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতাকে সম্পূর্ণ রূপে কুক্ষিগত করেন। দিল্লির সুলতান হিসেবে আলাউদ্দিন-ই প্রথম খলিফার সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানান।
Leave a comment