অথবা, প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে রুশোর ধারণা ব্যক্ত কর।
ভূমিকাঃ রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম এক মহান নায়ক Jea Jacques Rousseau ১৭১২ সালে জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃতির রাজ্য মতবাদটি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তিনি তার বিখ্যাত Social Contact গ্রন্থে প্রকৃতির রাজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। নিম্নে আমরা রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো-
প্রকৃতির রাজ্যঃ রুশোর মতে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল সুখ-স্বাধীনতা ও সমতার রাজ্য। এখানে মানুষের জীবন ছিল অনাবিল আনন্দে ভরপুর। তিনি Social contact গ্রন্থের শুরুতেই বলেছেন, মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু তাকে সর্বত্র শৃঙ্খলিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এখানে তিনি স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে বলতে যারা প্রকৃতির রাজ্যে জন্মগ্রহণ করে তাদের বুঝিয়েছেন, তথাকথিত সভ্যসমাজের মানুষকে নয়। সভ্যসমাজে তথা রাষ্ট্রে যাদের জন্ম তারা সত্যিকার স্বাধীনতা কি জিনিস তা কোনোদিন উপলব্ধি করতে পারে না। রুশো মনে করেন যে, শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের আবির্ভাব ও উৎকর্ষের ফলে মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতা বহু পূর্বেই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুঃখ-কষ্টের অবর্ণনীয় বেদনা। রুশোর মতে, মানুষের দাসত্ব সভ্যতারই সৃষ্টি। সভ্যতা তার অপরিহার্য ফল হিসেবে শিল্প, কলা ও বিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছে এবং কলা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনে শ্রম বিভাগ ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো এমন সব দুষ্টক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো প্রকৃতির রাজ্যের সমতা ও শান্তির ভিত্তিমূলে ফাটল ধরিয়ে দিয়েছে।
রুশোর প্রকৃতির রাজ্যের বৈশিষ্ট্যঃ রুশোর প্রকৃতির রাজ্যতত্ত্ব বিশ্লেষণ করলে নিম্নের বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়-
(১) রুশোর প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ ছিল মূলত আবেগপ্রবণ, যুক্তিপ্রবণ নয়।
(২) রুশোর প্রকৃতির রাজ্যে সুখ, স্বাধীনতা ও সমতা বিদ্যমান।
(৩) এখানে মানুষ রাজনৈতিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে পারত।
(৪) প্রকৃতির রাজ্য ছিল অনাবিল আনন্দে ভরপুর।
(৫) রুশোর প্রাকৃতিক রাজ্যের ধারণা একটি ঐতিহাসিক ধারণা।
(৬) রুশোর প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু জন্মের পরই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়।
(৭) রুশোর প্রকৃতির রাজ্য কোন মনস্তাত্ত্বিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রকৃতির রাজ্য ছিল সুখ-স্বাধীনতা ও সমতার রাজ্য। এখানে মানুষের জীবন ছিল অনাবিল আনন্দে ভরপুর। সুতরাং রুশোর প্রকৃতির রাজ্যতত্ত্ব পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে তা যে এক বিরাট সংযোজন এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
Leave a comment