লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি লেখ

লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়ে একটি দিনলিপি লেখ ।

হৃদয়বিদারক দৃশ্য 

৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১টা

লিখতে বসেছি কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। কী লিখব? আজ সারাদিন যা কিছু দেখিছি, যা কিছুি শুনেছি। তা-কি এই ছােট্ট ডায়ারির পাতায় আবদ্ধ করা সম্ভব? কী ভয়ানক দৃশ্য! কী হৃদয়বিদারক আত্মচিকার! সবকিছু আমার মনকে আলােড়িত করে তুলেছে। কিছুতেই মন বসাতে পারছি না। একজন সাংবাদিককে কত মর্মাতিক দৃশ্যেরই-না মুখােমুখি হতে হয়। আজ মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়। “পিনাক-৬’ নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ আড়াইশর বেশি যাত্রীসহ পদ্মার বুকে ডুবে গেছে। খবর পাওয়া মাত্র সেখানে ছুটে গেলাম। সেখানে পৌঁছে যা দেখলাম তা বর্ণনাতীত। নদীর তীরে হাজারাে মানুষের ভিড়। তীরে অপেক্ষারত মানুষদের গগনবিদারী চিৎকার আকাশ-বাতাসকে যেন কম্পিত করে তুলছে। উদ্ধারকারী দল এবং সাধারণ মানুষ মিলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা কখনাে জীবিত মানুষ উদ্ধার করছে, আবার কখনাে প্রাণহীন দেহ পানির নিচ থেকে তুলে আনছে। একটি লাশ বা জীবিত মানুষ ডাঙায় তােলার সাথে সাথে তার চারপাশে সাধারণ মানুষ ঘিরে ধরছে। লাশ চিহ্নিত করতে পেরে আত্মীয়-স্বজনরা বুকফাটা কান্নায়। পরিবেশ ভারি করে তুলছে। সে কী করুণ দৃশ্য! চোখ দিয়ে আপনা-আপনিই জল বেড়িয়ে আসে। পিনাক-৬’-এর পাশের লঞ্চটির। নাম ‘এমএল সৈকত সেতু। সেই লঞ্চের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, আড়াইশর বেশি যাত্রী নিয়ে কাত হয়ে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। ‘এমএল পিনাক’ নামের একটি লঞ্চ। দিনের আলােয় চোখের সামনে। পদ্মার উত্তাল স্রোতে পাশের লঞ্চটিও এই বুঝি ডুবে যাবে । শত শত যাত্রী সেই করুণ দৃশ্য দেখেছেন, আতঙ্কিত হয়েছেন, সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছেন। একসময় আর দেখা যাচ্ছে না পিনাক। কাত। হয়ে একেবারেই ডুবে গেল। একসঙ্গে অনেক মানুষের সলিলসমাধি। একটি রিপাের্ট করে সেখান থেকে ফিরে এলাম । কিন্তু কোনাে। কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছি না। সেসব মানুষের দুরবস্থার চিত্র আমার চোখে এখনও ভেসে উঠেছে….