অথবা, রুশাের সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বটি বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকাঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্যতম ফরাসি দার্শনিক রুশাের রাজনৈতিক দর্শনে তার সাধারণ ইচ্ছা মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সাধারণ ইচ্ছাকে তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী করে একে এক বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
সাধারণ ইচ্ছাঃ সামাজিক চুক্তির ফলে যে রাষ্ট্রের জন্ম হয় তা নিছক অসম্পৃক্ত কতকগুলাে ব্যক্তির একটি সমষ্টি নয়। তা নিজেই একটি স্বতন্ত্র সত্তা এবং তার একটি স্বতন্দ্র ইচ্ছা বিদ্যমান। রাষ্ট্রের এই ইচ্ছা যখন যথার্থ জনকল্যাণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, তখনই তাকে ‘সাধারণ ইচ্ছা’ বলে অভিহিত করা হয়। রুশাে সাধারণ ইচ্ছাকে ব্যক্তির প্রকৃত ইচ্ছার যােগফল বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, একজন সাধারণ ব্যক্তির যথার্থ (Actual) এবং প্রকৃত (Real) এই দুই ধরনের ইচ্ছা রয়েছে। ব্যক্তির যথার্থ ইচ্ছা হচ্ছে তার যুক্তিবিবর্জিত ইচ্ছা এবং এটা ব্যক্তিস্বার্থের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এটা সমাজের কল্যাণসাধনে নিয়ােজিত না থেকে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষায় নিয়ােজিত থাকে। এছাড়া যথার্থ ইচ্ছা সংকীর্ণ, ক্ষণস্থায়ী এবং বিরােধপূর্ণ। অন্যদিকে প্রকৃত ইচ্ছা হচ্ছে ব্যক্তির যুক্তিযুক্ত ইচ্ছা এবং এটা সমাজের সাধারণ মঙ্গল ও কল্যাণসাধনে নিয়ােজিত থাকে। প্রকৃত ইচ্ছা ক্ষণস্থায়ী নয় এবং এটি সকল প্রকার ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সাধারণ ইচ্ছার উৎপত্তি ঘটে। এভাবে প্রথমত জনগণের যথার্থ ইচ্ছা তাদের ব্যক্তিগত ধারণার ওপর ভিত্তি করে আবির্ভূত হয়। কিন্তু তাদের স্বার্থসংশিষ্ট উপাদানসমূহ একটি অপরটিকে নাকচ করে দেয় এবং ফলে যথার্থ ইচ্ছাসমূহ পরস্পর ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে প্রকৃত ইচ্ছায় রূপান্তরিত হয়। আর সাধারণ ইচ্ছা এই সকল প্রকৃত ইচ্ছার সমষ্টি।
পরিশেষঃ রুশাের রাজনৈতিক চিন্তার মূলকথা হলাে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা ব্যক্তিস্বাধীনতা। তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়সাধন করেছেন। আর ‘সাধারণ ইচ্ছাই হচ্ছে সমন্বয়ের প্রকত হাতিয়ার। সুতরাং রুশাের ‘সাধারণ ইচ্ছা’ মতবাদ আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তাধারায় এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।
Leave a comment