লোক প্রশাসনে সাম্প্রতিক ধারা বা প্রবণতাসমূহ আলোচনা কর |
প্রশ্নঃ লোক প্রশাসনে সাম্প্রতিক ধারা বা প্রবণতাসমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বর্তমানে লোক প্রশাসনের বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এসেছে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সাথে সাথে লোক প্রশাসনের উদ্দেশ্যের নবরূপায়ণ এবং প্রশাসনিক কাজ সংখ্যায় ও প্রকারে বিপুল গতিতে বেড়ে যাচ্ছে। এ নতুন পরিস্থিতির আলোকে প্রশাসনিক পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নব নব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হচ্ছে। এ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে নতুনরূপে প্রশাসনিক ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। লোক প্রশাসনের এ নব দিগন্ত বা সাম্প্রতিক ধারা উন্মোচনে ‘নতুন লোক প্রশাসন’ (New Public Administration) এর মত নতুন লোক প্রশাসনও লক্ষ্য ও পরিবর্তনকেন্দ্রিক এবং পাশ্চাত্য সমাজে লোক প্রশাসনকে ইতিবাচক এবং সক্রিয় করে তোলার জন্য প্রক্রিয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
লোক প্রশাসনে সাম্প্রতিক ধারা বা প্রবণতাসমূহঃ কোন এক বিশেষ বছরে আকস্মিকভাবে লোক প্রশাসনের নবতর ধারাটির অভিব্যক্তি ঘটেছে একথা মনে করা ঠিক হবে না। ৩০-এর দশকের শেষ ভাগ লোক প্রশাসনের এক ক্রান্তিকাল। ঐ সময় নব নব পরিবর্তনের প্রথম বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে, তবে ১৯৪০ সালের দিকে তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠে। লোক প্রশাসন বিষয়ক জ্ঞান চর্চার সাবেকী ধারা আর আধুনিক ধারার সীমারেখা হিসেবে ডুয়েট ওয়াল্ডো (Dwight Waldo) ১৯৪০ সালকে চিহ্নিত করেছেন।
১৯৪৮ সালে নিউয়র্কের সাইরাকিউস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনোব্রুক সম্মেলন কেন্দ্রে লোক প্ৰশাসন বিষয়কে মূল্যায়ন করার উদ্দেশ্যে একদল নবীন প্রশাসন পণ্ডিত ও কর্মরত প্রশাসক যোগদান করেন। তাঁরা বেশির ভাগই ৩৫ বছরের কম বয়সী ছিলেন। তারা প্রশাসন সম্পর্কে কি ভাবেন, কি চিন্তা করেন এটি জানার জন্যই এ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ঠিক একবছর পূর্বেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ফিলাডেলফিয়াতে লোক প্রশাসনের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক সম্পর্কে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যেই ছিলেন এবং ৩৫ বছরের নিচে কেউ ছিলেন না।
মিনোব্রুক সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ডুয়েট ওয়ালডো (Dwight Waldo)। এ নবীন পণ্ডিতবর্গ মনে করেন, প্রশাসনের সনাতন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘দক্ষতা এবং মিতব্যয়িতা’ বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ততটা প্রাসঙ্গিক নয়। দক্ষতাই প্রশাসনের সব কিছু বা একমাত্র মাপকাঠি নয়৷ সকল প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হলো মানুষ— একটি জটিল সত্তা এবং এ সত্তা অর্থনৈতিক আইন, যার প্রতীক হলো দক্ষতা, কর্তৃক সব সময় পরিচালিত হয় না। এদের মতে লোক প্রশাসনে মূল্যবোধের ভূমিকা অবশ্যই থাকতে হবে। শিল্পোত্তর সমাজের প্রয়োজনে লোক প্রশানকে প্রাসঙ্গিক হতে হবে, সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করতে হবে। এরূপ চিন্তাধারা প্রবণতাই নতুন লোক প্রশাসন নামে পরিচিতি লাভ করে। সংস্কারমূলক ও প্রগতিবাদী মতবাদ ব্যক্ত করার জন্য এ মতবাদের প্রবক্তারা নতুনা বামপন্থী বলে আখ্যায়িত হন। এ সম্মেলনে লোক প্রশাসনের বিভিন্ন দিক আলোচনা করে দুটি গ্রন্থ সম্পাদিত হয়৷ একই গ্রন্থ সম্পাদনা করেন ফ্রাংক ম্যারিনি (Frank Marini) এবং অপরটি ডুয়েট্ ওয়ালডো (Dwight Waldo)।১২ এ গ্রন্থ দুটি লোক প্রশাসনকে রাজনৈতিক তত্ত্বের আলোকে প্রভাবান্বিত করেছে। ওয়ালেস সারি এ প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলেছেন যে, শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে, লোক প্রশাসন রাজনৈতিক তত্ত্বের একটি সমস্যা।
উপসংহারঃ প্রফেসর রমেশ কে. অরোরা (Ramesh K. Arora) নতুন লোক প্রশাসন সম্পর্কে লিখেছেন, “তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে লোক প্রশাসন অভ্যাস নিয়ে এবং প্রেষণার দিক থেকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করে। সামাজিক পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা এবং পরিবর্তন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য লোক প্রশাসনিক ব্যবস্থার ভূমিকা এবং দক্ষতার উপর এ নতুন লোক প্রশাসন গুরুত্ব আরোপ করে।
Leave a comment