Features of Transaction
প্রশ্নঃ লেনদেন কাকে বলে? লেনদেনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর।
ভূমিকাঃ হিসাববিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে লেনদেন। কারণ হিসাবের বইতে ব্যবসায়িক লেনদেনগুলােকে বিজ্ঞানসম্মত ও দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করা হয়।
লেনদেনের পরিচয়ঃ লেনদেন শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অদান-প্রদান বা বিনিময়। লেনদেনের অর্থ থেকেই স্পষ্ট যে প্রতিটি লেনদেনের সাথে দু’টি পক্ষ জড়িত। একটি পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করে এবং অপর পক্ষ সুবিধা প্রদান করে। অর্থের আদান-প্রদান বা অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপ করা যায় এমন ঘটনাই লেনদেন। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে সেবার দ্বারা যদি ব্যবসায়ের আর্থিত অবস্থার পরিবর্তন অর্থাৎ সম্পত্তি, দায় ও মালিকানা স্বত্ব প্রভাবিত হয় তাহলে ঐ ঘটনাকে লেনদেন বলা হয়।
লেনদেনের বৈশিষ্ট্যঃ কোনাে ঘটনা লেনদেন হতে হলে উক্ত ঘটনায় যে বৈশিষ্ট্যগুলাে থাকতে হবে তা নিম্নে সংক্ষেপে আলােচনা করা হলােঃ
অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্যঃ কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে উক্ত ঘটনাটি অবশ্যই অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য হতে হবে। যেমন প্রতিষ্ঠানের দক্ষ বিক্রয়কর্মী মারা গেল এটি একটি ঘটনা কিন্তু অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য নয়, তাই এ ঘটনাটিকে লেনদেন বলা যাবে না। অন্যদিকে, ১,০০০ টাকার পণ্য ফেরত দেয়া হলাে। এই ঘটনাটি অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য। তাই এটি একটি লেনদেন।
ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনঃ লেনদেন ব্যবসায়ের সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্ব অর্থাৎ ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে। যেমন- ১০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয়ের ফরমায়েশ পাওয়া গেল। এটি একটি ঘটনা কিন্তু প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। তাই এটি লেনদেন নয়। অন্যদিকে, ২৫,০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসায়ের জন্য একটি আসবাবপত্র ক্রয় করা হলাে। এ ঘটনার দ্বারা ব্যবসায়ে ২৫,০০০ টাকার নগদ সম্পদ হ্রাস এবং আসবাবপত্র নামক একটি সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন দু’ভাবে হতে পারে। যথাঃ
ক. পরিমাণ গত বা নিট পরিবর্তন
খ. কাঠামােগত বা গুণগত পরিবর্তন
নিচে এদের সম্পর্কে আলােচনা করা হলােঃ
ক. পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তনঃ প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দায়ের মােট মূল্যের পরিমাণগত পরিবর্তন হলে তাকে পরিমাণগত বা নিট পরিবর্তন বলে। যেমনঃ ধারে আসবাবপত্র ক্রয় ২০,০০০ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সম্পত্তি আসবাবপত্র ২০,০০০ টাকা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে দায়ের দিকে পাওনাদারের পরিমাণ ২০,০০০ টাকা বৃদ্ধি পায়।
খ. কাঠামােগত বা গুণগত পরিবর্তনঃ যদি কোন লেনদেন দ্বারা সম্পত্তি ও দায়ের যেকোনো এক দিকের দু’টি বিষয়ের উপাদানগত পরিবর্তন ঘটে তবে তাকে কাঠামােগত পরিবর্তন বলে। যেমনঃ নগদ ৫,০০০ টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হলাে। এখানে সম্পদ পাশে নগদ ৫০০০ টাকা কমে গেল এবং অন্য সম্পদ ব্যাংক জমা ৫০০০ টাকা বেড়ে গেল। অর্থাৎ এ লেনদেনের ফলে সম্পদ দিকের উপাদানগুলাের পরিবর্তন হয়েছে।
দু’টি পক্ষ জড়িত থাকবেঃ প্রতিটি লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট দু’টি পক্ষ জড়িত থাকবে। একটি পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করবে এবং অপর পক্ষ সুবিধা প্রদান করবে। একে দ্বৈত সত্তা বলা হয় যা লেনদেনের প্রথম শর্ত। যেমনঃ ব্যাংকে নগদ জমা দেয়া হলাে ৫,০০০ ঢাকা। এ লেনদেনের সাথে ব্যাংক হিসাব এবং নগদান হিসাব— এ দুটি হিসাবখাত জড়িত। এখানে ব্যাংকে জমার পরিমাণ বেড়েছে এবং ব্যবসায়ের নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে।
লেনদেন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্রঃ বর্তমানে সংঘটিত কোনাে লেনদেন অতীতের কোনাে লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত হলেও উক্ত লেনদেন দুটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র বা আলাদা বিবেচনা করতে হবে। বিগত মাসে বাকিতে পণ্য বিক্রয়ের টাকা চলতি মাসে পাওয়া গেল। এক্ষেত্রে বিগত মাসের পণ্য বিক্রয় এবং উক্ত বিক্রীত পণ্যের অর্থ চলতি মাসে আদায়কে আলাদাভাবে দুটি লেনদেন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
অদৃশ্যমান ঘটনাও লেনদেন হিসেবে গণ্য হবেঃ দৃশ্যমান ঘটনার পাশাপাশি অদৃশ্যমান ঘটনাও লেনদেন হিসেবে গণ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চলতি বছরে আসবাবপত্রের ওপর ৭০০ টাকা অবচয় ধার্য করা হলাে। এ ঘটনার দ্বারা অবচয় বাবদ ব্যয় বেড়েছে এবং আসবাবপত্রের মূল্য কমেছে। এটি একটি অদৃশ্য ঘটনা হলেও লেনদেন।
প্রামাণ্য দলিল থাকতে হবেঃ ব্যবসায়ের কোনাে ঘটনাকে লেনদেন হিসেবে বিবেচনা করতে হলে সেটির প্রামাণ্য দলিল অবশ্যই থাকতে হবে। যেমনঃ ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চালান, বিভিন্ন আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভাউচার এবং ব্যাংকের কোনাে ঘটনার ক্ষেত্রে চেক বা পাস বই ইত্যাদি।
অতীত বা ভবিষ্যতের ঘটনাবলিঃ সাধারণত অতীতের ঘটনাবলি লেনদেন হিসেবে গণ্য হবে। যেমন: ভাড়া পাওয়া গেল ১,৫০০ টাকা। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ ঘটনাবলি অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হলে সেটিও লেনদেন বলে বিবেচিত হবে। যেমনঃ অনাদায়ী পাওনার জন্য সঞ্চিতি, দেনাদার ও পাওনাদারের জন্য বাট্টা সঞ্চিতি এবং ভবিষ্যতে কোনাে অপ্রত্যাশিত ঘটনার বিপরীতে সঞ্চিতির ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
হিসাবরক্ষণের ভিত্তিঃ কোনাে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণের ভিত্তি মূলত দুই ধরনের।
ক. নগদান ভিত্তিক এবং
খ. বকেয়া ভিত্তিক হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি।
কোনাে প্রতিষ্ঠান নগদান ভিত্তিতে হিসাব সংরক্ষণ করলে শুধু নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সংক্রান্ত ঘটনাগুলােকে লেনদেন হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে। যেমন: নগদে মনিহারি ক্রয় করা হলাে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে বকেয়া ভিত্তিতে হিসাব সংরক্ষিত হলে নগদ ও বাকিতে সংঘটিত যাবতীয় ঘটনাবলি লেনদেন বলে গণ্য হবে। যেমনঃ জনাব রাশেদের কাছে নগদে ৭,০০০ টাকার এবং বাকিতে ১৩,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করা হলাে।
দ্রব্য বা সেবার বিনিময়ঃ দ্রব্য বা সেবার বিনিময় না হলে কোনাে ঘটনাকে লেনদেন বলা যাবে না। যেমনঃ সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের মাধ্যমে বস্তুগত দ্রব্যের বিনিময় সাধিত হয়। পক্ষান্তরে, পেশাদার হিসাবিজ্ঞানী, ডাক্তার এবং উকিলের দ্বারা সেবার বিনিময় হয়। উপরের বৈশিষ্ট্যগুলি একটি লেনদেনের জন্য অপরিহার্য। কোনাে বিশেষ ঘটনার ওপর এ বৈশিষ্ট্যগুলাে পর্যালােচনার মাধ্যমে উক্ত ঘটনাটি লেনদেন কি না সেটি নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
উপসংহারঃ যে ঘটনার মাধ্যমে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন তথা সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্বের পরিবর্তন ঘটে তাকে লেনদেন বলে।
Leave a comment