ভূমিকাঃ যুগের পরিবর্তনের ফলে মানবসমাজের জীবনযাত্রা অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি লাভ করছে এবং তা কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, আধুনিক সময়ে সরকারের কার্যাদি ও দায়িত্ব অভূতপূর্ব ও অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। ফলে সরকারি প্রশাসকগণের কাজ অত্যন্ত মৌলিক ধরনের ও জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সকল কারণে লোক প্রশাসন আধুনিক সমাজে মৌলিক গুরুত্ব অর্জন করেছে। স্বাভাবিক ও শান্তিকালীন সময়ই হোক আর যুদ্ধকালীন সময় ও জরুরি অবস্থাই হোক, যে কোন সময়েই লোক প্রশাসন অধ্যয়নের অপরিহার্য গুরুত্ব রয়েছে। আধুনিককালে লোক প্রশাসন অভূতপূর্বভাবে সম্প্রসারণ লাভ করেছে।
লোক প্রশাসন শাস্ত্রের বিকাশের উপাদানসমূহঃ যে সকল পরিস্থিতি ও উপাদান লোক প্রশাসনের বিকাশের পক্ষে কাজ করছে, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার উদ্ভব (Emergence of the Concept of Welfare State) : আধুনিককালে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার উদ্ভবের ফলে লোক প্রশাসন এক নতুন গুরুত্ব তাৎপর্য লাভ করেছে। বর্তমান সময়ের রাষ্ট্র আর ‘পুলিশী রাষ্ট্র’ (Police state) নয় বরং জনসাধারণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধনের জন্য এটিকে যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হচ্ছে। এটিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণ, প্রতিরক্ষা বিধান, ন্যায়-পরিচালনা ইত্যাদি গতানুগতিক কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। এ ছাড়াও সমাজকল্যাণকর কার্যাদি, জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য ও জনশিক্ষার ব্যবস্থা, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বন্দোবস্তকরণ, গৃহ- নির্মাণ, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান ইত্যাদি কার্যাদি সম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। বৰ্তমান সময়ে রাষ্ট্রকে দেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যাদির উদ্যোক্তা, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতে হয়। এটির ফলে সকল গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়েই লোক প্রশাসনের প্রকৃতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটেছে। ঐ সকল সরকারি কার্যাদি দক্ষতা ও মিতব্যয়ের সাথে পালন করতে গিয়ে, লোক প্রশাসনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতি, কলাকৌশল ও সংগঠন উদ্ভাবন করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লোক প্রশাসন বিষয় সম্পর্কে অধ্যয়নের দিকে জনসাধারণের আগ্রহ ও মনোযোগ ক্রমশ নিবদ্ধ হচ্ছে।
২। প্রশাসনিক যন্ত্রের বিকাশ (Growth of Administrative Instrument) : রাষ্ট্রের প্রশাসনিক যন্ত্রের বিকাশের ফলেও লোক প্রশাসনের প্রসারতা ঘটেছে। বর্তমান সময়ে সরকারের অনেক কার্যাবলিই নতুন ধরনের এবং এ সকল কার্য সম্পাদনকারী অধিকাংশ বিভাগই নব-প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ক্ষেত্রেই সরকারের পুরানো বিভাগগুলোর কার্যাবলি বৃদ্ধি ও অভাবনীয়ভাবে পরিবর্তন লাভ করেছে। বর্তমান সময়ে পাবলিক কর্পোরেশন, ব্যুরো, কাউন্সিল, কমিশন, বোর্ড ইত্যাদি ধরনের বিভিন্ন নতুন নতুন প্রশাসনিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্ভব ঘটেছে। সরকারি কার্যাদির প্রকৃতি, পরিমাণ ও লক্ষ্য অনুযায়ীই ঐ সকল সংস্থা গঠন করতে হয়েছে এবং দেশের শাসন বিভাগ, আইন-সভা, সরকারি সার্ভিস ও জনসাধারণের সাথে ঐ সকল সংস্থার নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ সকল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লোক প্রশাসনের অনেক মূলনীতিকেই পুনঃপরীক্ষা ও পুনর্মূল্যায়ন করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে৷
৩। প্রশাসনিক সমস্যাবলির প্রতি গুরুত্ব প্রদান (Giving Importance to the Administrative Problems): রাজনৈতিক দার্শনিকগণ পূর্বে রাজনৈতিক মতবাদ ও রাজনৈতিক সংগঠনের সমস্যাবলির প্রতিই মনোনিবেশ করেছিলেন। তারা প্রশাসনিক দিক বা প্রশাসনিক সমস্যাবলির প্রতি মনোযোগ প্রদান করেন নি। কিন্তু আধুনিক সময়ে আমরা প্রশাসনিক সমস্যাবলির প্রতি ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব আরোপ করাই। সভ্যতার অগ্রগতি ও প্রশাসনিক সমস্যাটির সম্পসারণ লাভের ফলে লোক প্রশাসনও অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে ও এক স্বতন্ত্র বিজ্ঞানে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসন-যন্ত্রের কার্যক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক এবং প্রশাসনিক কার্যাদি সম্পাদনের জন্য বিপুলায়তন ও জটিল সংগঠন ও কার্যপদ্ধতির প্রয়োজন হয়। প্রশাসনিক সংগঠন, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনিক এলাকা, প্রশাসনিক কার্য-পদ্ধতি, প্রশাসকগণের যোগ্যতা ও দক্ষতা বিধান, কর্তৃত্ব কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ, ক্ষমতা অর্পণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বহুবিধ ধরনের সমস্যাদি আধুনিক সময়ে জরুরি বলে বিবেচিত হচ্ছে এবং এদের ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে অনুশীলন করা হচ্ছে। ফলে লোক প্রশাসন শাস্ত্রের সম্প্রসারণ ঘটছে।
বস্তুত বর্তমানে প্রশাসনিক সমস্যাদি জটিল ও প্রযুক্তিগত হওয়ায় তাদিগকে বিজ্ঞানসম্মত ও বিশেষ জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মোকাবিলা করতে হবে। প্রশাসন-কার্য একটি বিশেষজ্ঞ পেশাতেই পরিণত হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণের প্রয়োজন অনিবার্য। হারবার্ট ইমারিক (Herbert Emmerich)-এর ভাষায়, প্রশাসনের জটিল কার্যাদি পালনের জন্য প্রয়োজন রয়েছে “সর্বোচ্চ প্রতিভা, সর্বোচ্চ গুণাবলি ও সর্বোচ্চ মাত্রায় মনোনিবেশের।” (The highest talents, the highest virtues, the highest devotion)।
৪। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নয়ন (Development of Science and Technology): বর্তমানকালে বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও বিকাশ এবং প্রযুক্তিবিদ্যার দ্রুত উন্নতিসাধন এবং মানবজীবন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদির উপর তাদের প্রভাব-এ সবকিছুই লোক প্রশাসন অধ্যয়নের বিকাশের পশ্চাতে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করছে। শিল্প-বিপ্লব এবং এর ফলস্বরূপ নতুন নতুন ও উচ্চ মাত্রায় টেকনিক্যাল বিষয়াদির ক্ষেত্রে লোক প্রশাসনের সম্প্রসারণ প্রশাসনিক কার্য-প্রক্রিয়াকে এতই জটিল ও ‘স্পেশালাইজড’ করে তুলেছিল যে, এটি সাধারণ ও অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানুষের আওতার বাইরে চলে গিয়েছিল। এর ফলে পেশাদার সিভিল সার্ভিসগুলোর উদ্ভব ঘটে। সিভিল সার্ভেন্টগণের প্রশাসনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকেই ক্রমশ প্রশাসনিক নীতিমালা ও নিয়মকানুনে সুব্যবস্থিভভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়। এ সকল বিষয় সম্পর্কে কেবল প্রশাসকগণই দীর্ঘকাল ধরে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিন্তু যখন প্রশাসনিক কার্য ও প্রক্রিয়াগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে জনসাধারণের প্রাত্যহিক জীবন-যাত্রাকে প্রভাবিত করতে লাগল, তখন প্রশাসনের বাইরের লোকজনও এর সমস্যা ও কার্য পদ্ধতিসমূহ সম্পর্কে উৎসাহ দেখাতে লাগলেন এবং লোক প্রশাসন সম্পর্কে তত্ত্বভিত্তিক ও শিক্ষাপ্রদ আলোচনার সূত্রপাত ঘটে।
এছাড়া, শিল্পায়নের ফলে বর্তমানকালে বিরাট বিরাট সংগঠন গড়ে তুলতে হয়েছে। এর ফলে আবার সামাজিক সহযোগিতা-সম্পর্কিত জটিল ও সুকঠিন সমস্যাদির উদ্ভব ঘটেছে। এ সকল সমস্যা সম্পর্কে যদি যথাসময়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আমাদের সামগ্রিক সমাজজীবনই ক্ষতিগ্রস্ত, এমন কি ধ্বংসও হয়ে যাবে। সুতরাং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিবিদ্যাগত আবিষ্কারের পশ্চাতে আমরা যেমন মনোযোগ ও কর্মশক্তি নিয়োগ করে চলেছি, তেমনি যান্ত্রিক যুগের সামাজিক সম্পর্কগত ও মানবিক সংগঠনগত সমস্যাদির প্রতিকার ও সমাধানের জন্য আমাদিগকে সমভাবে মনোযোগ দিতে হবে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিকাশ মানুষের হাতে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা প্রদান করেছে; অথচ সামাজিক সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আমাদের চিন্তাধারা ও কার্যপ্রবাহ যদি সে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এ বৈজ্ঞানিক ও যান্ত্রিক আবিষ্কার আমাদের কল্যাণ করা তো দূরের কথা, বরং আমাদের জন্য সর্বনাশই ডেকে আনবে। সুতরাং সাংগঠনিক ও ব্যবস্থাপনাগত সমস্যাদি বর্তমানকালে অধিকাংশ চিন্তাশীল মানুষের মনোযোগ ক্রমবর্ধমানভাবেই আকর্ষণ করে চলেছে। এভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার মা বিকাশ একটি অধ্যয়নযোগ্য বিষয় হিসেবে লোক প্রশাসনের উদ্ভব ঘটানোর পক্ষে সহায়ক হয়েছে।
৫। বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা আন্দোলন (Scientific Management Movement): ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা আন্দোলন’ শুরু হয়, তাও লোক প্রশাসন অধ্যয়নের পশ্চাতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। ফ্রেডারিক ডব্লিউ. টেলর (Frederick W. Taylor)-এর আবির্ভাবই সেখানে এক নব যুগ, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার যুগের দ্বার উন্মোচন করে। এ আন্দোলনের অগ্রদূত টেলরই ইস্পাত কাটার এক অতি উৎকৃষ্ট উপায় উদ্ভাবন করেন। তারপর তিনি এ উদ্ভাবিত সূত্রকে শিল্পের ক্ষেত্রে বিরাজমান মানবিক বিষয়াদিকে পরিচালনা করার কাজে প্রয়োগ করেন। তার অনুসারীগণ বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার সূত্র ও নীতিগুলোকে সরকারি বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেন। বস্তুত এ সরকারের সাংগঠনিক সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও নীতির প্রয়োগ বিষয়টি পাঠ যা অধ্যয়ন ও গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটায়।
৬। আন্তর্জাতিক সংগঠনের সম্প্রসারণ (Expansion of International Organization): বর্তমানে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সর্বক্ষেত্রে সম্পর্কের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্র গুলোকেও নতুন আঙ্গিকে পুনর্বিন্যস্ত করার সাথে সাথে আরো দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানকালে আন্তর্জাতিক সংগঠনের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে জাতীয় সরকারের বিশেষ বিশেষ বিভাগের কার্যাবলি প্রভাবিত হচ্ছে এবং লোক প্রশাসনও বহুলাংশে আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করছে। বর্তমানকালে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা বিশ্বের ক্ষুদ্র বৃহৎ প্রতিটি রাষ্ট্রই অনুভব করছে। আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিপুঞ্জ ও তার বিশেষ শাখাসমূহ রাষ্ট্রের কোন কোন দপ্তরের কাজকে প্রভাবিত করছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহে, বিশেষ করে বাংলাদেশের শিক্ষা সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য উন্নয়নের জন্য ইউনেস্কো (UNESCO) কাজ করে যাচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষা বিভাগের সাথে ইউনেস্কো ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে আছে।
৭। গণতান্ত্রিক ধারণা ও চেতনার উন্মেষ (Emergence of Democratic Ideals and Consciousness): ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে গণতান্ত্রিক ধারণা ও চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে! ক্রমে আরও শক্তিশালী হয়ে এ ধারণা জনজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এটির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশাসন ব্যবস্থার গঠন প্রকৃতিতে তেমন কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন না ঘটলেও সে সকল প্রশাসন ব্যবস্থায় চরিত্র ও চেতনার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ব্যবস্থায় সর্বজনীন ভোটাধিকার এবং প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। আর এভাবেই এর ফলে অনেক দেশেই লোক প্রশাসন গণতান্ত্রিক রূপ লাভ করেছে। বস্তুত, লোক প্রশাসনকে গণতান্ত্রিক রূপ দান করতে হলে একে অবশ্যই বস্তুগতভাবে ও বাস্তবে গণতান্ত্রিক আদর্শের সাথে সমাঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সরকারি প্রশাসকগণ অবশ্যই জনগণের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নিবেন এবং তাদের আশা-আকাঙ্খার কী প্রতি দৃষ্টি দিবেন। জনগণের মতামতের সাথে সংগতি রেখেই প্রশাসনের নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে।.
৮। সামাজিক বিজ্ঞানের অধ্যয়ন (The Study of Social Science): লোক প্রশাসন শাস্ত্রের বিকাশে সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যয়নের অবদানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। লোক প্রশাসন মতবাদ ও বাস্তবতার ক্রমবিকাশে বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের অধ্যয়নের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষণীয়। বিশেষ করে সমাজবিজ্ঞান, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ের উদ্ভব ও প্রসারের ফলে আন্তঃবিভাগীয় জ্ঞান পদ্ধতির (Inter-disciplinary Approach) উদ্ভব ঘটেছে। এর ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মত সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে তেমনি অন্য দিকে লোক প্রশাসন, কারবার প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনারও উদ্ভব ঘটেছে।
উপসংহারঃ লোক প্রশাসন বিষয়ের শিক্ষাগত প্রয়োজন ও তার বাস্তব উপযোগিতার কারণে এটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যবিষয় হিসেবে আধুনিক বিশ্বে বিরাট অগ্রগতি লাভ করেছে। পাশ্চাত্য দেশসমূহে এবং এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশে লোক প্রশাসন উচ্চতর পর্যায়ের-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের-শিক্ষাসূচিতে স্বীকৃত ও সম্মানজনক স্থান লাভ করেছে। অনেক দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজ ছাড়াও, লোক প্রশাসন সম্পর্কে অনুশীলন করার ও গবেষণা চালাবার উদ্দেশ্যে কতকগুলো গবেষণা প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসনকে একটি স্বতন্ত্র পাঠ্য-বিষয় ও বিভাগের মর্যাদা দান করা হয়েছে।
Leave a comment