লবণাম্বু উদ্ভিদের অভিযােজনগত বৈশিষ্ট্য লেখাে।

স্টোকার (Stocker, 1933) লবণাম্বু উদ্ভিদকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন一

জলজ লবণাম্বু উদ্ভিদ : এসব উদ্ভিদ লবণাক্ত জলাশয়ে, নদী মােহানা অঞ্চলের জলে নিমজ্জিত অবস্থায় অথবা জলের ওপরে অবস্থান করে। উপকূল অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ এ জাতীয় উদ্ভিদের উদাহরণ।

স্থলজ লবণাম্বু উদ্ভিদ : এ সমস্ত উদ্ভিদ স্থলভাগের লবণাক্ত মাটিতে খুব অল্প, মাঝারি বা পর্যাপ্ত জলের জোগানের ওপর নির্ভর করে জন্মায়। যেমন- পাথরকুচি গাছ।

বায়বীয় লবণাম্বু উদ্ভিদ : উপকূল অঞ্চল বা মরু অঞ্চলে বায়ুতাড়িত লবণ কণার প্রভাবে যেসব উদ্ভিদ জন্মায় তারা বায়বীয় লবণাম্বু উদ্ভিদ নামে পরিচিত। উদাহরণ—বেততা, ট্যামারিক প্রভৃতি।

বিজ্ঞানী স্টেনার এই উদ্ভিদ গােষ্ঠীকে- (১) রসালাে, (২) রসহীন ও (৩) লবণসঞয়ী লবণাম্বু উদ্ভিদ শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।

লবণাম্বু উদ্ভিদ এক বিশেষ প্রজাতির উদ্ভিদ। এর বিশেষ কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন

  • উয়তা ও বৃষ্টিপাতের যথেষ্ট তারতম্যের সঙ্গে অভিযােজন ঘটিয়ে অতিরিক্ত লবণাক্ত মাটিতে এরূপ উদ্ভিদ বাঁচতে পারে।

  • এই উদ্ভিদ চিরসবুজ থাকে।

  • এই উদ্ভিদ সাধারণত কাষ্ঠল জাতীয় হয়।

  • এদের মূলগুলি শাখাপ্রশাখায় বিন্যস্ত থাকে এবং মাটিতে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কতকগুলি ঠেসমূলরূপে কাজ করে।

  • বীজের অঙ্কুরােদগম মাটির বদলে গাছে থাকাকালীন ফলের মধ্যেই হয়, যাকে জরায়ুজ অঙ্কুরােদগম বলে।

  • গাছের পাতা পাতলা, ছােটো ও চামড়ার মতাে শক্ত হয় এবং পাতা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সঞ্চয় করে রাখে।

  • লবণাক্ত মাটিতে গাছের উপযােগী অক্সিজেনের অভাব ঘটে। তাই বাতাস থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেওয়ার জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদের শ্বাসমূল থাকে।

সাধারণত লবণাক্ত মাটিতে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ জন্মায়। এরা চিরহরিৎ শ্রেণির উদ্ভিদ। এদের অভিযােজনগত বৈশিষ্ট্য হল

  • লবণাক্ত মাটি থেকে জল শােষণ করা কঠিন। কিন্তু এসব উদ্ভিদের কোশপ্রাচীর পুরু ও শক্ত থাকায় আস্রবণ চাপ (Osmotic Pressure) বেশিমাত্রায় সহ্য করতে পারে এবং তাই জলশােষণ ক্ষমতাও বেশি।

  • পত্ররন্ধের সংখ্যা কম হয় এবং শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মাটিতে জন্মায় বলে জলের অভাবকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বাস মাচনের হার কমিয়ে দেয়।

  • জোয়ারভাটার প্রভাবে স্থানচ্যুতি রােধ করার জন্য ও কাদামাটিতে গাছগুলি যাতে সােজা হয়ে অবস্থান করতে পারে সেজন্য কাণ্ড থেকে স্তম্ভমূল ও ঠেসমূল উৎপন্ন হয়।

  • লবণাক্ত মৃত্তিকায় অঙ্কুরােদগম প্রায় হয় না। উদ্ভিদ ফলের মধ্যেই অকুরােদ্গম ঘটিয়ে সেটিকে কর্দমাক্ত মৃত্তিকায় নিক্ষেপ করে। এই প্রক্রিয়া জরায়ুজ অঙ্কুরােদগম নামে পরিচিত। বীজকে কাদামাটিতে ডুবে যাওয়া বা জলের স্রোতে ভেসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে উদ্ভিদ জরায়ুজ অঙ্কুরােদ্গম ঘটায়।