ভূমিকা : আধুনিক সাহিত্যে নানাদিক থেকে পুরানো ভাবধারাকে জানার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। পুরানো ভাবধারা বলতে বোঝায় অতীতে যা উপেক্ষিত ব্যর্থ ছিল তাকে আধুনিক মননে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা, যে গ্রাম্য সাহিত্য এতদিন ছিল কুণ্ঠিত সংকুচিত তাকে উদ্ধার করে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আর এ সমস্ত বাস্তবে রূপায়িত হবে একমাত্র রূপকথার মাধ্যমে। আধুনিক মনন থেকে অতীতের অন্ধকারে ফিরে যাওয়ার তীব্র প্রয়াস সকল দেশের সাহিত্যের একটা সনাতন রীতি। যেমন—ইংরেজি সাহিত্যেও অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই অতীতে প্রত্যাগমন, মধ্য যুগে পল্লিগাথার রস আস্বাদনে বঙ্গ সাহিত্যে একটা নূতন যুগের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছিল। তবে বঙ্গ সাহিত্যে অতীতের প্রতি মোহান্বিত হওয়ার পশ্চাতে কতগুলি গুরু কারণও বিদ্যমান। যেমন—প্রথমত, বর্তমানের এই সমস্যা সংকুল জটিল নাগপাশের অবষ্টেনী জীবন থেকে পালিয়ে অতীতের সরল সমস্যাহীন নিরন্দ্র জীবনে পদার্পণ করে মুক্তিলাভ করা। দ্বিতীয়ত, যেহেতু আমরা একটা রক্ষণশীল জাতি সেইহেতু বর্তমানের এই নবজাগরণের দিনের জাতীয় মন্ত্রে যদি উদ্বুদ্ধ হতে হয় তাহলে অতীতের ত্রুটীহীন নিরালম্ব জীবন গ্রহণই শ্রেয় যার মধ্যে লুক্কায়িত আছে জাতীয়ত্বের গোপন মন্ত্র। এই অতীতকে রোমান্থনের পিয়াসী দু-ধরনের মানুষ (এক স্বপ্নপ্রবণ আরাম পিয়াসীর দল যারা অতীতের মধ্যে শান্তির নীড় তৈরি করছে। এক—–(জিজ্ঞাসু অনুসন্ধিৎসুর দল—যারা অতীতের কক্ষে কক্ষে প্রতিধ্বনি জাগিয়ে নিজেদের নষ্ট গোষ্ঠীর উদ্ধার সাধনে ব্যস্ত।)

রূপকথা ও উপকথার পার্থক্য :

‘রূপকথা’ ও উপকথা দুটি শব্দের মধ্যে যেমন বানানের পার্থক্য আছে তেমনি ইহাদের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যও আছে। যার পার্থক্য আশমান এবং জমীনের স্বরূপ। রূপকথার আসল স্বরূপ উদ্ঘাটন করলে আমরা বুঝতে পারবো—“একটা রহস্য ঘন মাধুর্য, ঐন্দ্রজালিক মায়াঘোরে বেষ্টিত। ‘রূপকথা’ নামটি আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করলে যেন যেখানকার গোপন কক্ষে করাঘাত করে ঘুমন্ত বাসনাগুলোকে এক পলকে জাগিয়ে দেয় এবং সমস্ত মনে প্রাণে একটা আনন্দের শিহরণ জাগায়। কিন্তু উপকথা নামটির অন্তরালে কেমন যেন একটা অবজ্ঞার ভাব লুকিয়ে আছে। যেমন—নকলের প্রতি আসলের, মেকির প্রতি খাঁটির, নীচের প্রতি উচ্চের যে অবজ্ঞা নেই ভাব। ঠিক—বাচ্চা ছেলেদের খেলা দেখে বয়স্করা যেমন করে নাক সিঁটকোয় তেমনি সাংসারিক লোকের উপকথার নামে তদ্রুপ আচরণ করে। দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য এইরূপ—“রূপ কথাকে রস পিপাসু পাঠকরা পছন্দ করেন, আর উপকথাকে সমালোচকেরা পছন্দ করেন।”

রূপকথাকে প্রকৃত সাহিত্যের নিয়মে বিচারে যুক্তিহীন : রূপকথার স্বরূপ :

রূপকথাকে প্রকৃত সাহিত্যের নিয়মে বিচার করলে তার প্রতি অবিচারই করা হবে। কারণ— আধুনিক সাহিত্যের আদর্শে রূপকথার সৃষ্টি হয়নি। আধুনিক সাহিত্যের মতো গঠন প্রণালী ও উদ্দেশ্য এর ছিল না। এর সমস্ত স্বরূপ মাধুর্য উপলব্ধি করতে হলে আগে সৃষ্টি লগ্ন খতিয়ে দেখা আবশ্যক। যেমন— বৃষ্টির রাত, মুহ্যমান দীপ, আধো অন্ধকার গৃহ, কল্পনা বিহ্বল শিশু প্রাণ, ঠাকুরমার স্নেহ মিশ্রিত সরস কণ্ঠস্বর সমস্ত মিলে যে নিখুঁত মায়া হল এবং রহস্যের সৃষ্টি করে তা তো কান্দীর কলমে বইয়ের ছাপার অক্ষর ব্যবসায়ীর কাছে স্বতন্ত্র হারিয়ে ফেলবে। বরং রূপকথার স্বরূপ নিরূপণ করতে হলে শিশুর চিত্তাকাশ ও মনোজগৎ সম্পর্ক পরিচয় থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে এর সন্ধান মিলবে না—বয়স বাড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর সমস্ত গোপন রহস্য বড়োরা জেনে ফেলে। রূপকথার প্রকৃত, রসের সন্ধান তারা কেমন করে পাবে কিন্তু শিশু হৃদয় সর্বদা, জিজ্ঞাসু মন নিয়ে রূপকথার রাজ্যে বিচরণ করতে থাকে, তাই তার সম্মুখে দিগন্ত বিস্তৃত, বাধা বন্ধনহীন, কল্পরাজ্যের দ্বার খুলে যায়, এবং সে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত হয়ে সেই রূপকথার রাজ্যের পরিভ্রমণের সুযোগ খুঁজে পায়। তখনই শিশু হৃদয়ে ধরা পড়ে রূপকথার আসল স্বরূপ।

রূপকথার বিরুদ্ধে প্রাপ্তবয়স্কদের অভিযোগ খণ্ডন : রূপকথার প্রয়োজন :

বয়স্ক ব্যক্তিদের অভিমত—রূপকথা হল অলীক এবং অবাস্তব। কিন্তু প্রাবন্ধিক একথা অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেন, তাঁর অভিমত বাস্তব না হলে পৃথিবীতে কোনো জিনিসের স্থান নেই একথা ঠিক নয়। পৃথিবীতে বাস্তবের যেমন প্রয়োজন আছে তেমন অবাস্তবের একটা প্রয়োজন আছে। মাটির সঙ্গে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে, মানব মনের সঙ্গে যোগ না থাকলে ও সুন্দর পৃথিবী ও মানব চিত্ত থেকে কাউকে নির্বাসিত করা যায় না, যেমন নীল আকাশ অবাস্তব হলে সে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিগূঢ় বন্ধনে আবদ্ধ। এই দিগন্ত ব্যপ্ত ঘন নীল রূপের দিকে তাকালে অশান্ত চিত্ত শান্ত হয় এর অরূপ মাধুরী দেখে দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখকে ক্ষণিকের জন্যে ভুলে থাকা যায়। তাই তাকে অবস্তাব বলে প্রত্যাখ্যান করলে মানব মন তার অনেকটা সৌন্দর্য ও উদারতা হারিয়ে ফেলে।

তাই আমাদের জীবনে রূপকথার একটা প্রয়োজনীয়তা আছে একথা স্বীকার না করে উপায় নেই। প্রকৃত পক্ষে রূপকথা অবাস্তব নহে বরং বাস্তবতার দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। যে জিনিস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটায়, প্রেরণা দেয় শুধু তাই বাস্তব নয়। আমাদের যেমন সূক্ষ্ম অজানা দেয় শুধু তাই বাস্তব নয়। আমাদের মনের সূক্ষ্ম অজানা অনুভূতি, যা মুহুর্মুহু জেগে ওঠে আবার বিলীন হয়। বাহ্য জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না সর্বদা অচেতন, এটা একটা অবিসংবাদিত ক্রিয়া হলেও বাস্তবতার দাবি করতে পারে। অতএব—রূপকথা আমাদের মনের অস্পষ্ট আবেগ, ক্ষীণ প্রতিধ্বনি, অসম্ভব্য আশাকল্পনা জাগিয়ে তোলে—এটা স্বীকার করতেই হবে। তাই তাকে অবাস্তব অনাত্মীয় বলা অনাবশ্যক। এবং এখানেই রূপকথার প্রয়োজন।

রূপকথার বাস্তবতার সন্ধান :

রূপকথা মানব মনে কতকগুলো বাহ্য ঘটনার ছদ্মবেশে লুক্কায়িত আছে। আবরণ উন্মোচিত করলেই তার আসল রূপ উদ্ঘাটিত হতে বাধ্য। বাস্তব জগতে সে শক্তি আমাদের প্রেরণা দেয় যে আদর্শ আমরা সন্ধান করি, রূপকথার রাজ্যে এই আদিম সনাতন নীতির অবস্থান। যেমন যে সব রাক্ষস খোক্ষস মানুষের পথ অবরোধ করতো তারা আমাদের পার্থিব বাধাবিঘ্নের একটা পরিবর্তিত সংস্করণ রূপ। যে ব্যঙ্গমা ব্যঙ্গমী রাক্ষস খোক্ষসের মৃত্যু রহস্য মানুষের শিখিয়ে দিত তা বাস্তবে অযাচিত দান এবং কার্পণ্য স্খলনের পথ বাতলে দেয়। সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে নির্জন রাক্ষস পুরে যে রাজকন্যা প্রবাল পালঙ্কে নিদ্রিতা তিনি আমাদের গোপন অন্তঃপুর শায়িনী প্রেয়সী। হাজার বিপদ বাধা পেরিয়ে রাজপুত্র নিজ প্রিয়াকে লাভ করেন—তা আমাদের বর্তমান বণিক ধর্মী বিবাহের মধ্যে আদর্শ প্রেমিকের অভিমানহত দীর্ঘশ্বাস মাত্র। পাতাল পুরে নাগকন্যার প্রাসাদ প্রাঙ্গণে আমরা চির পরিচিত পৃথিবীর রূপ খুঁজে পাই এবং তার মনে মাণিক্য-দীপ্ত কক্ষের মধ্যে নিত্য সহচর পরিচিততম সূর্যালোকের দর্শন পাই।

রূপকথার রচয়িতা নামহীন:

সমগ্র লোক সাহিত্যে রচয়িতা যেমন সমগ্র জাতীর পশ্চাতে আত্মগোপন করে থাকে। কোনও ব্যক্তি বিশেষ কথা বলে না। সমস্ত জাতীয় প্রাণের কথা বলে। কিংবা মহাকাব্যের মতো বিশাল দেহীর মধ্যে যেমন অনেক নামহীন লেখক নিজেদের অস্তিত্ব মিশিয়ে দিয়েছেন, তারা আপনার দিকে তাকাবার অবকাশ পায়নি। তারা নিজেদের অস্তিত্বে সবার মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে ফুলের মতো। আপনাতে আপনি বিকশিত হয়ে উঠেছে। অথবা—যেমন লৌকিক গল্পে বাগানে লেখকের পরিচয়ের সন্ধান মিলে না— ঠিক রূপ কথার রাজ্যেও সেই একই নিয়ম। কোথাও লেখকের পরিচয় নেই—সর্বত্র উদার, বিশাল, আসক্তিহীনভাবে লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। রাজ রাজড়ার কথা এবং বিষয়বস্তু হলেও সাধারণ মানুষের তুচ্ছাতিতুচ্ছ চাওয়া পাওয়া এখানে অবজ্ঞা করা হয়নি। এখানে রাজপুত্র কখনো দৈব বিড়ম্বনায় গরিবের পর্ণকুটিরে আশ্রয় নিয়েছে আবার তাঁর সৌভাগ্য সৃষ্ট উদিত তার থেকে দরিদ্রও বঞ্চিত হয়নি। সর্বত্রই একটা সাম্য এবং শান্তির ভাব ছাড়িয়ে এবং লেখক একান্ত অন্তরঙ্গ ভাবে এরমধ্যে জড়িয়ে আছে।

রূপকথার রচনা কাল : সামাজিক ও পারিবারিক ছবি :

রূপকথার রচনাকাল আমাদের অজানা হ’লেও নিশ্চিতভাবে একটা কথা বলা যায় যে, আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপনের পর এই রূপকথার জন্ম।

সমস্ত রূপকথার আড়ালে আমাদের বাংলা দেশের সমাজ ও পরিবারের যে নিঁখুত চিত্র পাওয়া যায় তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে। যেমন—আমাদের সমাজের বহুবিবাহ, আমাদের ঘরের সপত্নী বিরোধ, সপত্নীর পুত্রের ওপর বিমাতা অত্যাচার, রূপসীর প্রণয়িনীর মোহ ও পরিশেষে সেই মোহ ভঙ্গ, আমাদের মধ্যে শঠতা ও বিশ্বাস ঘাতকতা ইত্যাদি পারিবারিক জীবনের ঘটনাগুলি রূপকথার মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। রাজপুত্র শ্বেতবসন্তের কাহিনি যখন বক্তা করুণ এবং অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বর্ণনা করেন তখন শুধু শিশু নয় বয়স্ক মানুষেরাও কান্না সম্বরণ করতে পারে না। এর অন্তর্নিহিত, গভীর করুণ রস, শব্দাড়ম্বর বর্জিত সাহিত্যের কথা হীন ভাষা ও ঘটনা আমাদের হৃদয়ের তলদেশ পর্যন্ত অলোড়িত করে তোলে। তাই রূপকথা বাস্তব জীবনের সমস্ত অসম্পূর্ণতা পূর্ণ করে তোলে, নিষ্ঠুর দৈবের বিচার উলটে দেয়, মানুষ ভাগ্যবিধাতা হলে কেমন করে সুখ ও শান্তির মধ্যে নিজের ভুলে ভরা জীবন নাট্যের ওপর শেষ যবনিকা পাত করত তার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।

মানবজীবনের ওপর রূপকথার প্রভাব :

যাঁরা কবি প্রতিভার অধিকারী তারা সর্ব প্রথম লেখনী ধারণের সময় রূপকথার আশ্রয় দেন। রূপকথার দিগন্ত বিস্তৃত তেপান্তরের মাঠ দিয়ে প্রথম কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে দেন এবং দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ সীমা ছাড়িয়ে অনাচার রাজ্যে প্রথম পা তুলতে শেখে। যেখানকার সুপ্ত সৌন্দর্য বোধ ও কবিত্ব শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। যে দেশে জীবনে বৈচিত্র্য ও বর্ণ সুষমার একান্ত অভাব, সেখানে শান্ত শিষ্ট জীবনযাত্রার মধ্যে কোনোরকম দুঃসাহসিকতা নেই, সেখানে রূপকথার মাধ্যমে কল্পলোকের পরিচয় মেলে এবং বিপুল সুদূরের ব্যাকুল বাঁশরী, বেজে ওঠে। অনেক ইংরেজ কবি রূপকথার প্রতি তাঁদের ঋণের কথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন। যেমন—ওয়ার্ডসওয়ার্থ তাঁহার আত্মজীবন কাহিনিতে লৌকিক গল্প কীরূপে তার কল্পনা শক্তিকে জাগ্রত করেছিল। কেমন করে তাঁর প্রাত্যহিক জীবনের তুচ্ছতা সংকীর্ণতা পেরিয়ে বিশাল রাজ্যে স্বচ্ছন্দ ভ্রমণের সুখ অনুভব করেছিল তার ঘটনা তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। বঙ্গ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথও তাঁর ‘শিশু’ নামক কাব্যে শিশু চিত্রের ওপর রূপকথার এই মায়াময় স্পর্শটি সজীব করে তুলেছিল।

তবে যাঁরা কবিত্ব সৌভাগ্যের অনধিকারী তাঁরা যে রূপকথার প্রভাব থেকে মুক্ত একথা ঠিক নয়। কারণ মানুষ যখন তাঁর দৈনন্দিন জীবনচর্চার মধ্যে মাঝে মধ্যে যখন সে দুঃখে কষ্টে শোকে, আশাহত ব্যঞ্জনায় মুহ্যমান, দীপের মতো অবস্থান করে তখন তো এই রূপ কথার অরূপ চিত্র স্মরণ করে ব্যথিত চিত্তমাঝে প্রশান্তি প্রলেপ ছড়িয়ে দিয়ে কল্পনার দুর্গে আশ্রয় নিয়ে আকাশ-কুসুম চয়ন করে এবং শূন্যে প্রাসাদ নির্মাণের উপকরণ সংগ্রহ করে।

উপসংহার : আমাদের জীবনে যা কিছু অপ্রাপ্য, দুর্বোধও রহস্যময়, এবং আমাদের প্রদীপ্ত আশাকে “পতংগবৎ বহ্নিমুখর বিবিক্ষুঃ” আকর্ষণ করে এই সমস্ত অন্তরের কল্পলোক রচনায় সাহায্য করে তার ভিত্তি স্থাপনের প্রশংসা রূপ কথারই প্রাপ্য রূপকথার যে মেঘখণ্ড শিশু মনে গোপন থাকে তা পরবর্তী জীবনে রহস্যের সৃষ্টি করে। শৈশবের প্রতি গভীর আকর্ষণ মানব মনের সনাতন শাশ্বত প্রবৃত্তি এবং এই প্রবৃত্তির বশে যখন আমরা অতীত শৈশবের প্রতি উৎস্যুক এবং ব্যাকুল ভাবে চেয়ে থাকি, তখন তার সমস্ত কার্য, কলাপ, উদ্বেগ, চাঞ্চল্য বিমুগ্ধতার মধ্যে সেই অতীতের রূপকথার মোহময় স্মৃতি আমাদের অন্তরে শুকতারার মতো সমুজ্জ্বল হয়ে থাকে, এবং আমাদের বৈচিত্র্য হীন প্রৌঢ়জীবনের ওপর তার মায়াময় ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশে একটা কথা স্বীকার না করে উপায় নেই—রূপকথার সৌন্দর্য তারই জন্যে, যে পৃথিবীর ছোটো বেষ্টনের মাঝে নিজের কল্পনা ও আশাকে বেঁধে রাখেনি।