প্রশ্নঃ রুশোর সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্য আলােচনা কর
অথবা, রুশাের সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট ব্যাখ্যা কর।

ভূমিকাঃ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে মতবাদ রয়েছে তার মধ্যে সামাজিক চুক্তি মতবাদ অন্যতম। রুশো তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Social Contract’ এ সামাজিক চুক্তি মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। রুশাে যদিও তার সামাজিক চুক্তি ও সম্পাদনে ইংরেজ দার্শনিক হবস ও লক উভয়ের দ্বারাই প্রভাবিত হন তথাপি সার্বিকভাবে তিনি তাদের কাউকে অনুসরণ করেনি। অন্যান্য তত্ত্বের ন্যায় এ ক্ষেত্রে তিনি তার স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হন।

রুশাের সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্যঃ রুশাের সামাজিক চুক্তি বিশ্লেষণ করলে কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। নিচে রুশাের সামাজিক চুক্তির বৈশিষ্ট্য আলােচনা করা হলাে-

(১) সার্বভৌমের সৃষ্টিঃ সামাজিক চুক্তির ফলে সার্বভৌমত্বের অংশহিসাবে ব্যক্তি জনগণের এবং রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে সার্বভৌমের সাথে যুক্ত। কাজেই সামাজিক চুক্তির ফলে সার্বভৌমত্বের জন্ম হয়।

(২) সাধারণ ইচ্ছা তত্তঃ সকলের প্রকৃত কল্যাণসাধন হতে পারে এমন ইচ্ছাকে রুশাে সাধারণ ইচ্ছা বলেছেন। সাধারণ ইচ্ছার উদ্দেশ্য একার ইচ্ছা বা কয়জনের ইচ্ছা নয়, সকলের কল্যাণ ও মঙ্গল।

(৩) সামাজিক জীবনব্যবস্থাঃ সামাজিক চুক্তির ফলে সামষ্টিক জীবনব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। যেমনঃ রুশো বলেছেন, চুক্তির ফলে যে সংস্থার আবির্ভাব ঘটেছে সেটা হবে জনগণের যৌথজীবনের সাথে একাত্মতা। জনগণও যৌথ সংস্থা থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না।

(৪) সাম্য ও স্বাধীনতার উদ্ভবঃ রুশাে বিশ্বাস করেন যে, চুক্তির ফলে যে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় তার মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক সাম্য ও স্বাধীনতা কোনাে চ্যালেঞ্জার সম্মুখীন হয় না, বরং এই রাষ্ট্রের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করতে সক্ষম হয় এবং প্রতিটি ব্যক্তি অন্য সকলের সঙ্গে সমবেত হওয়ার ফলে পূর্ববৎ স্বাধীনই থেকে যায়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, রুশাে সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে এমন একটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন যেখানে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি তার চুক্তির মাধ্যমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন এবং যে সমাজব্যবস্থার কথা বলেছেন সেটি ছিল বাস্তবসম্মত।