প্রশ্নঃ লিখিত এবং অলিখিত সংবিধানের মধ্যে কয়েকটি পার্থক্য আলােচনা কর।

অথবা, লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের বৈসাদৃশ্যসমূহ তুলে ধর।

অথবা, লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের বৈপরীত্য উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ সংবিধান হলাে বিশ্বের সকল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষভাবে অপরিহার্য একটি দলিল। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধান থাকে। সংবিধান হচ্ছে সকল ধরনের সরকারের উৎস।

লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের পার্থক্যঃ নিম্নে লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের কয়েকটি প্রাধান্য তুলে ধরা হলাে-

১. আনুষ্ঠানিকতার ক্ষেত্রেঃ লিখিত সংবিধানের সাথে আনুষ্ঠানিকতা জড়িত থাকে। কোন পরিষদ কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকতায় ঘােষিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিজয় দিবসকে সামনে রেখে গণপরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষরদানে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু অলিখিত সংবিধান এমনিতে প্রণীত ও গৃহীত হয় না।

২. সর্বোচ্চ আইনের ক্ষেত্রেঃ লিখিত সংবিধানকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু অলিখিত সংবিধানকে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে গণ্য করা হয় না। ব্রিটেনে সাংবিধানিক ও সাধারণ আইনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

৩. নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেঃ লিখিত সংবিধান নাগরিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অধিক সবল ভূমিকা পালন করা হয়। কিন্তু ধারণা করা হয় অলিখিত সংবিধানে নাগরিক অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভূমিকা পালিত হয়।

৪. বিচার বিভাগের প্রাধান্যের ক্ষেত্রেঃ লিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য থাকে। অপরদিকে অলিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের পরিবর্তে আইন সভার প্রাধান্য স্বীকৃত হয়।

৫. সংবিধান সংশােধনের ক্ষেত্রেঃ লিখিত সংবিধান সংশােধন করতে বিশেষ ও জটিল পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। কিন্তু অলিখিত সংবিধান সহজে পরিবর্তনশীল বিধায় জটিল পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয় না।

৬. স্পষ্টতার দিক থেকেঃ লিখিত সংবিধান সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট। কিন্তু অলিখিত সংবিধান অস্পষ্ট ও অনেক ক্ষেত্রেই তা সুনির্দিষ্ট নয়।

উপসংহারঃ উপযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে এরূপ পার্থক্য অনেকটা অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক ও অবাস্তব। এ পার্থক্য মােটেই মৌলিক নয়। অর্থাৎ অলিখিত সংবিধানের যেমন অনেক লিখিত দিক আছে, তেমনি লিখিত সংবিধানেরও অলিখিত দিক রয়েছে।