চর্যাপদের আদি কবিদের মধ্যে অন্যতম। ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ বা চর্যাগীতিকার প্রথম কবি লুইপা। তিব্বতি ঐতিহ্যে প্রাপ্ত চুরাশি জন সিদ্ধাচার্যের নামের তালিকায় লুইয়ের নাম আদিমতম। অনেক পণ্ডিত লুইপাকে প্রথম প্রথম চর্যাগীতি রচয়িতা মনে করেন। তাঁর জীবনকাল ৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। তখন ছিল রাজা ধর্মপালের রাজত্বকাল। হিন্দিভাষীরা লুইপাকে মগধ বা বিহারের অধিবাসী বলে মনে করেন।

যোগতন্ত্রশাস্ত্রেও লুইপার উল্লেখ আছে। তন্ত্রশাস্ত্রে লুইপার অন্য নাম মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ। মৎস্যের সঙ্গে মিল থাকায় কোনো কোনো পণ্ডিত লুইকে শবরপা এর শিষ্য ও ধীবর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেন। এ লুইপা আদি সিদ্ধাচার্য বলে অনেকের ধারণা। চর্যাগীতির লুইপা আর তন্ত্রশাস্ত্রের লুইপা অভিন্ন নয় বলেই মনে করা হয়। কেননা বলা হয়েছে, লুইপা ছিলেন গৌড় অঞ্চলের অধিবাসী। আর তন্ত্রশাস্ত্রের মীননাথ বা মৎস্যেন্দ্রনাথের বাড়ি দক্ষিণবঙ্গে। তিনি ছিলেন গোরক্ষনাথের গুরু। তাই ধারণা করা হয়, লুইপা ও মীননাথ অভিন্ন ব্যক্তি নয়। লুইপা বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিব্বতি অনুবাদের মাধ্যমে লুইয়ের তিনটি গ্রন্থের নাম পাওয়া যায়। এগুলো হলো: ‘শ্রীভগবদভিসময়’, অভিসময়বিভঙ্গ, তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টিনাম। প্রথম দুটি বই দর্শনের এবং তৃতীয়টি দোঁহা ও গানের। তার রচিত পদের নমুনা এখানে তুলে ধরা হলো:

ক. কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চীএ পইঠা কাল। (১ নং চর্যা)

খ. ভাব ন হোই অভাব ণ জাই। অইস সংবোহে কো পতিআই। (২৯ নং চর্যা)।

রাহুল সাংকৃত্যায়ন এর মতে লুইপা ছিলেন রাজা ধর্মপালের একজন লেখক। ধারণা করা হয় লুইপার জন্ম অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগে। লুইপা একজন প্রাজ্ঞ ও প্রাচীন সিদ্ধাচার্য হিসেবে পরিচিত।