মহাভারতে বর্ণিত মাহেশ্বরী পুরীর রাজা নীলধ্বজের স্ত্রী হলেন জনা। তাঁদের একমাত্র পুত্র প্রবীর অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মারা যায়। পুত্ৰমৃত্যুর খবরে জনা দুঃখে জর্জরিত হলেও ক্ষত্রিয় রমণী হিসেবে তিনি নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন, চেয়েছিলেন প্রতিশােধের আগুনে চোখের জল শুকিয়ে নিতে। কিন্তু যখন পুত্রহন্তা অর্জুনকে রাজসিংহাসনে বসিয়ে রাজা নীলধ্বজ তুষ্ট করতে থাকেন, তখন তিনি নিজেকে আর সংযত রাখতে পারেন না। পাণ্ডবকুল, কুন্তী, দ্রৌপদী, এমনকি ব্যাসদেব সম্পর্কেও বিষােদগার করে বসেন। ক্ষত্রিয়ধর্ম লঙ্ঘনের জন্য স্বামীর প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁকে স্বধর্মে ফিরিয়ে আনতে চান।
পুত্রশােকে জনা এতটাই কাতর যে, পুত্র প্রবীরকে, স্বামীকে এবং বিধাতাকেও দোষারােপ করতে ছাড়েননি তিনি। পুত্রকে বলেছেন সে কি এইভাবেই মাতৃগর্ভের ঋণ শােধ করেছে এবং বিধাতাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সংসারের অতুল সুখ জনাকে দিয়েও কেন তিনি তা কেড়ে নিলেন। তাই জনা আর প্রাণ ধারণ করতে চান না। ক্ষত্রিয় রমণী হয়ে স্বামীর অনাচার আর কাপুরুষতা তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। তাই জাহ্নবীর জলে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে একইসঙ্গে জনা তাঁর শেষ প্রতিবাদ যেমন জানাতে চেয়েছেন, তেমনি পুত্রশােকের জ্বালাও চিরকালের মতাে জুড়ােতে চেয়েছেন। এখানেই মাতৃত্বের চরম সীমায় পৌঁছেছেন তিনি।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশের প্রধান চরিত্র জনা ছিলেন মাহেশ্বরী পুরীর রাজমহিষী এবং রাজা নীলধ্বজের স্ত্রী।
তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব ধরার জন্য একমাত্র পুত্র প্রবীর অর্জুনের হাতে নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনা জনাকে শােকাকুলা করে তুলেছিল। জনা চেয়েছিলেন অর্জুনের রক্তে সেই শােকের আগুন নিভাতে। কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রত্যাশাকে ব্যর্থ করে রাজা নীলধ্বজ পুত্রের হত্যাকারী পার্থের সঙ্গে সখ্যত্থাপন করেন। এই ঘটনা জনার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং বেদনার সৃষ্টি করে—“কি লজ্জা! দুঃখের কথা, হায় কব/কারে?” নীলধ্বজের মধ্যে ক্ষত্রিয়ধর্ম জাগরণের জন্য তিনি পার্থের চরিত্রের নীচতাকে নানা দৃষ্টান্তের সাহায্যে তুলে ধরেন। খাণ্ডবদহন থেকে কর্ণবধের একাধিক ঘটনার উল্লেখ করে জনা বােঝাতে চান যে অর্জুনের বীরত্বের ধারণাটি একেবারেই যথার্থ নয়। কিন্তু তারপরেও নীলধ্বজের চরিত্রে কোনাে ভাবান্তর না দেখে জনার অভিমান তীব্রতর হয়ে ওঠে। যেভাবে নিজের বীরত্ব এবং সম্মানকে নীলধ্বজ বিসর্জন দিয়েছেন তা জনা মানতে পারেননি। শেষপর্যন্ত যাবতীয় অভিমান আত্মগ্লানিতে রূপান্তরিত হয়েছে- “কুলনারী আমি, নাথ, বিধির বিধানে/পরাধীন।” নিজের মনের বাসনা মেটানাের ক্ষমতা তার নেই। এই অবস্থায় একদিকে পুত্রশােকের, যন্ত্রণা, অন্যদিকে স্বামীর বিরূপতায় জনাকীর্ণ পৃথিবীও জনহীন হয়ে উঠেছে জনার কাছে। অসহায়তা আর একাকিত্ব থেকে মুক্তির জন্য আত্মবিসর্জনের কথা ভেবেছেন জনা।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশের প্রশ্নোধৃত অংশে ‘ভ্ৰষ্টা রমণী’ বলতে পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদীর কথা বলা হয়েছে।
অর্জুনের হাতে পুত্র প্রবীরের মৃত্যুর পরেও যেভাবে রাজা নীলধ্বজ তৃতীয় পাণ্ডবের সঙ্গে সখ্য করেছেন তা জনার কাছে বিস্ময় এবং ক্ষোভের কারণ হয়েছে। নীলধ্বজের বিবেকের জাগরণ ঘটানাের জন্য রাজমহিষী জনা অর্জুনের জন্ম ও বংশপরিচয় যে যথেষ্ট অগৌরবের তা প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাই অর্জুন-জননী কুন্তীকে স্বৈরিণী হিসেবে দেখিয়েই জনা ক্ষান্ত হন না, তিনি অর্জুনসহ পঞ্চপাণ্ডবের পত্নী দ্রৌপদীকেও বলেন ‘ভ্রষ্টা রমণী। ব্যাসদেবের মহাভারতে উল্লিখিত আছে যে দ্রৌপদী আসলে লক্ষ্মী। কিন্তু জনার কাছে তা বিশ্বাসযােগ্য হয়নি। বরং পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদীকে তার মনে হয়েছে পৌরব সরসে নলিনী। সরােবরে পদ্মফুল ফোটে, তারপরে সেই পদ্মের সঙ্গে মৌমাছির সখ্য হয়, পদ্ম এরপরে সূর্যের অধীনস্থা হয় এবং বাতাসও তাকে ছুঁয়ে যায়। দ্রৌপদীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় তিনি কখনােই একের অধীনস্থা থাকেননি। তার এই বহুগামিতা জনার তীব্র নিন্দার লক্ষ্য হয়েছে। পার্থও পীতাম্বর নয়, আর দ্রৌপদীও লক্ষ্মী নয়—এ কথা বলার মধ্যে দিয়ে দ্রৌপদীর চরিত্রের অসংগতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি অর্জুন চরিত্রের হীনতাকেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জনা।
পত্ৰকবিতা হিসেবে ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’-র সার্থকতা আলােচনা করাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশ অবলম্বনে নীলধ্বজ চরিত্রটিকে বিশ্লেষণ করাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কাব্যাংশে উল্লিখিত জনা চরিত্রটি সম্পর্কে আলােচনা করাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে নীলধ্বজের প্রতি জনার যে ক্ষোভ ও অভিমানের প্রকাশ ঘটেছে, তা নিজের ভাষায় লেখাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে জনা কেন কুন্তীর নিন্দায় সরব হয়েছেন? কুন্তী সম্পর্কে জনা যে মূল্যায়ন করেছেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে জনা কেন দ্রৌপদীর নিন্দায় সরব হয়েছেন? দ্রৌপদী সম্পর্কে জনা যে মূল্যায়ন করেছেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
নীলধ্বজের প্রতি জনা কাব্যাংশে জনা কেন অর্জুনের নিন্দায় সরব হয়েছেন? অর্জুন সম্পর্কে জনা যে মূল্যায়ন করেছেন তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
“সত্যবতীসুত ব্যাস বিখ্যাত জগতে!” -মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। কাব্যাংশে এটি উল্লেখের কারণ আলােচনা করাে।
“বসুন্ধরা গ্রাসিলা সরােষে/ রথচক্র যবে, হায়;” -মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। মন্তব্যটিতে যে পৌরাণিক প্রসঙ্গের উল্লেখ করা হয়েছে তার বিস্তৃত বর্ণনা দাও।
“হতজ্ঞান আজি কি হে পুত্রের বিহনে” -বক্তা এই মন্তব্যটি কখন করেছেন? তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?
“কি কহিবে, কহ/ যবে দেশ-দেশান্তরে জনরব লবে/ এ কাহিনী” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“…কী গুণে তুমি পূজ, রাজরথি,/ নরনারায়ণ-জ্ঞানে?”- মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“এই তাে সাজে তােমারে, ক্ষত্রমণি তুমি,” -বক্তার এই মন্তব্য কি যথার্থ ছিল?
“ভুলিব এ জ্বালা,/এ বিষম জ্বালা, দেব, ভুলিব সত্বরে। বক্তা এখানে কোন জ্বালা ভুলতে চেয়েছেন? শেষপর্যন্ত কীভাবে এই জ্বালা থেকে তিনি মুক্তি খুঁজেছেন?
“কি লজ্জা! দুঃখের কথা, হায়, কব কারে?” -বক্তা কোন্ দুঃখ এবং লজ্জার কথা বলতে চেয়েছেন?
“মিথ্যা কথা, নাথ। বিবেচনা কর,” -এক্ষেত্রে বক্তা কীভাবে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন?
“মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি?”— বক্তার এই ধরনের মন্তব্যের যৌক্তিকতা আলােচনা করাে।
“কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা। গুরুজন তুমি; / পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তােমারে।” -বক্তার এই আক্ষেপ কেন? এ বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
“ক্ষত্রধর্ম, ক্ষত্রকম্ম সাধ ভুজবলে” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করে তার পরিণতি বিশ্লেষণ করে দেখাও।
“হায়, ভােজবালা কুন্তী-কে না জানে তারে, স্বৈরিণী?” -বক্তার এই মন্তব্যের যথার্থতা আলােচনা করাে।
“দহিল খাণ্ডব দুষ্ট কৃয়ের সহায়ে।/ শিখণ্ডীর সহকারে কুরুক্ষেত্রে রণে”- ‘খাণ্ডব’ দহন ও ‘শিখণ্ডী’ সম্বন্ধে পৌরাণিক সত্য লেখাে।
“চণ্ডালের পদধূলি ব্রাহ্মণের ভালে?/ কুরঙ্গীর অশ্রুবারি নিবায় কি কভু/ দাবানলে? কোকিলের কাকলি-লহরী/ উচ্চনাদী প্রভঞ্জনে নীরবয়ে কবে?”— উদ্ধৃতিটির পশ্চাৎপট আলােচনা করাে।
“কি কুছলে নরাধম বধিল তাঁহারে” -মন্তব্যটির পৌরাণিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করাে। এই মন্তব্যের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
“ক্ষত্ৰ-কুলবালা আমি; ক্ষত্র কুল-বধু/ কেমনে এ অপমান সব ধৈর্য্য ধরি?”- বক্তার এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলােচনা। করাে।
জনা কি প্রকৃতই বীরাঙ্গনা? যুক্তিসহ লেখাে।
“ছদ্মবেশে লক্ষরাজে ছলিলা দুর্মতি স্বয়ম্বরে”—আলােচ্য অংশে কোন্ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে?
“হা পুত্র সাধিলি কীরে তুই এই রূপে মাতৃধার” -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
জনার পত্রে তাঁর ক্রব্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে?
Leave a comment