প্রশ্নঃ রুশাের সার্বভৌমত্ব তত্ত্ব সম্পর্কে আলােচনা কর।

অথবা, রুশাের সার্বভৌমত্ব মতবাদটি আলােচনা কর।

ভূমিকাঃ Man is born free but every where he is in chains. এই মতবাদের প্রবক্তা ফরাসি বিপ্লবের মহান দার্শনিক, সাম্য মৈত্রী ও স্বাধীনতার প্রবক্তা জা জ্যাক রুশাে ১৭১২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে জনুগ্রহণ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হবসের চেয়ে সুনির্দিষ্ট এবং লক অপেক্ষা জনপ্রিয় রুশাে তার রাজনৈতিক দর্শনে নতুন গতিবেগ সৃষ্টি করেন।

সার্বভৌমত্ব কিঃ ইংরেজী Sovereignty শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলাে সার্বভৌমত্ব যা Latin শব্দ Superanus এবং Soverano থেকে এসেছে, যার অর্থ যথাক্রমে প্রধান ও চূড়ান্ত। সুতরাং উৎপত্তিগত দিক দিয়ে সার্বভােমত্ব হলাে বিশেষ বা চূড়ান্ত ক্ষমতা যা রাষ্ট্র কর্তৃক প্রয়ােগ করা হয়। অর্থাৎ যে ক্ষমতা বলে রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করে তাকেই সার্বভৌমত্ব বলা হয়।

রুশাের সার্বভৌম তত্ত্বঃ রুশাের মতে, সার্বভৌম ক্ষমতা কোন ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা সরকারের হাতে ন্যস্ত হতে পারে না। এই ক্ষমতা কেবলমাত্র জনগণের হাতেই ন্যস্ত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা হিসেবে দার্শনিক হবস, লক ও মন্টেস্কুর চরম ও উদারনৈতিক সার্বভৌমত্ব তত্ত্বগতভাবে প্রয়ােজনীয় এবং কার্যত বিপজ্জনক বলে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং এটি স্বাধীনতার শত্রু বলে পরিণত হয়। তা সত্ত্বেও রুশাে তার সার্বভৌমত্বের সংস্কারে চরমপন্থী মতবাদের সাথে উদারনৈতিক মতবাদের সমন্বয় সাধন করেন।

সার্বভৌমত্বের বৈশিষ্ট্যঃ রুশাের সার্বভৌম তত্ত্বের উপরােক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিন্মােক্ত বৈশিষ্ট্যগুলাে লক্ষ্য করা যায়। এগুলাে হলাে-

১. রুশাের সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত।

২. সার্বভৌম ক্ষমতা নিজে অন্য আইন দ্বারা সীমিত হতে পারে।

৩. সার্বভৌম ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সকল নাগরিক ও সংস্থার উপর চরম কর্তৃত্বের অধিকারী।

৪. বহিঃরাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে রুশোর সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও বাধাবন্ধনহীন।

৫. রুশাের সার্বভৌম ক্ষমতা অবিচ্ছেদ্য ও অবিভাজ্য।

৬. সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত। সরকার তার আজ্ঞাবহ এজেন্ট মাত্র।

৭. রুশাের সার্বভৌম তত্ত্বে নির্বাহী বিভাগ আইনবিভাগের অধীন।

৮. রুশাের সার্বভৌম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে।

৯. রুশাের সার্বভৌম তত্ত্ব অবিচ্ছেদ্য ও অবিনশ্বর।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনৈতিক চিন্তাধারায় রুশাের সার্বভৌমত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রুশাের সার্বভৌম ক্ষমতা কোন ব্যক্তি, সংস্থা কিংবা সরকারের হাতে ন্যস্ত নয়।